• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    রোনালদোর জোড়া গোলও কোয়ার্টার ফাইনালে তুলতে পারল না জুভেন্টাসকে

    রোনালদোর জোড়া গোলও কোয়ার্টার ফাইনালে তুলতে পারল না জুভেন্টাসকে    

    ফুলটাইম

    জুভেন্টাস ২ - ১ লিওঁ

    দুই লেগ মিলে ২-২ এ সমতার পর অ্যাওয়ে গোলের হিসেবে লিওঁ জয়ী


    প্রথম লেগে জুভেন্টাসকে চমকে দিয়ে ম্যাচ জিতে নিয়েছিল লিওঁ। দ্বিতীয় লেগের ১২ মিনিটের মাথায় যখন পেনাল্টি পেয়ে যায় লিওঁ, তখন সত্যিই অঘটনের আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। কিন্তু আবারও দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া জুভেন্টাসের ত্রাতা হয়ে এসেছিলেন চ্যাম্পিয়নস লিগের বরপুত্র ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। প্রথমার্ধের শেষ দিকে পেনাল্টি থেকে এবং দ্বিতীয়ার্ধের পনের মিনিটের মাথায় বক্সের অনেকটা বাইরে থেকে নেওয়া রকেটগতির শটে জুভেন্টাসকে একাই টাইয়ে সমতায় নিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অনেক চেষ্টা করেও জয়সূচক গোলটি আর খুঁজে পায়নি বিয়াঙ্কোনেরিরা। রোনালদোকেও আর সঙ্গ দিতে পারেনি কেউ। লিঁও-র কাছে হেরে সিরি আ চ্যাম্পিয়নরা বিদায় নিয়েছে দ্বিতীয় রাউন্ড থেকেই।

    ধীরগতির ফুটবল আর লিওঁর ইস্পাতদৃঢ় রক্ষণের সামনে হার মানতে হয়েছে মাউরিজিও সারির দলকে। ফ্রান্সে ফুটবল মৌসুম স্থগিত অবস্থায় বাতিল করে দেওয়ায় ১৪২ দিন পর মাঠে নেমেছিল লিঁও। জুভেন্টাস খেলার ভেতরই ছিল এতোদিন। তুরিনেই শেষ পর্যন্ত জুভেন্টাসকে বিদায় করে দিয়ে রুডি গার্সিয়ার দল বড় এক চমক দেখিয়েছে।


    অ্যালিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে মাঠে নামার আগেই পিছিয়ে গিয়েছিল জুভেন্টাস। পাউলো দিবালা ছিলেন না একাদশে,  রোনালদোর সঙ্গে মাঠে নেমেছিলেন গঞ্জালো হিগুয়াইন আর ফ্রেডেরিকো বের্নাদেস্কি। দিবালাকে ছাড়া সৃজনশীলতার অভাব প্রথমার্ধে ভালোভাবেই টের পেয়েছে জুভেন্টাসের আক্রমণভাগ।

    ম্যাচের প্রথম কয়েক মিনিটে লিওঁ-র বক্সে বল নিয়ে হানা দেওয়ার চেষ্টা করছিল জুভেন্টাস খেলোয়াড়রা। তবে নবম মিনিটে ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগ পায় লিওঁ। হুসেম আওয়ারের শট কোনোমতে দূরের পোস্টের বাইরে ঠেলে দেন জুভেন্টাস গোলরক্ষক ভোজায়িক সেজনি। তবে এরপরের মিনিটেই ঘটল অঘটন। জুভের বক্সে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে থাকা আওয়ারের কাছ থেকে বল কেড়ে নিতে গিয়ে তাকে স্লাইড ট্যাকেল করেছিলেন রদ্রিগো বেন্টাঙ্কুর। বলের নাগালও তিনিই পেয়েছিলেন, কিন্তু সবাইকে চমকে দিয়ে রেফারি উলটো পেনাল্টির বাঁশি বাজান সেই বেন্টাঙ্কুরের বিপক্ষেই। বিতর্কিত এক পেনাল্টি থেকে প্রথমে কপাল পড়ে জুভেন্টাসের।

    প্রথম লেগে চোটের কারণে খেলা হয়নি মেমফিস ডিপাইয়ের। মৌসুম লম্বা হওয়াতেই খেলার সুযোগ পেয়েছেন লিঁও অধিনায়ক। পানেনকা শটে গোল করে লিওঁ-কে টাইয়ে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন  সেই ডিপায়। এই গোলের মাধ্যমে দ্বিতীয় ডাচ খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে টানা ছয় ম্যাচে জাল খুঁজে পেয়েছেন ডিপায়।

