• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    নেপলসে বার্সাকে বাঁচিয়ে আনলেন গ্রিযমান

    নেপলসে বার্সাকে বাঁচিয়ে আনলেন গ্রিযমান    

    ফুলটাইম
    নাপোলি ১-১ বার্সেলোনা


    বার্সেলোনার বিপক্ষে ম্যাচের জন্য ট্রাম্প কার্ড জমিয়ে রেখেছিলেন জেনেরো গাত্তুসো। নাপোলি কোচের সেই কার্ড কাজেও দিচ্ছিল। কিন্তু বার্সেলোনার মতো দলকে হারাতে হলে পুরোটা সময়জুড়ে মনোসংযোগ ধরে রাখতে হত নাপোলির। এক মুহুর্তের ভুলে আর সে স্বাদ পাওয়া হয়নি তাদের। আন্টোয়ান গ্রিযমান কল্যাণে মহামূল্যবান অ্যাওয়ে গোল সঙ্গী হয়েছে বার্সার। বাকি কাজ সারতে তাদের জন্য আছে ন্যু ক্যাম্প।

    দ্বিতীয় লেগের আগেই অবশ্য সঙ্কটে পড়ে গেছে বার্সা। সার্জিও বুস্কেটস হলুদ কার্ড দেখে নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারছেন না। আর শেষদিকে মাথা গরম করে লাল কার্ড দেখে আর্তুরো ভিদাল দলকে বিপদে ফেলে মাঠ ছেড়েছিলেন। চোটে পড়েছেন জেরার্ড পিকেও। তার অবস্থা অবশ্য কতোখানি গুরুতর সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।


    সান পাওলোর প্রাণবন্ত সমর্থকদের সামনে খেলা কতোখানি কঠিন, সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে বার্সেলোনা। ইতালিতে এমনিতেই বার্সার সুখস্মৃতি দুঃস্মৃতি হয়ে আছে। নাপোলির মাঠে কখনও খেলা হয়নি, সেটাও হলো। কিন্তু  নেপলসের প্রথমার্ধটা একরকম নরকের মতো গেল বার্সার।  ম্যাচের একেবারে শুরু থেকেই খেই হারিয়েছিল কিকে সেতিয়েনের দল। এই ম্যাচ দিয়ে কোচ হিসেবে গাত্তুসোর মতো সেতিয়েনেরও অভিষেক হয়েছে চ্যাম্পিয়নস লিগে। তবে সেতিয়েন বেশিরভাগ সময় ছিলেন গাত্তুসোর আড়ালেই।

    রক্ষণ আঁটসাঁট করে রেখে বার্সেলোনাকে ওয়াইড পজিশনে খেলতে বাধ্য করছিল নাপোলি। চোটে পড়া জর্দি আলবার জায়গায় নেমেছিলেন জুনিয়র ফিরপো, অন্যপ্রান্তে ছিলেন নেলসন সেমেদো। দুই ফুলব্যাকের কাছ থেকে যে সাহায্যটা দরকার ছিল তার কিছুই পাচ্ছিল না বার্সা।  প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষের বক্সে বার্সা মাত্র ৩টি সফল পাস দিতে পেরেছে। চ্যাম্পিয়নস লিগে বার্সার হিসেবে এতো কম পাস তারা শেষবার দেখেছিল রোমার মাঠে, ২০১৮ সালে। সেই কস্তাস মানোলাস এবারও ছিলেন রক্ষণে, গোল করে নায়ক হননি। তবে ম্যাক্সিমোভিচের সঙ্গে জুটি গড়ে কালিদু কৌলিবালির অনুপস্থিতি বুঝতেই দেননি নাপোলিকে।     

    দিশেহারা বার্সাকে এর পর ৩০ মিনিটে হতাশায় ডোবান ড্রিস মার্টেনস। পিতর জিলেনস্কি ফিরপোর কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে বলের প্রান্ত বদলে পাস দেন বক্সের বাইরে কোণায় থাকা মার্টেনসকে। বেলজিয়ান ফরোয়ার্ড ডান পায়ের জোরালো শটে টপ কর্নারে বল জড়িয়ে সান পাওলোর উদযাপন বাড়িয়ে দেন আরও।

    ওই গোলে একটা রেকর্ডও গড়া হয়ে গেছে মার্টেনসের। ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে আগেই টপকে গিয়েছিলেন। এবার মারেক হামসেকের সমান ১২১ গোল করে নাপোলির সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনিও।


