জোড়াতালি ব্যাটিং অর্ডার, ভুল পরিকল্পনা, নির্বিষ বোলিং- লাহোরে সর্ষেফুল দেখছে বাংলাদেশ
বাংলাদেশ ২০ ওভারে ১৩৬/৬ (তামিম ৬৫, আফিফ ২১; হাসনাইন ২/২০)
পাকিস্তান ১৬.৪ ওভারে ১৩৭/১ (বাবর ৬৬*, হাফিজ ৬৭*; শফিউল ১/২৭)
ফলঃ পাকিস্তান ৯ উইকেটে জয়ী
প্রথম টি-টোয়েন্টিতে তাও একটু লড়াই করেছিল বাংলাদেশ, পরেরটিতে তাও হলো না। এবার তিন বিভাগেই চূড়ান্ত ব্যর্থ মাহমুদউল্লাহরা, চার ওভার হাতে রেখেই তাই ম্যাচটা শেষ করে দিলেন বাবর-হাফিজ। তিন ম্যাচের সিরিজে জয়ও নিশ্চিত হয়ে গেল পাকিস্তানের, বাংলাদেশ যেন এখন পালিয়ে দেশে ফিরতে পারলে বাঁচে।
পরিকল্পনার অভাব
বাংলাদেশ দল পাকিস্তানে এসেছে আসলে কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই। কোচিং প্যানেল বা টিম ম্যানেজমেন্টের কোনো হোমওয়ার্ক নেই। একগাদা ওপেনার নিয়ে এসে বেশির ভাগ খেলছেন ভুল পজিশনে। স্লথ পিচ দেখে প্রথম দিন অবাক হয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ, তবে বোঝা গেল দ্বিতীয় দিনেও আলাদা করে কিছু ভাবেননি। কম রান নিয়ে ফিল্ড সেট আপ কেমন হওয়া প্রয়োজন, সেটা নিয়েও খুব একটা ভাবনা মাহমুদউল্লাহর ছিল না। আগের দিন তাও পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানরা একটু চাপে ছিলেন, আজ সেরকম কিছুই টের পাননি। টসে জিতে কেন আগের দিনের মতো বাংলাদেশ আজ ব্যাটিং নিয়েছেন, প্রশ্ন উঠবে সেটি নিয়েও।
দিশেহারা বোলিং
আগের দিন তাও একটু ক্যাচ ট্যাচের সুযোগ তৈরি করতে পেরেছিলেন বোলাররা, আজ বোলিংও হলো ছন্নছাড়া। মাহেদী হাসানের শুরুর ওভারের পর শফিউলের ওই উইকেট, এরপর থেকেই বাবর ও হাফিজ মিলে নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়েছেন নিজেদের হাতে। মোস্তাফিজ কাল একটু দুর্ভাগা ছিলেন, কিন্তু আজ ভুল জায়গায় বল করেছেন বেশি। আল আমিন ও শফিউল লাইন খুঁজে পাননি, দুই স্পিনার মাহেদী-বিপ্লবও ব্যর্থ কোনো ব্রেকথ্রু এনে দিতে।
তামিমের রান আউটের চক্কর
তামিম ইকবালের স্ট্রাইক রেট নিয়ে আজ অন্তত প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। দলের এক প্রান্তে যখন নিয়মিত উইকেট পড়তে শুরু করেছে, অন্য প্রান্তে তামিমের ওই সময় সেরকম খেলাই লাগত। শেষ দিকে বেশ কিছু চার মেরে স্ট্রাইক রেটের ক্ষতিটাও পুষিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু তামিমকে কাঠগড়ায় দাঁড় হতে হবে আসলে রান আউটের জন্য। আগের দিনও রান আউট হয়েছিলেন, তবে আজ যেভাবে আউট হয়েছেন সেটা ছিল দৃষ্টিকটু। ম্যাচের ওই সময় ডাইভ না দেওয়ার কারণে কিছুটা হলেও মাশুল দিতে হয়েছে দলকে। এ নিয়ে সর্বশেষ তিন টি-টোয়েন্টিতেই রান আউট হয়েছিলেন তামিম।
আবারও প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিং অর্ডার
আগের দিন সৌম্য নেমেছিলেন ছয় নম্বরে, ব্যাটিং সামর্থ্য কাজে লাগানোর কোনো সুযোগ পাননি। আজ নেমে গেলেন সাতে, যখন ম্যাচের বাকি মাত্র দুই ওভারের কিছু বেশি। মাহেদী হাসান দলে এসেই নেমে গেলেন তিনি, কিন্তু প্রতিটা শটেই বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন বিপিএলের সাথে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ব্যবধান। ব্যাটিং অর্ডারটা আজও ঠিকঠাক হলো না বাংলাদেশের।
উইকেট যখন প্রহেলিকা
প্রথম টি-টোয়েন্টির উইকেট নিয়ে শোয়েব আক্তার, ইনজামাম প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছিলেন। দুই দলের অধিনায়ক যদিও খোলাখুলি কিছু বলেননি। পরের ম্যাচে উইকেটে একটু ঘাস ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই মন্থর উইকেটই। বল ব্যাটে আসছিল না। পুরনো বলে ব্যাট করা যেন আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছিল। তবে কালকের চেয়ে কিছুটা হলেও ভালো ছিল আজ, পরে যেটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন বাবর ও হাফিজ।
যে ক্লাবে থাকতে চাননি নাঈম
শাহীন শাহ আফ্রিদির ডেলিভারিটা ছিল স্বপ্নের মতো, ক্রিকেটীয় ভাষায় বললে আনপ্লেয়বলের কাছাকাছি। নিখুঁত লাইন, লেংথের সঙ্গে ছিল শেষ মুহূর্তের সুইং। প্রথম বল হিসেবে নাঈম শেখের জন্য বেশি কঠিনই ছিল তা। গোল্ডেন ডাকেই ফিরতে হলো প্যাভিলিয়নে।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের ওপেনারদের গোল্ডেন ডাক এর আগেও ছিল। ২০০৭ সালেই দুইবার প্রথম বলেই আউট হয়েছিলেন নাজিম উদ্দিন। এরপর ২০১৩ সালে শাম সুর রহমানের সেই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। ২০১৮ সালে তামিম ইকবালেরও হয়েছে দুইবার। প্রথমবার দেরাদুনে, পরের বার ফ্লোরিডায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে শেষের ম্যাচে তামিমের সঙ্গে গোল্ডেন ডাকের অভিজ্ঞতা হয়েছে সৌম্য সরকারেরও। আর এবার হলো নাঈমের, পঞ্চম বাংলাদেশি ওপেনার হিসেবে এই অভিজ্ঞতা হলো।
আম্পায়ারিং যখন বিপক্ষে
অন্তত চারটি সিদ্ধান্ত শুধু বাংলাদেশের ইনিংসেই পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের। শুরুটা লিটন দাসের আউট দিয়ে। শাদাব খানের বলটা লেগ স্টাম্প চুমু খেয়ে যাওয়ায় রিভিউ নিয়েও লাভ হয়নি লিটনের, আম্পায়ারস কলে ফিরতে হয়েছে এলবিডব্লু হয়ে। তামিমেরও পরে লেগ স্টাম্পের বাইরে পিচ করার পরেও আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার, ভাগ্য ভালো তামিম রিভিউ নিয়েছিলেন। হাসনাইনের একটি পরিষ্কার ওয়াইড ও শাদাবের একটি নো বলের সিদ্ধান্তও পক্ষে যায়নি বাংলাদেশের।