অস্ট্রেলিয়ার বল টেম্পারিং কেপটাউনের আগের দুই টেস্টেই সন্দেহ করেছিলেন আম্পায়াররা
আত্মজীবনী মানে অজানা কিছু জানানো। আত্মজীবনী পড়া মানে অজানা কিছু জানা। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আম্পায়ারিং থেকে অবসর নেওয়া ইয়ান গোউল্ডের আত্মজীবনীও তাই। ২০১৮ সালে কেপটাউন টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বল-টেম্পারিং কেলেঙ্কারি সিরিজের আগের দুই টেস্ট থেকেই ম্যাচ অফিশিয়ালরা সন্দেহ করেছিলেন বলে নিজের গানার : মাই লাইফ ইন ক্রিকেট নামে বইয়ে লিখেছেন ‘গানার’ ডাকনামের এই ইংলিশ আম্পায়ার।
ডারবান ও পোর্ট এলিজাবেথে দায়িত্ব পালন করা ম্যাচ অফিশিয়ালরা আগে থেকেই পরের দুই টেস্টের আম্পায়ার ম্যাচ রেফারিদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন। স্থানীয় ব্রডকাস্টার সুপারস্পোর্টের সঙ্গে আন-অফিশিয়াল মিটিং-ও হয়েছিল তাদের, যাতে তাদের ক্যামেরায় কিছু ধরা পড়লে জানানো হয়।
কেপটাউন ও জোহানেসবার্গ টেস্টে দায়িত্ব পালনের জন্য নাইজেল লং, রিচার্ড ইলিংওর্থ ও ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন গোউল্ড। এর আগের দুই টেস্টে ছিলেন ক্রিস গ্যাফানি, কুমার ধর্মসেনা, এস রভি ও ম্যাচ রেফারি জেফ ক্রো। গোউল্ড লিখেছেন, দক্ষিণ আফ্রিকা যাওয়ার কয়েকদিন আগেই ফোনে গ্যাফানির টেক্সট পেয়েছিলেন তিনি।
“সে ডারবান টেস্টে থার্ড আম্পায়ার ছিল, পোর্ট এলিজাবেথে কুমার ধর্মসেনার সঙ্গে দাঁড়িয়েছিল। তার মেসেজে সে আমাকে সতর্ক করেছিল, ব্যাপার-স্যাপার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে।”
“আম্পায়ারিং দলের সন্দেহ ছিল যে অস্ট্রেলিয়ানরা বলের কন্ডিশন নিয়ে একটু বেশিই কাজ করছে, সুপারস্পোর্টের ব্রডকাস্টারদের সঙ্গে কথাও বলেছিল তারা। যদি ক্যামেরায় কিছু ধরা পড়ে, তাহলে যাতে আম্পায়ারদের জানানো হয়।”
আম্পায়ারদের সঙ্গে কথা বলছেন ব্যানক্রফট/ইএসপিএন/গেটি
কেপটাউনে ক্যামেরন ব্যানক্রফট বলে কিছু একটা করে নিজের ট্রাউজারসের সামনের দিকে ঢুকিয়েছেন, এ বার্তা অন-ফিল্ড আম্পায়ার লং ও ইলিংওর্থকে দিয়েছিলেন সে ম্যাচে টিভি আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করা গোউল্ডই।
অবশ্য কেপটাউন-কেলঙ্কারির পর থেকেই অস্ট্রেলিয়ানরা দাবি করে আসছে, সে টেস্টের আগে বল নিয়ে কোনও ব্যাপার-স্যাপার তাদের দিক থেকে ঘটেনি। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার তদন্তও হয়েছে কেপটাউন টেস্টকে ঘিরেই, যেটির পর নিষিদ্ধ করা হয়েছিল স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে।
এমনকি এরপর জোহানেসবার্গে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও বল-টেম্পারিংয়ের অভিযোগ এনেছিল অস্ট্রেলিয়া। গোউল্ড বর্ণনার করেছেন সে ‘মজার’ ঘটনা, “প্রথমদিন শেষে বের হওয়ার সময় পকেটে হাত দিয়ে আমার ক্যান্ডির একটা প্যাকেট পেয়েছিলাম, যা হাত থেকে পড়ে গিয়েছিল। স্কয়ারে থাকা উইকেটের স্টাম্পের হোলে নিজের বুট দিয়ে সেটি ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম আমি, এরপর আর কিছু ভাবিনি।
“তবে পরদিন ওই উইকেটে ওয়ার্ম-আপ করছিল অস্ট্রেলিয়ান বোলাররা। আপনি অনুমান করতে পারেন এরপর কী ঘটেছিল। কিছুক্ষণ পর বোলিং কোচ ডেভিড সাকের আমার দরজায় কড়া নাড়লো, এবং এসে বললো, ‘আমরা তাদের ধরে ফেলেছি’, এবং এটা বলে সে বুঝাতে চেয়েছিল তার হাতে থাকা আমার ক্যান্ডির প্যাকেট, সে বুঝাতে চেয়েছিল, দক্ষিণ আফ্রিকা ক্যান্ডি থেকে পাওয়া লালা দিয়ে বলে ব্যবহার করছিল।
“আমি অ্যান্ডির (পাইক্রফট) দিকে তাকালাম, আমরা দুজনই বেশ শক্ত মুখে ছিলাম। নিজের পকেট থেকে আমার ক্যান্ডির প্যাকেট বের করে বললাম, ‘মানে তুমি এসবের কথা বলছো?’ অ্যান্ডি কীভাবে নিজের হাসি ধরে রেখেছিল আমি জানি না। তবে এটা প্রমাণ করে, দুই দলের মাঝে কী চলছিল। তারা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিল।”