    ‘ম্যারাডোনার মাঠে’ প্রথমবারের মতো খেলতে গিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। ম্যাচটা তার খুব ভালো যায়নি। প্রথমার্ধে একেবারেই সুবিধা করতে পারেননি। যদিও দ্বিতীয়ার্ধে বেশ কয়েকবার ‘মেসি ম্যাজিকের’ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।

    মেসি অবশ্য ম্যাচ শেষে খুব বেশি আক্ষেপে পুড়বেন না হয়ত। সেটা গ্রিযমানের জন্যই। মার্টেনসকে ফাউল করে বুস্কেটস ৫৭ মিনিটে যখন হলুদ কার্ড দেখলেন, তখন নিশ্চিত হয়ে গেছে ফিরতি লেগে খেলবেন না তিনি। মার্টেনস ওই চোট নিয়ে কিছুক্ষণ পর বদলি হতে বাধ্য হয়েছেন। আর বুস্কেটস দারুণ এক পাস দিয়ে ভাগ্য খুলে দিয়েছেন বার্সার।

    বুস্কেটসের পাস ধরেই নাপোলির ডিফেন্স লাইনের পেছনে জায়গা পেয়েছিলেন সেমেদো। তিনি মাথা ঠান্ডা করে বক্সের ভেতর কাটব্যাক করেছেন গ্রিযমানের উদ্দেশ্যে। বাকি কাজটা ফ্রেঞ্চম্যান সেরেছেন এক শটে। ৫৭ মিনিটে ম্যাচে সমতায় বার্সা।

    এর পর মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান দুর্দান্ত হয়ে না উঠলে সমতায় থাকার সময়টা স্থায়ী হত না বার্সার। ৬১ আর ৬৩ মিনিটে দারুণ দুইটি সেভ করেছেন বার্সা গোলরক্ষক। প্রথমবার লরেঞ্জো ইনসিনিয়ের নিচু শট ঠেকিয়েছেন। পরের বার গোলের ১২ গজ দূরে থাকা সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ফুটবলার হোসে মারিয়া কায়েহনকে গোলবঞ্চিত করেছেন এগিয়ে গিয়ে। সেভের হিসেবে প্রথমটির চেয়ে দ্বিতীয়টি ছিল আরও দুর্দান্ত।

    জটলা খুলে বাকি সময়ে বল গড়িয়েছে এক পাশ থেকে অন্যপাশে। মেসিও দুইবার চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিংয়ে বক্সের ভেতর ঢুকে পড়েছিলেন। তবে ডেভিড অস্পিনাকে বিপদে ফেলার আগেই আটকে গেছেন তিনি। একবার অবশ্য স্লাইড করে গোল দিতে গিয়ে অস্পিনাকে আঘাত করে হলুদ কার্ডও দেখেছেন মেসি।

    ম্যাচের ২ মিনিট বাকি থাকতে ফাবিও রুইকে ফাউল করে ভিদালও প্রথমে হলুদ কার্ডই দেখেছিলেন। তবে সেখানেও থামেননি। মাথা দিয়ে গুঁতোগুতি করতে গিয়ে দুইজনই হলুদ দেখেন। সেটা হয়ে যায় ভিদালের দ্বিতীয় কার্ড। শেষে তাই হুট করে আবারও কঠিন হয়ে যায় বার্সার লড়াই।

    ১৯৯৭ সালে লুই ফন হালের পর প্রথম বার্সা কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচে জয় পাননি সেতিয়েন। কিন্তু এই ড্রটাও শেষ পর্যন্ত তার কাছে জয়ের সমানই মনে হওয়ার কথা। ২০০৬ সালের পর থেকেই তো ইতালির কোনো মাঠে জেতাই হয়নি বার্সেলোনার। সে তুলনায় মন্দ কী!

        

    বার্সেলোনা
    টের স্টেগান, সেমেদো, পিকে, উমতিত, ফিরপো, ডি ইয়ং, বুস্কেটস, রাকিটিচ, ভিদাল, মেসি, গ্রিযমান
    নাপোলি
    অস্পিনা,  ডি লরেঞ্জো, মানোলাস, মাক্সিমোভিচ, রুই, রুইজ, ডেমে, জিলিনস্কি, কায়েহন, মার্টেনস, ইনসিনিয়ে