পাকিস্তানে দলের পরিকল্পনা আর ব্যাটিং অর্ডারে অবাক বিসিবি সভাপতি
পকিস্তান থেকে বাংলাদেস দল ঠিকমতো ফিরেছে বটে, তবে বিমানে নিজেদের সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে একরাশ হতাশা। পরাজয়ে লজ্জা হয়তো থাকে না, তবে দুইটি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ যেভাবে খেলেছে তাতে অশনী সংকেত আছে অনেককিছুই। আজ বেক্সিমকো কার্যালয়ে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বললেন, লাহোরে বাংলাদেশকে একদমই বাংলাদেশ মনে হয়নি তার। দলে পরিকল্পনার অভাব রয়েছে বলে মনে হয়েছে তার। কোচ আর টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও এসব নিয়ে বসবেন শিগগিরই।
দুইটি টি-টোয়েন্টিতেই বাংলাদেশ প্রায় একই ফর্মুলায় হেরেছে। টসে জিতে ব্যাটিং, এরপর মন্থর শুরু। ধুঁকতে ধুঁকতে কোনোমতে দেড়শর কাছাকাছি যাওয়া। প্রথম ম্যাচে সেই রান টপকাতে তাও একটু কষ্ট করতে হয়েছিল পাকিস্তানকে, পরের ম্যাচে সেটাও হয়নি। বিশেষ করে টস জেতার পর টানা দুই ম্যাচে ব্যাটিং নেওয়ায় অবাক বিসিবি সভাপতি, ‘প্রথম ম্যাচের পরেই আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ব্যাটিং নিলাম কেন। আমরা এত বছর পর পাকিস্তানে এলাম। একটা অপরিচিত কন্ডিশনে ব্যাটিং নিলাম কেন। আমরা চেজ ভালোই জানি। একটা টার্গেট থাকে। এখানে তো টার্গেট জানি না। ওরা বলছিল ব্যাটিং পিচ সেজন্য। কিন্তু দেখে মনে হয়নি ভাল পিচ। খুব ভাল পিচই যদি হত সেটার সঙ্গে খেলার ধরন মেলেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে জিজ্ঞেস করলাম টার্গেট কি, আরও বলল ১৫০। আমি বললাম ১৬০ এর নিচে টি-টোয়েন্টিতে কোন স্কোরই হয় না। যে কার কাছে হেরে যাওয়ার কথা। ১৮০ করে মিনিমাম এখনো ধরে। দুইশো করেও মানুষ জিততে পারে না। আমাদের টার্গেট এত লো কেন। ’
প্রশ্ন তুলেছেন ব্যাটিং অর্ডার নিয়েও। ওপেনারভর্তি করে লাহোরে গেছে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে লিটনকে তিনে না দেখে অবাক নাজমুল হাসান, ‘তামিম যখন ছিল না ইন্ডিয়ায় আমরা ওপেন করিয়েছি লিটন দাস আর নাঈমকে। আমাদের দুজন ওপেনার এখানে আছে। আবার সৌম্য আছে যে নাকি ওপেন করত। মানে প্রথম তিনজনের মধ্যে। সেকেন্ড ম্যাচে যখন নাঈম আউট হয়ে গেল তখন লিটনকে না নামিয়ে, সৌম্যকে না নামিয়ে হঠাৎ করে মেহেদী, যার সাথে খেলার কথা আমার হিসাবে ছয়ে। এটা প্রশ্নতা করেছিলাম। আমার মনে হয় এক্সপেরিমেন্ট না কি আমি জানি না। আমার মনে হয়নি এটা লজিক্যাল। মানে লিটন, তামিম, নাঈমের মধ্যে দুজন ওপেন করবে একজন তিনে খেলবে।’
মাহমুদউল্লাহকে আরও ওপরে ব্যাট করতে না দেখেও অবাক হয়েছেন বিসিবি সভাপতি, ‘ইনফ্যাক্ট চারে যেহেতু মুশফিক নাই, রিয়াদ আসতে পারে। কারণ রিয়াদের খুব শখ উপরে খেলার। কিন্তু এই সিরিজে গিয়ে রিয়াদ পারলে দেখি একেবারে শেষে নামে। আমি এই জিনিসগুলাই জিজ্ঞেস করেছিলাম ব্যাপার কি। সব আপনাদের বলা যাবে না। কোচের সাথেও বসতে হবে। একটা জিনিস স্পষ্ট ১৩০-৪০ করে কারো সাথেই জেতা সম্ভব না। এটা আমার মনে হয় সামথিং ভেরি সিরিয়াস ইস্যু। ’
কিন্তু দলের মধ্যে পরিকল্পনাহীনতার এই দায় কার? বিসিবি সভাপতি আগে জানতে চান সিদ্ধান্তগুলো কে নিচ্ছেন, ‘কোচর সাথে কথা বলতে হবে। প্লেয়াররা কোচের কথা কিছু বলেনি। কে ডিসিশনগুলো দিচ্ছে, তা জানতে হবে। কোচের সাথে কথা বলতে হবে। টার্গেটটা কম হয়েছিলো। প্লেয়ারদের হয়তো অতিআত্মবিশ্বাস ছিলো। এটা কখনোই উচিত না। আজকের খেলা দেখেন- নিউজিল্যান্ড ও ইন্ডিয়া। লাস্ট চার বলে তিন রান নিতে পারেনি, অথচ সুপার ওভারে ২০ রান নিয়ে। টি-টোয়েন্টিতে এতো কম রান করে জেতা যায়।’
সাকিব আর মুশফিকের না থাকাকেও দুষছেন বিসিবি সভাপতি, ‘এখনো আমরা কয়েকটি বিষয়ে স্ট্রাগল করছি। যেমন ধরেন- ইন্ডিয়া সিরিজের ঠিক আগে, তিনদিন আগে শুনলাম সাকিব খেলতে পারবে না। এটা বড় ধাক্কা। ইন্ডিয়ার মতো দেশের সাথে সিরিজের আগে, ওই সময় সাকিবের রিপ্লেসমেন্ট পাওয়া কঠিন। ওর কোনো রিপ্লেসমেন্ট আমাদের নাই। তামিম গেলো না, এটা বড় ধাক্কা। ওপেনিংয়ে নতুন কাউকে খোঁজা দরকার ছিলো। আমরা নাঈমকে নামালাম। এবার তামিম ফেরত এলো। এবার মুশফিক বললো ও যাবে না। এখন চার নিয়ে সমস্যা হলো। আগে থেকে বললে আমরা সমাধান করতে পারি। কিন্তু হঠাৎ করে তো হয় না। এখন সামনের টেস্টে নতুন কাউকে নিলাম। একটা টেস্টের জন্য। একটা টেস্টে খেলানো যায়? অন্তত তিনটা ম্যাচ তো খেলানো দরকার। এরপর জিম্বাবুয়ের সাথে মুশফিক খেলবে। কিন্তু তারপর আবার পাকিস্তানে টেস্ট। তখন আবার চেঞ্জ। প্রতি খেলার আগে পরিবর্তন করা খুব কঠিন।’
আপাতত এরকম আরও কঠিন অনেক কিছু সামলাতে হচ্ছে বিসিবি সভাপতিকে।