ভুল পরিকল্পনা আর সুযোগ হাতছাড়ার মাশুল দিল বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৪১/৫ (নাঈম ৪৩, তামিম ৩৯, মাহমুদউল্লাহ ১৯*; শাহীন ১/২৩, শাদাব ১/২৬)
পাকিস্তান ১৯.৩ ওভারে ১৪২/৫ (মালিক ৫৮* , আহসান ৩৬; শফিউল ২/২৭)
ফলঃ পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী
নিরাপত্তা ছিল এই সিরিজের মূল কুশীলব। তবে মাঠে খেলা গড়াতে শেষ পর্যন্ত ক্রিকেটই আলোচনায়, তবে অন্তত ২২ গজে লাহোরের আজকের দিনটা মনে রাখতে চাইবে না বাংলাদেশ। আশা জাগিয়েও প্রথম টি-টোয়েন্টি হেরে গেছে বাংলাদেশ।
তাড়া করতে নেমে ম্যাচের লাগাম বেশির ভাগ সময় পাকিস্তানের হাতে ছিল। তারপরও শেষ দিকে অভাবনীয় কিছু হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। শোয়েব মালিক একটা সুযোগও দিয়েছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের সেরা ফিল্ডারদের একজন নাজমুল হোসেন শান্ত হাত ধরেও ক্যাচটা রাখতে পারেননি, বরং দিয়ে দিয়েছেন চার। শেষের আগের ওভারে শান্তর ক্যাচের আফসোস দারুণ বল করে আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন আল আমিন। মোস্তাফিজ কাগজে কলমে খরুচে হলেও উইকেট পাওয়ার সুযোগ তৈরি করেছিলেন বেশ কবার। ভাগ্য আর ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় সেটি পাওয়া হয়নি। এমনকি যখন ৪ বলে ২ রান দরকার, তখন রিজওয়ানের সহজ ক্যাচ ফেলে দিয়েছেন মোহাম্মদ মিঠুন। সরাসরি থ্রো করতে পারলে রান আউটের সুযোগও ছিল, কিন্তু সেটাও হয়নি।
তামিম আর নাঈম শুরুটা ভালো ছিল, কিন্তু স্ট্রাইক রেট বাড়ানোর আগেই আউট হয়ে গেছেন দুজন। পরের দিকে সেভাবে গতি বাড়াতে পারেননি কেউই। এই রানই এই উইকেটে লড়াই করার মতো ছিল। বাবর আজমকে প্রথম ওভারে ফিরিয়ে সেরকম আশাও জাগিয়েছিলেন শফিউল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা আর যথেষ্ট হয়নি।
টিম কম্বিনেশনেই গরমিল?
লাহোরের উইকেট যে এতোটা স্লথ হবে, সেটা বোধ হয় বুঝতে পারেনি বাংলাদেশ দল। মাত্র তিন জন স্পেশালিস্ট বোলার নিয়ে নেমেছিল বাংলাদেশ। আমিনুল ইসলাম বিপ্লব এখন স্পিনার হিসেবে খেললেও নতুন ভূমিকায় যাত্রা মাত্রা শুরু তার। বিপিএলে বোলার হিসেবে ভালো করা সৌম্য সরকারের ওপর একটু বেশিই বোধ হয় ভরসা করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ। সৌম্যর প্রথম ওভার ভালো না করায় একটু গরমিল হয়ে গেছে হিসেবে। মাহমুদউল্লাহ নিজেও অবশ্য বল করেননি, বরং আফিফকে দিয়ে করিয়েছেন একটি ওভার।
ডট বলই ব্যবধান
টি-টোয়েন্টি যে সবসময় ধুমধাড়াক্কার খেলা নয়, লাহোরের আজকের টি-টয়েন্টি সেটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। বাংলাদেশের ইনিংসে যেমন ছয় আছে তিনটি, আবার পাকিস্তানের ইনিংসে নেই একটিও। সেই ব্যবধান পাকিস্তান পুষিয়ে দিয়েছে ডট বল কম দিয়ে। বাংলাদেশের ইনিংসে ৪৫টি ডট বল দিয়েছেন পাকিস্তানি বোলাররা। সবচেয়ে বেশি ১১টি করে দিয়েছেন ইমাদ ওয়াসিম ও শাহীন শাহ আফ্রিদি। অথচ পাকিস্তানের ইনিংসে ডট ছিল মাত্র ৩৩টি। একটা সময় টানা ১৬ বল সিঙ্গেলস নিয়েছেন মালিক ও আহসান। ১৪১ রানের লক্ষ্যে কোনো বড় শট না খেলেই পৌঁছে গেছে পাকিস্তান।
ব্যাটিং অর্ডারে ভাবনা কই?
পাঁচজন ওপেনারকে গিয়ে পাকিস্তানে গিয়েছিল বাংলাদেশ। তামিম আর নাঈম ওপেন করলেন, কিন্তু পরিস্থিতির দাবিটা কি মেটাতে পারলেন? এরপর লিটন নামলেন। চারে উঠে এলেন মাহমুদউল্লাহ, পাঁচে আফিফ। অথচ পরিস্থিতি সৌম্যকে আগে দাবি করলেও তিনি চলে গেলেন ছয়ে। স্ট্রাইক রেটের দিক দিয়ে দুই ওপেনারকে দায় নিতে হলেও পরের দিকের ব্যাটসম্যানরাও কেউ হাত খুলে খেলতে পারেননি। লাহোরের মাঠে শুরুতে ব্যাট করে সর্বনিম স্কোরের রেকর্ডটা তাই নতুন করে লিখল বাংলাদেশ।
একজনের চার দশক, দুই জনের অভিষেক
পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আজ অভিষেক হয়েছে দুজনের, আহসান আলী ও বিগ ব্যাশে আলোড়ন তোলা হারিস রউফের। আজই আবার শোয়েব মালিকের হয়ে গেছে দারুণ একটা কীর্তি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চার দশক হয়ে গেছে পাকিস্তানের এই ক্রিকেটারের। ২০০০ সালের আগে অভিষেক হয়েছিল, এরপর খেলেছেন আরও তিন দশক। বাংলাদেশের আজকের একাদশে চার দশকের না থাকলেও তিন দশক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা আছে দুজনের- তামিম ইকবাল ও মাহমুদউল্লাহ।
হতাশ করল লাহোরের গ্যালারি
লাহোরের মাঠে টি-টোয়েন্টি, অথচ গ্যালারির অননেকটাই ফাঁকা। ‘ধন্যবাদ বাংলাদেশ আসার জন্য’ এরকম কিছু ব্যানার চোখে পড়েছে বটে, তবে স্টেডিয়ামে সেই র্থে গর্জন উঠল না। নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে গাদ্দাদি স্টেডিয়ামে ঢুকতে যথেষ্ট হ্যাপা পোহাতে হওয়ার কথা দর্শকদের। ওয়াসিম আকরামেরই আধ ঘন্টা লেগেছে বলে জানাচ্ছিলেন ধারাভাষ্যে। শুক্রবার পাকিস্তানের সরকারি ছুটি নয়। এত কিছু মাথায় নেওয়ার পরও গাদ্দাফির খা খা গ্যালারি একটু চোখে লাগার মতোই বৈকি। যদিও ম্যাচের পরের দিকে কিছুটা ভরেছিল গ্যালারি।