সুয়ারেজের রেকর্ড গড়া গোলে দুই লাল কার্ডের ডার্বি জিতল বার্সেলোনা
ফুলটাইম
বার্সেলোনা ১-০ এস্পানিওল
একদল প্রায় হারিয়ে ফেলা শিরোপার জন্য শেষ চেষ্টা করে যাচ্ছে। আরেকদল প্রায় নিশ্চিত হওয়া রেলিগেশন এড়াতে জান বাজি রেখে লড়ছে। এবারের কাতালান ডার্বির সমীকরণটাই ছিল অন্যরকম। ডার্বি যেমন হওয়ার কথা তেমনই হয়েছে, দুই লাল কার্ডের ম্যাচে বার্সেলোনা পার পেয়ে গেছে লুইস সুয়ারেজের একমাত্র গোলে। আর ডার্বিতে হেরে বিদায়ঘন্টা বেজে গেছে এস্পানিওলের। রেলিগেশন নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় ২৭ বছর পর সেগুন্দা ডিভিশনে নেমে যেতে হচ্ছে তাদের। আগামী মৌসুমে তাই তাই আর লা লিগা দেখবে না কাতালুনিয়ার বিখ্যাত এই ডার্বি।
ম্যাচের সব 'কাহিনী' ঘটেছে দ্বিতীয়ার্ধে। ৩ মিনিটের ব্যবধানে আনসু ফাতি ও পল লোজানো লাল কার্ড দেখেছেন প্রায় একইভাবে। ৫৬ মিনিটে সুয়ারেজ করেছেন ম্যাচের একমাত্র গোল, তাতে রেকর্ডও গড়া হয়ে গেছে উরুগুইয়ানের। বার্সেলোনার ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন তিনি। লাজলো কুবালাকে টপকে বার্সার হয়ে এখন ১৯৫ গোল সুয়ারেজের। তার সামনে আছেন সিজার আলভারেজ (২৩২), আর অতি অবশ্যই লিওনেল মেসি (৬৩০)।
ভিয়ারিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচের একাদশ থেকে কিকে সেতিয়েন পরিবর্তন এনেছিলেন একটি। আর্তুরো ভিদালের জায়গায় এসেছিলেন ইভান রাকিটিচ। লিওনেল মেসি আরও একবার ছিলেন মিডফিল্ড ডায়মন্ডের চূড়ায়। যদিও অ্যান্টোয়ান গ্রিযমান আর সুয়ারেজের সঙ্গে তার ছন্দটা ঠিক আগের ম্যাচের মতো জমেনি। এস্পানিওল নিজেদের রক্ষণে ভিয়ারিয়ালের মতো অতো জায়গা বা সময় কোনোটাই দেয়নি বার্সাকে। তবে একমাত্র গোলটা এসেছে বার্সার তিন ফরোয়ার্ডের সমন্বয়েই।
বাম প্রান্ত থেকে জর্দি আলবার ক্রসের পর বাইলাইনের কাছাকাছি জায়গা থেকে কাটব্যাক করেছিলেন গ্রিযমান। মেসি ছিলেন সিক্সইয়ার্ড বক্সের কোণায়। তার বাম পায়ের শট এস্পানিওল গোলরক্ষক ডিয়েগো ডেভিড লোপেজ ঠেকিয়ে দিলেও শেষ রক্ষা করতে পারেননি। গোলের সামনে থাকা সুয়ারেজ সহজেই বল পুরে দেন এস্পানিওলের জালে।
সুয়ারেজের গোলের আগ পর্যন্ত বার্সাকে হতাশই হতে হচ্ছিল। প্রথমার্ধে একবারও গোলে শট নিতে পারেননি মেসিরা। এই মৌসুমে এমন কিছু ঘটেছে প্রথমবারের মতো। অন্যদিকে মান বাঁচানোর লড়াইয়ে নামা এস্পানিওল অন্তত দুইবার প্রায় গোল করেই ফেলেছিল। একবার মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। অন্যবার এস্পানিওলের এমবারাবা স্টেগানকে ফাঁকি দিতে পারলেও বারপোস্টে আটকে গেছেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই তাই ভাগ্য বদলাতে আনসু ফাতিকে মাঠে নামিয়ে দেন কিকে সেতিয়েন। নেলসন সেমেদো বসে যান, আর মিডফিল্ড থেকে রাইটব্যাক পজিশনে ফিরে যান সার্জি রবার্তো। ফাতিকে মাঠে নামিয়ে অবশ্য মাথায় হাত দিতে হয়েছে সেতিয়েনকে। মাঠে নামার কিছুক্ষণ পর সরাসরি লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন ১৭ বছর বয়সী।
ফাতি শুরুতে হলুদ কার্ডই দেখেছিলেন। মিডফিল্ডে বল দখল করতে গিয়ে ফার্নান্দো কালেরোর পায়ে আঘাত করেছিলেন তিনি। রেফারি পরে ভিএআরের পরামর্শে মাঠের বাইরে গিয়ে হাইলাইটস দেখে সিদ্ধান্ত বদলান। ফাতির পা ছিল অনেকটা ওপরে, তার ট্যাকেল বিপজ্জনক হতে পারত কালেরোর জন্য। রেফারি পরে রঙ বদলে লাল কার্ড দেখিয়ে দেন ফাতিকে। লা লিগার ইতিহাসে দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম ফুটবলার হিসেবে লাল কার্ড দেখার রেকর্ডটাও জুটে গেছে ফাতির সঙ্গে।
কিছুক্ষণ পর একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবার ফাউলের শিকার জেরার্ড পিকে। পল লোজানোর পা অবশ্য খুব বেশি ওপরে ছিল না। রেফারি আরও একবার প্রথমে হলুদ দেখিয়ে পরে নিজে হাইলাইটস দেখে 'মিটমাট' করে দিয়েছেন ঘটনা। লোজানো মাঠে ছেড়েছেন ৫৩ মিনিটে।
সুয়ারেজের গোল পরে স্বস্তি হয়ে এসেছে বার্সার জন্য। বাকি সময়ে সেভাবে আক্রমণে ওঠেনি বার্সা। মেসির একটি ভলি ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন লোপেজ। এছাড়া বলার মতো আক্রমণ কমই করতে পেরেছে তারা। রেলিগেশন এড়াতে এই ম্যাচে জিততেই হত এস্পানিওলকে। সময় যত গড়িয়েছে তারাও কঠিন বাস্তবতা ধীরে ধীরে মেনে নিয়েছে।
এখান থেকে লা লিগায় ফিরতে এস্পানিওলকে আবার ঢেলে সাজাতে হবে সব। নতুন করে দ্বিতীয় স্তরে শুরু করতে হবে ফেরার লড়াই। বার্সার অবস্থাও প্রায় একইরকম। এই জয়ের পর লিগের আর ৩ ম্যাচ বাকি বার্সার। আজকের পর শীর্ষে থাকা রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে পয়েন্ট ব্যবধান কমে একে নেমেছে। তবে বার্সা খেলেছে রিয়ালের চেয়ে এক ম্যাচ বেশি। রিয়াল মাদ্রিদ তাই একরকম বার্সার-ধরা ছোঁয়ার বাইরে। নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রক্রিয়াটা তো বার্সার জন্য প্রযোজ্য। রেষারেষি ম্লান করে দুই কাতালান ক্লাবের ম্যাচটা তাই শেষ হয়েছে এক বিন্দুতেই।