এবার উদোর 'পিন্ডি' ব্যাটসম্যানদের ঘাড়েই
বাংলাদেশের টেস্ট ব্যাটিং যেন গরু রচনার মতো হয়ে গেছে। কন্ডিশন যেমনই হোক, যে ব্যাটসম্যানই আসুক, ঘুরে ফিরে সেই একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের প্রথম দিন শেষেও সেই পুরনো প্রশ্নটা চলে আসবে, আদৌ কি টেস্ট খেলার মানসিকতা আছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের?
একদিক থেকে দেখলে ২৩৩ রানটা বাংলাদেশের জন্য অনেক মনে হতে পারে। ভারতের সঙ্গে আগের দুই টেস্টে যেভাবে ব্যাটসম্যানরা ভুগেছে, তাতে পুরো একটা দিন পার করে দেওয়া কাগজে কলমে হয়তো একটু হলেও উন্নতি। কিন্তু আজকের কন্ডিশন যখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, উইকেটেও এমন জুজু ছিল না, সবচেয়ে বড় কথা ব্যাটসম্যানরা দিন শেষে যখন উইকেটই দিয়ে এসেছে- এই রান নিয়ে ম্যাচ বাঁচানো কঠিন বললেও কম বলা হয়।
টেস্ট ম্যাচে সকালের প্রথম ঘন্টা একটু দেখেশুনে খেলারই দরকার হয়। বাংলাদেশের আজকের অভিষিক্ত ওপেনার সাইফ হাসান অবশ্য সেই সুযোগ পেলেন না, এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থেকে ক্যাচ দিয়ে এলেন কোনো রান না করে। সাইফের না হয় অভিষেক, তামিমের ক্ষেত্রে সেই অজুহাতও চলে না। কদিন আগেই বিসিএলে ট্রিপল সেঞ্চুরি পেয়েছেন, আজ আব্বাসের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে পুরনো দুর্বলতা আবার নতুন করে জানান দিয়ে আউট হয়েছেন ৩ রান করে।
এই দুই উইকেট তাও বোলারদের কিছুটা অবদান ছিল। এরপরের আউটগুলোর জন্য ব্যাটসম্যানরা নিজেদেরই শুধু দায়ী করতে পারেন। মুমিনুল হক ভালো শুরু পেয়েছিলেন, মনে হচ্ছিল দেশের বাইরের টেস্ট ব্যর্থতা আজ ঘুঁচবে। কিন্তু যেই কে সেই। ত্রিশের ঘরে গিয়ে স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করে ক্যাচ দিয়ে এলেন। শান্তর জন্য আজকের ইনিংসটা ছিল দলে জায়গা থিতু করার সুযোগ। কিন্তু চল্লিশ পার করার পর ধৈর্যের সঙ্গে সঙ্গে সেই সুযোগও হারালেন। এবারও অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কাট করতে গিয়ে ক্যাচ।
শান্ত টেস্ট ক্রিকেট না হয় নতুন, কিন্তু মাহমুদউল্লাহ? এতগুলো বছর কাটানোর পরও টেস্টে এখনও নির্ভরযোগ্য নন। আজ ২৫ রান করার পর অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে যেভাবে আউট হলেন, তার টেস্ট দলে জায়গা নিয়ে প্রশ্নটা তুলে দিচ্ছে নতুন করে। লিটন দাসের ব্যাটিং মানেই আশা জাগানিয়া দারুণ একটা শুরুর পর জঘন্য একটা শটে উইকেট দিয়ে আসা। আজও ত্রিশ পার করার পর পার্ট টাইমার হারিস সোহেলের একটা সাধারণ ডেলিভারি মিস করে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন।
এমন নয়, সারাদিন পাকিস্তানি বোলাররা খুব অসাধারণ বল করেছেন। শাহীন আফ্রিদি আর আব্বাস ছাড়া বাকিরাও খুব ধারাবাহিক ছিলেন না, ইয়াসিরও তেমন টার্ন পাননি। তাইজুল আর মিঠুন যতক্ষণ ব্যাট করছিলেন, উইকেটে এমন কোনো জুজু ছিল বলেও মনে হচ্ছিল না। কিন্তু ভালো ব্যাট করতে করতেই তাইজুলের মাথায় যেন ভূত চেপে বসল। নইলে হারিস সোহেলের বলে ওরকম উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়ে নিজের জন্মদিনটাই তো তেতো করে ফেলেছেন! মিঠুন শুরুতে জীবন পেয়ে পরে সেটি পুষিয়ে দিচ্ছিলেন, নাসিম শাহের বলটাতে আউট হওয়ার জন্য অন্তত উইকেট দিয়ে আসার অপবাদ তাকে নিতে হবে না। তবে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রাহী যেমন হাস্যকরভাবে রান আউট হলেন, তাতে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের টেস্ট ব্যাটিং নিয়ে আদৌ কোনো কাজ হয় কি না সেই প্রশ্নও উঠে যায়।
তারপরও বোলাররা ভালো করতে পারলে ২৩৩ রান নিয়ে কিছুটা লড়াই করা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের অনভিজ্ঞ পেস অ্যাটাকের বিপক্ষে পিন্ডির উইকেটে পাকিস্তান রানের পাহাড় না চাপালে সেটাই বরং অবাক করার হতে পারে।