নাঈমের ৮ উইকেটের দিনে নিজেকে 'প্রমাণ' করলেন মুশফিক
১ম দিন, স্টাম্পস
নর্থ জোন ১ম ইনিংস ২৭২ অল-আউট (মুশফিক ১৪০, নাঈম ৮/১০৭)
ইস্ট জোন ১ম ইনিংস ৩/২* (সানজামুল ১/২, সনজিত ১/০)
ইস্ট জোন ২৬৯ রানে পিছিয়ে
বাংলাদেশে এখন স্পিনের বিপক্ষে সেরা ব্যাটসম্যান কে? এ প্রশ্নের জবাবে মুশফিকুর রহিমের নামটা থাকার কথা ওপরের দিকেই। কেন তিনি ওপরের দিকে থাকবেন, কক্সবাজারে আরেকবার সেটি দেখালেন। যে ইনিংসে অফস্পিনার নাঈম হাসান নিলেন ৮ উইকেট, সেখানেই নাঈমসহ বাকিদের ওপর ছড়ি ঘুরিয়ে মুশফিক খেললেন এক মাস্টারক্লাস, ১৫৭ বলে ১৬ চার ও ১ ছয়ে করলেন ১৪০ রান।
পাকিস্তান সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার পর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলে ফিরতে মুশফিককে ঘরোয়া ক্রিকেটে ‘প্রমাণ’ করে ফিরতে হবে- আলোচনা উঠেছিল এমন। বিসিএলের আগের রাউন্ডে খেললেও দুই ইনিংসে করেছিলেন ২ ও ৩৮ রান। তাতে হয়তো ‘আলাদা করে নিজেকে প্রমাণ করা' হয়নি তার, তবে এ ইনিংসে করলেন সেটি। নর্থ জোনের ২৭২ রানের ৫১.৪৭ শতাংশ রান করলেন তিনি একাই।
আর রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে সুযোগ না পাওয়া নাঈম আরেকবার উইকেটের বাঁধ ভাঙলেন যেন। বিসিএলে এর আগে এক রাউন্ডে ম্যাচে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট, তামিম ইকবালের ট্রিপল সেঞ্চুরির সে ম্যাচে। এবার ইনিংসেই নিলেন ৮টি, ৩ ইনিংসে ১৬ উইকেট নিয়ে এবার বিসিএলের সর্বোচ্চ উইকেট এখন তারই।
মুশফিক-নাঈমের ব্যক্তিগত অর্জনের ভীড়ে নর্থ জোন ও সাউথ জোনের ম্যাচটা প্রথম দিনশেষে অবশ্য বলতে গেলে সমান-সমানই। নর্থকে ২৭২ রানে আটকে দিলেও দিনশেষে স্বস্তিতে নেই ইস্ট জোন, ৩ রান তুলতেই তারা হারিয়ে ফেলেছে দুই ওপেনার পিনাক ঘোষ ও মোহাম্মদ আশরাফুলকে।
টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া নর্থ জোনের দুই ওপেনার জুনাইদ সিদ্দিক ও রনি তালুকদার বেশ কিছুক্ষণ আটকে রেখেছিলেন ইস্ট জোনকে ব্রেকথ্রু পাওয়া থেকে। কক্সবাজারের উইকেট সবুজাভই, তবে ইস্ট জোন সেখানে নেমেছে একজন মাত্র স্বীকৃত পেসার হাসান মাহমুদকে নিয়ে। প্রথম ব্রেকথ্রু অবশ্য তাদেরকে এনে দিয়েছেন নাঈম হাসানই।
ফরোয়ার্ড ডিফেন্সিভ শটে স্লিপে ক্যাচ তুলেছেন জুনাইদ সিদ্দিক, নাঈমের পরের ওভারে তেঁড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন রনি তালুকদার। এক ওভার পর আবার আঘাত করেছেন নাঈম, অফস্টাম্প লাইনের বলটা সামনে পা বাড়িয়ে খেলতে গিয়ে এজড হয়েছেন আগের ম্যাচে সেঞ্চুরিয়ান তানভীর হায়দারও। ৩৬ রানে বিনা উইকেট থেকে হুট করেই ৪৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছেন নর্থ জোন।
