• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    ম্যান সিটির নিষেধাজ্ঞা : যে প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন আপনি

    ম্যান সিটির নিষেধাজ্ঞা : যে প্রশ্নের জবাব খুঁজছেন আপনি    

    আগামী দুই মৌসুম ইউয়েফার কোনো ক্লাব প্রতিযোগিতাগুলোয় অংশ নিতে পারবে না ম্যানচেস্টার সিটি। সঙ্গে ৩০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানাও করা হয়েছে তাদের।  ক্লাবগুলোর অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা এবং দলবদলের বাজারে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বন্ধে ইউয়েফার ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে (এফএফপি) নীতি লঙ্ঘন করার ফলে এই শাস্তি পেয়েছে ক্লাবটি। শাস্তি ঘোষণার পরপরই ক্লাব কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে ইউয়েফার সিদ্ধান্তের কড়া ভাষায় নিন্দা করেছে এবং এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ক্রীড়া সম্পর্কিত সমস্যা নিরসনের জন্য গঠিত “কোর্ট অফ আরবিট্রেশন ফর স্পোর্টে” (সিএএস) ইউয়েফার সিদ্ধান্তটির বিরুদ্ধে আপিল করবে বলে জানিয়েছে ক্লাবটি। অবশ্য এফএফপি নীতি লঙ্ঘনের জন্য সিটির উপর শাস্তি নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালেও এই আইন ভঙ্গের দায়ে সিটিকে বড় অংকের জরিমানা করেছিল ইউয়েফা।

     

    কিন্তু কেন সিটির উপর এই শাস্তির খড়গ নেমে আসল?

    খেলোয়াড় কেনা-বেচার ক্ষেত্রে একটি ক্লাব ঠিক কী পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে পারবে, সে বিষয়ে ইউয়েফার নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। ২০১১ সালে ক্লাবগুলোর অর্থব্যয়কে একটি কাঠামোগত প্রক্রিয়ার মধ্যে আনতেই ইউয়েফা এফএফপি নামের এই নীতি প্রণয়ন করে। কিন্তু ম্যানচেস্টার সিটি ইউয়েফার এই নীতিকে ফাঁকি দিয়ে অর্থ আদান-প্রদানের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। মূলত স্পনসরদের থেকে পাওয়া আয়ের পরিমাণ বাড়িয়ে দেখানো, তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে লেনদেন করার মাধ্যমে সিটি এই নীতিটিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে আসছিল এতদিন- ইউয়েফার তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে। এছাড়াও ইউয়েফার কাছে সিটির সরবরাহ করা আয়-ব্যয়ের তথ্যের মাঝে পরিষ্কার অসংগতি রয়েছে বলেও উল্লেখ করেছে ইউয়েফা। 

    ২০১৮ সালে ফুটবল লিকস নামের এক প্রতিষ্ঠান সিটির এফএফপি লঙ্ঘন নিয়ে অনেক গোপন ইমেইল জার্মান ম্যাগাজিন “দের স্পিগেল”-র কাছে সরবরাহ করে। আর সেই ইমেইল গুলো প্রকাশ হওয়ার পর থেকেই মূলত সিটির উপর বড় শাস্তি নেমে আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে সিটি তখনই জানিয়েছিল যে, তাঁদের বেশ কিছু ইমেইল হ্যাক করা হয়েছে এবং তাদের আশংকা ইউয়েফার চলমান এফএফপি নীতি লঙ্ঘনের তদন্তে অপ্রাসঙ্গিকভাবে সেই ইমেইলগুলোকে ব্যবহার করা হতে পারে।

     

    এখন সিটি কী করবে?
    শুরুতেই বলে রাখা দরকার চলতি মৌসুমে সিটির চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। অর্থাৎ রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে দ্বিতীয় রাউন্ডের ম্যাচে ম্যান সিটি খেলতে নামছে এই সপ্তাহেই। নিষেধাজ্ঞাটা ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ মৌসুমের জন্য। 

    ইউয়েফার শাস্তিকে চ্যালেঞ্জ করে সিটি সুইজারল্যান্ডের লসানে অবস্থিত সিএএসে অভিযোগ জানাবে। সেই আদালত শাস্তি কমানো, স্থগিত অথবা পুনঃতদন্তের নির্দেশ যা-ই দিক, সেটা ইউয়েফাকে মেনে নিতে হবে। সিএএস আগামী জুলাইয়ের মাঝেই একটি সিদ্ধান্ত দিতে পারবে বলে জানাচ্ছে বিবিসি। তবে যদি সে সিদ্ধান্ত সিটির পক্ষে না যায়, তাহলে তারা সুইজারল্যান্ডের সাধারণ আদালতেও ইউয়েফার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবে। তবে সেক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি অনেক দীর্ঘায়িত হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। 

    এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে ক্রীড়া সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে সাধারণ আদালতে যাওয়ার নজির নেই। তাই সিটি যদি শেষ পর্যন্ত সেদিকে যায়, তাহলে এই পদক্ষেপের প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী।


    সিটির সামনে কী অপেক্ষা করছে?

