মানসিকতা, রানের ক্ষুধা ও ধারাবাহিকতার অভাব- ব্যাটসম্যানদের যেসব সমস্যা দেখছেন ম্যাকেঞ্জি
প্রায় ২০০০ কিলোমিটারের ব্যবধান। লাহোরে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা যখন টি-টোয়েন্টিতে ধুঁকছেন, পর্যাপ্ত রান বোর্ডে তুলতে পারছেন না, ঢাকায় টেস্ট ব্যাটসম্যানদের নিয়ে কাজ করছেন তখন জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ নিল ম্যাকেঞ্জি। তবে হতাশা ছুঁয়ে যাচ্ছে তাকেও। স্কোয়াডে অনভিজ্ঞতা আছে মানছেন, কিন্তু ব্যাটসম্যানদের রানের ক্ষুধা ও ধারাবাহিকতার অভাব, তাদের অভিপ্রায়, তাদের মানসিকতা- ম্যাকেঞ্জিকে হতাশ করছে এসব। প্রচলিত ঘরানার বাইরে কেউ চিন্তা করছেন না বলেও মনে হচ্ছে তার।
তিনটি টি-টোয়েন্টি খেলতে এখন পাকিস্তানে বাংলাদেশ, এ সফরের দ্বিতীয় দফায় তারা খেলবে একটি টেস্ট। এ সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন ম্যাকেঞ্জি, তবে মিরপুরে কাজ করছেন টেস্টের জন্য। মুমিনুল হক, সাদমান ইসলাম, সাইফ হাসানরা তার সঙ্গে করছেন সেশন। তবে সেখানেও ফিরে এলো টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং। যেখানেই দুই ম্যাচে যথাক্রমে ১৪১ ও ১৩৬ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ম্যাকেঞ্জি বলছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই যেসব নিয়ে কাজ করেছেন, তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছেন না তিনি।
“স্কোয়াডে অনভিজ্ঞ আছে বেশ কয়েকজন। তবে সেখানে যাওয়ার আগে থেকেই আমরা জানতাম এটি। তবুও এটি হতাশার। আমার মনে হয় আগেরদিন আমরা ভাল একটা শুরুর পরও সুযোগ মিস করেছি। আমার জন্য ব্যাটসম্যানদের অভিপ্রায়টা হতাশার মনে হচ্ছে। গত বছর দুয়েক ধরে আমরা স্ট্রাইক বদল, বোলারকে চাপে ফেলা, ম্যাচের কোন পরিস্থিতিতে আপনি দাঁড়িয়ে, আপনি যেখানে চান বোলারকে সেখানে বল করতে বাধ্য করা- এসব নিয়ে কাজ করেছি। তবে শেষ টি-টোয়েন্টিগুলিতে আমি এসব দেখতে পাচ্ছি না”, বলছেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান।
স্কোয়াডের ব্যাটসম্যানদের অনেকেই টপ অর্ডারে খেলেন বলে তাদের মানসিকতায় সমস্যা হচ্ছে বলে ধারণা তার, “নতুন কোচ হিসেবে রাসেল (ডমিঙ্গো) বেশ কিছু কম্বিনেশন বাজিয়ে দেখছে। আমার মনে হয় খুব এক-দুই-তিনে খেলার মতো বেশিসংখ্যক ব্যাটসম্যান এখন আমাদের। স্কোয়াডের ক্রিকেটাররা মানসম্পন্ন, তবে সবাই টপ অর্ডারের।”
“চার-পাঁচ-ছয়ে খেলার জন্য তো আলাদা স্কিল প্রয়োজন। আপনি হয়তো শূন্যই পার হতে পারেননি, হুট করেই আপনাকে একজন ভাল স্পিনারের মুখোমুখি হতে হবে। এটার মানসিকতাই আলাদা। আপনাকে আপনার খেলাটা জানতে হবে, স্ট্রাইক বদল করতে হবে, এরপর বাউন্ডারি অপশনে যেতে হবে।”
তবে এসব কিছু হচ্ছে না ব্যাটসম্যানদের এমন অভিপ্রায় নেই বলে তাদের মাঝে ক্ষুধাটাও দেখতে পাচ্ছেন না ম্যাকেঞ্জি, “এই অভিপ্রায়টা- আরেকটু ক্ষুধার্ত হওয়া, এবং রাসেল সবার মাঝে যেটি আনতে চাচ্ছে, সেই ‘ভয় না পাওয়ার’ মানসিকতা নিয়ে খেলতে হবে। এটা সহজাত প্রবৃত্তি। কয়েকজন তরুণ আছে, কয়েকজন দলে ফিরছে। পারফর্ম করার জন্য তাদের ওপর অনেক চাপ, এটা বুঝতে পারি। তবে আশা করি সবাই বুঝতে পারছে, তাদের জন্য নির্বাচক, কোচদের সমর্থন আছে। তাদের শুধু গিয়ে খেলতে হবে।”
“দেখে মনে হচ্ছে, কেউই প্রচলিত ঘরানার বাইরে চিন্তা করতে পারছে না। আমাদের নাঈমের (শেখ) মতো কাউকে দরকার। সে ভারতে দারুণ একটি ইনিংস খেলেছি। আগেরদিন সে ভুগেছে, তবে চল্লিশের মতো করেছিল। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে আমাদের আরও ধারাবাহিকতা প্রয়োজন। অবশ্যই মেধাবি ক্রিকেটার আছে, তবে ধারাবাহিকতা লাগবে।”
ব্যাটসম্যানদের এ জন্য ‘স্বার্থপর’ হতেও বলছেন তিনি, “ম্যাচ জেতার জন্য আমি কাউকে স্বার্থপর হতে বলব। নিজের জন্য স্বার্থপর নয়, তবে বিলিয়ে না দেওয়ার জন্য স্বার্থপর। যদি আমি ৮০ করতে পারি, তাহলে কেন সেঞ্চুরি, ১৪০ বা ২০০ করতে পারব না?”
তবে, “ধারাবাহিকতার জন্য আরেকটু ক্ষুধা প্রয়োজন। অনেক সময়ই ছেলেরা পরের ম্যাচ খেলতে পেরেই খুশি হয়, যদি সে ৪০ বা ৬০ রান পেয়ে যায়। এটি ভুল মানসিকতা। আমি ছেলেদের বিশ্বের সেরা হতে বলব, অথবা বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান হতে বলব। আমরা তাদের মাঝে এই ব্যাপারটিই আনতে চেষ্টা করছি। আমরা উন্নতি করছি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপারগুলি একটু হতাশাজনক।”
হাজার দুয়েক কিলোমিটার দূরে ব্যাটসম্যানরাও ম্যাকেঞ্জির মতো করে ভাবছেন কিনা, বা ভাবতে পারছেন কিনা- প্রশ্ন সেটিই।