মুশফিক অবশ্য নামার পর চাপ-টাপ গায়ে মাখেননি তেমন একটা, নাঈমের পরের ওভারে চার মেরেই শুরু করেছেন সুইপ করে। পুরো ইনিংসেই এই সুইপের আধিপত্য ছিল মুশফিকের, সঙ্গে বারদুয়েক করেছেন রিভার্স সুইপও। নাঈম একপ্রান্তে উইকেট নিয়ে গেছেন, তবে মুশফিকের সামনে আসলেই ভেস্তে গেছে তার অস্ত্র। নাঈমের সঙ্গে আর দুই স্পিনার সাকলাইন সজীব ও রাহাতুল ফেরদৌসের ওপরও চড়াও হয়েছেন তিনি।
তার সঙ্গে ৫৬ রানের জুটির পর নাঈমের বলে অদ্ভুতভাবে আউট হয়ে ফিরেছেন নাইম ইসলাম। ফ্লিক করতে গিয়ে বটম-এজড হয়েছিলেন, ক্যাচ গিয়ে আটকেছে উইকেটকিপার জাকির হাসানের দুই হাঁটুর ফাঁকে! এরপর আরিফুল হক অবশ্য বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি মুশফিককে, হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হয়ে তিনি ফিরেছেন ৯ বল খেলেই।
চা-বিরতির আগে মাহিদুল ইসলাম অঙ্কনকে নিয়ে আরেকটি ফিফটি জুটি গড়েছেন মুশফিক, এ সময় ৭১ বলে ফিফটিও হয়ে গেছে তার। চা-বিরতি ও জুমার নামাজের আরেকটি বিরতির পর এ জুটি ভেঙেছেন নাঈমই, তাকে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে খেলার চেষ্টায় ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন অঙ্কন। এ উইকেট দিয়েই পাঁচ পূর্ণ হয়েছে নাঈমের, ক্যারিয়ারে ৩৯তম ইনিংসে ৬ষ্ঠ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিলেন।
মুশফিক সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন হাসান মাহমুদউকে পুল করে ছয় মেরে, ১১৭ বলে। এর আগে দুই চারে নব্বইয়ে ঘরে ফাস্ট-ফরোয়ার্ড মুডে এগিয়েছিলেন তিনি। চোট কাটিয়ে ফেরা সাইফউদ্দিন ব্যাটিংয়ে ১৯ বল ধরে রান না করে টিকে ছিলেন, ২০তম বলে গিয়ে নাঈমের শিকার হয়েছেন তিনি টার্ন করা বলটায় খোঁচা দিয়ে। মুশফিকের সঙ্গে তার জুটিতে অবশ্য উঠেছিল ২১ রান।
সানজামুল এরপর ভালই সঙ্গ দিয়েছেন মুশফিককে, ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে তার নাঈমের বলে স্টাম্পড হয়ে, এর আগে নিজে করেছেন ২৯, মুশফিকের সঙ্গে তার জুটি ছিল ৫৮ রানের। সালাউদ্দিন শাকিলকে বোল্ড করে ইনিংস শেষ করেছেন নাঈম, ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ৮ উইকেট নিয়ে। এর আগেই হাসান মাহমুদের শিকার হয়েছেন মুশফিক, স্টাম্পে বল ডেকে এনে।
স্পিন দিয়ে এরপর ইনিংস শুরু করা নর্থ জোনকে প্রথম সাফল্য এনে দিয়েছেন এ ম্যাচেই প্রথমবার খেলতে নামা অফস্পিনার সনজিত সাহা। হোল্ড করা বলটা পিনাকের ব্যাট-প্যাড হয়ে গেছে উইকেটকিপারের কাছে। পরের ওভারের প্রথম বলে আগবাড়িয়ে ড্রাইভ করতে গিয়ে শর্ট এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ দিয়েছেন আশরাফুলও, সানজামুলের বলে।