    ইউয়েফা প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নেওয়া ক্লাবগুলো আর্থিকভাবে বেশ লাভবান হয়। তাই আগামী দুই মৌসুম সিটি অংশ নিতে না পারলে সেদিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে যেতে পারে তারা। গত মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত গিয়েছিল গার্দিওলার সিটি। আসর থেকে ৯৩ মিলিয়ন আয় করেছিল তারা। আগামী দুই মৌসুমে যদি তারা আসরটিতে না খেলতে পারে তাহলে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ইউরো হারাবে ক্লাবটি।

    এছাড়া নিষেধাজ্ঞার ফলে আরেকটি বিষয়ও সিটিকে কিছুটা ভোগাবে। বিষয়টি হচ্ছে, কো-এফিশিয়েন্ট পয়েন্টে পিছিয়ে পড়া। দুই মৌসুম অংশ না নিতে পারলে তাদের পয়েন্ট স্বাভাবিকভাবে অনেক কমে যাবে। ফলে সিটি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে যখন আবার ফিরে আসবে ইউরোপীয় মঞ্চে, তখন কো-এফিশিয়েন্ট পয়েন্ট কম থাকার ফলে কঠিন গ্রুপে পড়তে হবে তাদের। 

     

    গার্দিওলা ও খেলোয়াড়দের ভাগ্যে কী?

    এই মৌসুম সিটির এমনিতেই ভালো যাচ্ছে না। গত দুই মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জেতা ক্লাবটি এবার শীর্ষে থাকা লিভারপুলের চেয়ে ২২ পয়েন্ট পিছিয়ে আছে। লিগ জেতার আশা তাই নেই বললেই চলে। তবে যদি চূড়ান্তভাবে সিটির উপর ইউয়েফার দেয়া দুই মৌসুমের নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকে তবে কি গার্দিওলা থাকবেন সিটির সঙ্গে? গত কয়েক সপ্তাহে মিডিয়ার সঙ্গে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি অবশ্য তার বর্তমান চুক্তির পূর্ণ মেয়াদ তথা ২০২১ পর্যন্ত ক্লাবের সঙ্গে থাকার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। তবে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা আসার পর গার্দিওলা তার আগের বক্তব্যে অটল থাকেন সেটি এখন দেখার বিষয়। 

    আর যদি গার্দিওলা চলে যান সিটির অনেক তারকা খেলোয়াড়ও একই কাজ করতে পারেন। মিডফিল্ডার ডেভিড সিলভা এই মৌসুম শেষেই ক্লাব ছাড়ছেন সেটি নিশ্চিত। সঙ্গে ২০২১ সালে ক্লাবের সঙ্গে বর্তমান চুক্তি শেষ হচ্ছে মূল স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরোর, আর ২০২২ সালে চুক্তি শেষ হচ্ছে কেভিন ডি ব্রুইন, রহিম স্টার্লিং, বের্নার্দো সিলভা এবং লির‍য় সানেদের। তাই নিষেধাজ্ঞার ফলে সিটির এই শীর্ষ খেলোয়াড়রা যদি আর চুক্তি নবায়ন না করে দল বদলানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সামনের দিনগুলোতে সিটির বিপদ আরো বাড়তে পারে।

     

    এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কী ম্যানচেস্টার সিটিতে একটি যুগের সমাপ্তি হতে যাচ্ছে?

    যদি গার্দিওলা সিটি ছেড়ে চলে যান, তাহলে ম্যানচেস্টারের নীল অর্ধে একটি যুগের সমাপ্তি ঘটবে। ২০০৯ সালে ওয়েলশ ম্যানেজার মার্ক হিউজেসকে ক্লাব থেকে বিদায় দেয়ার সময় তৈরি হওয়া বিশৃঙ্খল অবস্থা থেকে অনেকটা দূর এগিয়ে এসেছে ম্যানচেস্টার সিটি। ক্লাবের কাঠামোগত উন্নয়ন এবং ফুটবল নিয়ে তাদের পরিকল্পনা ও সেই মতো বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে ক্রমেই ইংল্যান্ডের অন্যতম সেরা ক্লাবে পরিণত হয়েছে তারা। ২০০৮ সাল থেকে ক্লাব পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সিটি ফুটবল গ্রুপ ক্লাবটিকে যেভাবে ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাব হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল, নিষেধাজ্ঞার ফলে সে প্রচেষ্টাতেও একটা ছেদ পড়বে বৈ কি। বিশ্ব ফুটবলে সিটির ভাবমূর্তির সংকটও প্রকট হবে।

     

    সিটির সর্বনাশে কাদের পৌষ মাস?

    ম্যানচেস্টার সিটি আগামী দুই মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপা লিগে অংশ নিতে পারবে না। প্রিমিয়ার লিগ থেকে চারটি দল সরাসরি চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার সুযোগ পায়। তাই যদি সিটি এই মৌসুমে পয়েন্ট টেবিলের সেরা চারে থেকে লিগ শেষ করে তাহলে পয়েন্ট টেবিলে থাকা পঞ্চম দলটি আগামী মৌসুমে সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলার সুযোগ পাবে। সিটি বর্তমানে পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। আর টেবিলের পঞ্চম স্থানে রয়েছে এই মৌসুমেই চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে উঠে আসা শেফিল্ড ইউনাইটেড। তবে সিটির জায়গাটিতে শেফিল্ড ছাড়াও মরিনহোর টটেনহ্যাম, নুনোর উলভস এবং আনচেলত্তির এভারটনেরও চোখ রয়েছে। দল তিনটি যথাক্রমে টেবিলের ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম স্থানে রয়েছে।