• জিম্বাবুয়ের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    শান্ত এখন 'নির্ভার', দেখছেন নিজের মানসিকতায় পরিবর্তন

    শান্ত এখন 'নির্ভার', দেখছেন নিজের মানসিকতায় পরিবর্তন    

    নাজমুল হোসেন শান্তর ইনিংসটাই যেন বাংলাদেশের পুরো দিনের প্রতিচ্ছবি। আক্ষেপ-তৃপ্তির যুগবন্দী যেখানে। ফিফটিটা তৃপ্তি দিচ্ছে, তবে সুযোগ পেয়েও ইনিংস বড় করাটা আক্ষেপ জোগাচ্ছে। ৭১ রানের ইনিংস সবসময়ই সেঞ্চুরি উঁকি দিয়ে মিলিয়ে গেল ধরনের একটা অনুভূতি দেবে, তবে ব্যাটসম্যান যখন শান্ত, তখন এ ইনিংসটাই হওয়ার কথা বেশ তৃষিতও। 

    তার কথাতেও মিশে আছে সেই যুগল অনুভূতি, “অবশ্যই সুযোগ ছিল, যেহেতু উইকেট ভালো ছিল। তবে এরপরেও আমি মনে করি যে যতটুকু ব্যাটিং করেছি আউটটা ছাড়া সেটা ভালো হয়েছে। তবে যেভাবে খেলছিলাম, শুরুটা যেভাবে হয়েছিল তাতে ইনিংসটা বড় করা উচিত ছিল।” 

    ২১ বছর বয়স শান্তর, ক্যারিয়ারে মাত্র চতুর্থ টেস্ট। তবে শান্তর এ চারটি টেস্ট এসেছে তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে। মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক ও ইমরুল কায়েসের চোট ২০১৭ সালে ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে সুযোগ করে দিয়েছিল তাকে, ২ ইনিংস মিলিয়ে তিনি করেছিলেন ৩০ রান। প্রায় দুই বছর পর আরেকটি সুযোগ পেয়েছিলেন ২০১৮ সালের নভেম্বরে, সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সেখানে করেছিলেন ১৮। 

    এরপর আবার সুযোগ পেলেন পাকিস্তান সফরে, রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দুই ইনিংসেই চল্লিশের আশে-পাশে গিয়ে আটকে গিয়েছিলেন। এর আগে বিপিএলে পাওয়া আত্মবিশ্বাস সেখানে কাজে লাগানোর কথা বলেছিলেন। এই টেস্টের আগে বিসিএলে খেলেছিলেন অপরাজিত ২৫৩ রানের ইনিংস। সে আত্মবিশ্বাস এই টেস্টে কাজে লেগেছে তার। পুরো ইনিংসেই দারুণ টাইমিং করেছেন এদিন। শান্ত বলছেন, মানসিকতা বদলে গেছে তার। 

    তিন বছরে শুধু টেস্ট না, সব ফরম্যাটেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে তাকে। তবে এখনও থিতু হতে পারেননি। অবশ্য এইচপি বা এরকম সেট-আপে শান্ত ছিলেন সবসময়ই। তাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে সেসবও, “লম্বা সময় ধরে আমি পরিকল্পনায় আছি, এটা একটা ইতিবাচক দিক। সেটা প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই থাকা উচিত। আমি মনে করি যখন জাতীয় দল থেকে বাদ পড়লাম এরপরও আমি হাই পারফরম্যান্স, 'এ' দলে ছিলাম। এটা আমার জন্য একটা ইতিবাচক দিক যে নির্বাচকেরা আমাকে ঐ জায়গাতে সুযোগ দিয়েছে।”

     


    জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭১ রানের ইনিংসে আক্ষেপ-তৃপ্তির যুগল আছে তারও/বিসিবি 


    “প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই এমন সুযোগ পাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। আমার এখন মনে হয়, যে মাঠে যখন নামি তখন আগের চেয়ে বেশি ‘নির্ভার’ থাকি। এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস।”

    এর আগে বিপিএলে সেঞ্চুরির পর বলেছিলেন খালেদ মাহমুদ সুজনের কথা, এবার বললেন কোচ সোহেল ইসলামের কথা, “সম্প্রতি গত দুই তিন মাস ধরে আমাদের সোহেল স্যার যিনি আছেন ওনার সঙ্গে বেশি কথা হচ্ছে। উনি একটা কথাই বলেছেন যে খুব বেশি চিন্তা করিস না এসব নিয়ে। শুধু খেলায় ফোকাস কর। আর বিশ্বাস করতে শেখ যে এখানে তুই রান করতে পারবি বা এখানেও রান করবি যেটা তুই ঘরোয়া ক্রিকেটে করিস। তাই আমি খুব বেশি খেলা নিয়ে চিন্তিত নই। নিজের যে স্কিল আছে সেটার উপরে বিশ্বাস রাখছি এবং এই কারণে আমার কাছে মনে হয় যে ধীরে ধীরে বড় রান করতে পারছি।” 

    “সত্যি কথা বলতে এর আগে যখন খেলেছি তখন একটা ভয় কাজ করতো। মনে হতো যে খারাপ খেললে বাদ পড়তে পারি বা এমন কিছু একটা ছিল। মানে আগে যখন ২০১৭ সালে অভিষেক হয়েছে তখন ছিল, তবে এখন আমি মানসিকভাবে তেমন কিছু চিন্তা করছি না। ভালো খেলি কিংবা খারাপ খেলি সেটা আসলে আমার অংশ। দলে থাকবো কি থাকবো না সেটা নিয়ে ভাবছি না। তবে চেষ্টা করছি নিয়মিত ভালো খেলার।”

    “আর একটা ইতিবাচক দিক হলো আমাদের কোচিং স্টাফ যারা আছেন তারা অনেক বেশি আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে এবং এগুলো নিয়ে চিন্তা করতে বারণ করছে। তারা বারবার বলছে তুমি অনেক সুযোগ পাবে, এখন শুধু খেলায় ফোকাস করো।”

    জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই ইনিংসের পর সংবাদ সম্মেলনে এসেই শান্ত খবর পেয়েছেন, ওয়ানডে দলেও সুযোগ পেয়েছেন তিনি। শান্ত এখন নির্ভার, এবং প্রস্তুত, “আমার কাছে যেটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে গত কয়েক মাসে, আমার মানসিকতা খুব ভালোভাবে পরিবর্তন হয়েছে। যেটা আমি বললাম যে নিজের প্রতি বিশ্বাসটা আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। স্কিল আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। যেমন দেখেন আগে আমার কাছে মনে হতো যে একটু তাড়াহুড়ো করতাম। এখন সেই জিনিসটি মাথায় এসেছে যে এখন থেকে দেখে শুনে বলের মেরিট অনুযায়ী শুরু করছি। আমার মনে হয় ইনিংসের শুরুটা আগের চেয়ে গুছানো হয়েছে।”