    লিওঁ-র গোলের পর আক্রমণের গতি বাড়ায় জুভেন্টাস। ৪০ মিনিটে বক্সের একদম বাইরে থেকে পাওয়া ফ্রি-কিক থেকে রোনালদো গোল পেয়েই গিয়েছিলেন প্রায়, তবে লিওঁ গোলরক্ষক লোপেস দারুণ সেভ করে হতাশ করেন রোনালদোকে।

    তবে পরের মিনিটেই আবারও লিওঁ-র বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় জুভেন্টাস। মিরালেম পিয়ানিচের নেওয়া ফ্রি-কিক গিয়ে লাগে ডিপায়ের হাতে। যদিও সেখানে ডিপায় হাত যথাসম্ভব শরীরের কাছাকাছি রাখার পরও রেফারি আরও একবার বিতর্ক উস্কে দিয়ে পেনাল্টির সিদ্ধান্তে বহাল থাকেন। রেফারি সরাসরি পেনাল্টির  ইঙ্গিতের পর ভিএআরও সেই আদেশ বহাল রাখে। পেনাল্টি থেকে গোলরক্ষককে উলটো দিকে পাঠিয়ে জুভেন্টাসকে ম্যাচ সমতায় আনতে মোটেই বেগ পেতে হয়নি রোনালদোর। তবে টাই জিতে কোয়ার্টারে পৌঁছুতে তখনও আরও দুই গোল প্রয়োজন ছিল জুভেন্টাসের।


    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকে বল দখলে নিয়ে খেলছিল জুভেন্টাস। কিন্তু লিওঁ-র দারুণ রক্ষণ কাঠামো আর নিজেদের অতি ধীরগতির পাসিংয়ে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছিল না। বিশেষ কিছুর প্রয়োজন বোধ করছিল স্বাগতিক জুভেন্টাস। আর তখনই প্রায় ২৪ গজ দূর থেকে বাঁ পায়ের রকেটগতির শটে জাল কাঁপিয়ে দেন রোনালদো। লিওঁ গোলরক্ষক লোপেস বলে হাত ছোঁয়াতে পারলেও ঠেকাতে পারেননি। এই গোলের মাধ্যমে এক মৌসুমে জুভেন্টাসের হয়ে সর্বোচ্চ গোলের ৯৫ বছর পুরনো রেকর্ড ভেঙে দেন তিনি। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে গত মৌসুমে একই পর্যায়ে তার হ্যাটট্রিকের স্মৃতি ফরে আসছিল তখন। কিন্তু লিওঁ-র দৃঢ়তায় শেষ পর্যন্ত রোনালদোর হ্যাটট্রিক এবং জুভেন্টাসের কোয়ার্টারের স্বপ্ন দুটিই অধরা থেকেছে। 

    ৭০ মিনিটে অবশ্য ম্যাচ বাঁচাতে বদলি হিসেবে নেমেছিলেন দিবালা। কর্নার থেকে দারুণ একটি গোলের সুযোগও তৈরি করেছিলেন রোনালদোর জন্য। তবে রোনালদোর হেড সে যাত্রায় একটুর জন্য গোলবারের ওপর দিয়ে গিয়েছিল। এরপর মাত্র ১৩ মিনিট মাঠে অবস্থান করেই আবার চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন সিরি আ-র বর্ষসেরা ফুটবলার দিবালা। জুভেন্টাসের আকাশে তখন মেঘের ঘনঘটা। বাকি সময়ে লিওঁ আর সুযোগ দেয়নি জুভেন্টাসকে।

    এই হারের পর জুভেন্টাস কর্তৃপক্ষের নড়েচড়ে বসারই কথা। সারির জায়গা আগে থেকেই নড়বড়ে ছিল। টানা নবমবার লিগ জিতেও জুভেন্টাস এভাবে মন ভরানোর মতো ফুটবল খেলতে পারেনি। এরপর চ্যাম্পিয়নস লিগের ব্যর্থতায় শেষ হলো তাদের মৌসুম। তাই জোড়া গোল করেও রোনালদোকে এখন নিজ দেশ পর্তুগালের মিনি চ্যাম্পিয়নস লিগ টুর্নামেন্টে থাকতে হবে দর্শক হয়ে।

    জুভেন্টাস

    শেজনি, কুয়াদ্রাদো, বনুচ্চি, ডি লিট, সান্দ্রো, বেনতানকুর, পিয়ানিচ, রাবিওত, বের্নাদেসকি,হিগুয়াইন, রোনালদো

    লিওঁ

    লোপেস, ডুবয়স, দেনায়ের, মার্সেলো, মার্সাল, আওয়ার, কাকেরেত, করনেত, গুইমারায়েস, ডিপায়, তোকো একাম্বি