'একটি ভাল দিন' এখনও খুঁজে ফিরছে বাংলাদেশ
২য় দিন, স্টাম্পস
বাংলাদেশ ২৩৩ অল-আউট (মিঠুন ৬৩, শান্ত ৪৪, আফ্রিদি ৪/৫৩, আব্বাস ২/১৯)
পাকিস্তান ৩৪২/৩* (বাবর ১৪৩*, মাসুদ ১০০, রাহি ২/৬৬, তাইজুল ১/১১১)
পাকিস্তান ১ম ইনিংসে ১০৯ রানে এগিয়ে
শেষ কবে টেস্টে ‘ভাল একটা দিন' কাটিয়েছে বাংলাদেশ?
ভারতের বিপক্ষে নয়, আফগানিস্তানের বিপক্ষেও নয়। হয়তো নিউজিল্যান্ড সিরিজে গেলে সেশন পাওয়া যাবে, তবে পুরো একটা দিন? যে দিন টেস্টের প্রেক্ষাপটে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ? রাওয়ালপিন্ডির দ্বিতীয় দিনটাও বাংলাদেশের জন্য হতাশার, হতাশার টানেলটা যেখানে আরেকটু দীর্ঘায়িত হয়েছে এদিন, টানেলের ওপাশের ‘ভাল দিন’-এর আলোটা সরে গেছে আরেকটু দূর।
অথচ দিনটা ভাল হলেও হতে পারতো বাংলাদেশের। ইনিংসের ৯ম বলে আবিদ আলির উইকেটের পর আজহার আলি-শান মাসুদের জুটি বাংলাদেশকে সেইসব পুরোনো দিনের স্মৃতি ফিরিয়ে দিচ্ছিল, আবিদকে ফেরানো আবু জায়েদ রাহি এসেই আবার দিলেন ব্রেকথ্রু। লাঞ্চের আগে ১৪ বলে কোনও রান করতে পারেননি বাবর আজম, শুরুতে তাকে নড়বড়েই মনে হচ্ছিল। বিরতির পর তৃতীয় ওভারের ৪র্থ বলে চাপ কমানোর চেষ্টায় ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে এলেন বাবর, উঠলো ক্যাচ। মিড-অফে দাঁড়ানো এবাদত পেছন দিকে ছুটলেন, তবে তার দৌড়ে কেন জানি আত্মবিশ্বাস ছিল না। তিনি যেন হয়ে উঠলেন সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের টেস্টের প্রতিক, যারা আত্মবিশ্বাসের তলানীতে। এবাদত বলের নাগাল পেলেন ঠিকই, তবে হাতে জমানোর মতো মানসিকতা ছিল না তার। বাবর জীবন পেলেন, তখন তার রান ৩।
দিনশেষে বাবর অপরাজিত ১৪৩ রানে, এবাদতের সেই মুহুর্তের ভুলের মাশুল এখন পর্যন্ত ১৪০। এরপর দিনটা ভাল হবে কীভাবে?
সে জীবন পাওয়ার পর থেকেই খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন বাবর, ফিফটিতে গেছেন ৭৯ বলে, এরপরের পঞ্চাশ করতে লেগেছে মাত্র ৫৫ বল। বাবরের ক্যারিয়ারেরই যেন প্রতিচ্ছবি এই ইনিংস। প্রথম ২১ টেস্টে ১ সেঞ্চুরি করা বাবর এরপরের ৬ টেস্টে করলেন ৪ সেঞ্চুরি, এর মাঝে এটি তার টানা তৃতীয়। অফসাইডে থার্ডম্যান থেকে কাভারের মাঝে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত, আর লেগসাইডে ইনফ্রন্ট অফ স্কয়ারে ছিলেন দাপুটে।
বাবরের মতো আরেক সেঞ্চুরিয়ান মাসুদকেও জীবন দিয়েছিল বাংলাদেশ, অবশ্য তার ক্ষেত্রে দন্ডটা খাতা-কলমে খুব বেশি হয়নি। রুবেল হোসেনের বলে ‘এজড’ হয়েছিলেন তিনি, অন্তত রিপ্লে ও আল্ট্রা-এজ দেখিয়েছে সেটি। তবে বোলার বা উইকেটকিপার লিটন দাস সেটি বুঝতেই পারেননি। মাসুদ এরপর করেছেন আর ১৪ রান। তবে মাসুদের উইকেট সে সময় মোমেন্টাম কোন দিকে নিয়ে যেত, সে প্রশ্ন করার অধিকার অবশ্যই আছে আপনার।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ খুঁজে ফিরেছে মোমেন্টাম, টেস্টে এসে হেলায় হারিয়ে ফেলেছে সেটি। রাওয়ালপিন্ডিতে অন্তত গতকালের চেয়ে আজ ব্যাটিং কন্ডিশন ভাল ছিল তুলনামূলকভাবে, তবে প্রথমে আবু জায়েদ ও পরে তাইজুল ইসলাম চেষ্টা করেছেন আঁটসাঁট বোলিংয়ের। তবে এবাদত ও রুবেলের বোলিং তাদের সে চেষ্টাকে সমর্থন দিতে পারেননি। তিন পেসার নিয়ে নামা বাংলাদেশের দুজনই খুঁজে ফিরেছেন, আদতে কীভাবে বোলিং করবেন তারা। ফল- দুজন মিলে ওভারপ্রতি দিয়েছেন ৫ করে রান, ৩১.৫ ওভার বোলিং করে।
তাদের এমন অবস্থার কারণেই কিনা, নতুন বল পাওয়ার সময় হয়ে গেলেও মুমিনুল সেটি নিলেন প্রায় ৪ ওভার পর, এর পরপরই বোলিংয়ে আনলেন তাইজুলকে। শুরুটা হাফ-ট্র্যাকার দিলেন তাইজুল, নতুন বলের সমান বাউন্স আর দৃঢ়তা কাজে লাগিয়ে বাবর মারলেন ছয়। বাবর তার ব্যাটিংয়ে বার্তা দিলেন পরিষ্কার- ভুল করলে তার মাশুল গুণতেই হবে।
বাংলাদেশের পুরো বিপরীত অবস্থা অবশ্যই পাকিস্তানের। আবিদ আর পরে অধিনায়ক আজহার আলি শট খেলতে গিয়ে উইকেট হারিয়েছেন, বাকিরা কাজে লাগিয়েছেন তাদের পাওয়া সুযোগ। শুরুতে বেশ আক্রমণাত্মক ছিলেন মাসুদ, লাঞ্চের আগে ফিফটিতে গিয়েছিলেন মাত্র ৫৪ বলে। বড় ইনিংসের সুযোগ যখন দেখেছেন, এরপর থেকে থেকেছেন সতর্ক। সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে ১৫৭ বল লেগেছে এই বাঁহাতির, ক্যারিয়ারে এটি তৃতীয় সেঞ্চুরি তার।
সেঞ্চুরির পরপরই অবশ্য তাইজুলের বল বুঝতে না পেরে হয়েছে বোল্ড। এরপর আসাদ শফিক এসেছেন, বাংলাদেশের দুর্দশা বলতে গেলে আরও বেড়েছে। শেষ সেশনে পাকিস্তান রান তুলেছে ৪.১৪ হারে। সব মিলিয়ে ইনিংসে তাদের রানরেট ৩.৮৯।
তবে রানরেটটিও ঠিক কি বুঝাতে পারছে বাংলাদেশের হতাশা? রাওয়ালপিন্ডির দ্বিতীয় দিনেও সেই ভাল দিন খুঁজে ফিরেছে বাংলাদেশ, যেটি মনে হচ্ছে এখন বহুদূর।