• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    লিওঁ মিরাকলে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় গার্দিওলার সিটির

    লিওঁ মিরাকলে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বিদায় গার্দিওলার সিটির    

    ফুল টাইম

    ম্যানচেস্টার সিটি ১ - ৩ লিওঁ


    পেপ গার্দিওলা বসে পড়েছেন রাহিম স্টার্লিংয়ের অপ্রত্যাশিত এক মিসে। ম্যাচের শেষদিকে গোলের সামনে এমন সুযোগ হাতছাড়া করলে ওই ম্যাচে আর ফেরা যায় না। গার্দিওলা সেটা জানেন। গোলের কয়েক গজ দূর থেকে ফাঁকা জালে শুধু বলটা ঠেলে দিতে হত সোজাসুজি, স্টার্লিং বল মারলেন আকাশে উঁচিয়ে। গার্দিওলার দুর্দশা পরের মুহুর্তেই বাড়ল আরও। সুপার সাব মুসা ডেম্বেলে ৭৯ মিনিটে ব্যবধান করেছিলেন ২-১। স্টার্লিংয়ের ওই মিসের পর অন্যপ্রান্তে ডেম্বেলে যখন আরেক গোল করলেন গার্দিওলা তখন উঠে দাঁড়িয়েছেন। ম্যানচেস্টার সিটি আর তার ভাগ্য যে আর বদলাবে তখন সেটাও জেনে গেছেন গার্দিওলা। টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বাদ পড়েছে তার দল। আর লিঁও লিখেছে স্বপ্নের গল্প। জুভেন্টাসের পর ম্যান সিটিকে হারিয়ে দিয়ে নিজেদের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো সেমিফাইনালে উঠেছে লিওঁ, সেখানে তাদের প্রতিপক্ষ বায়ার্ন মিউনিখ। ২০০৯-১০ মৌসুমেও সেমিফাইনালে বায়ার্নের বিপক্ষেই খেলেছিল লিঁও। 

    শেষ ৫ মাসে লিওঁ এর আগে ম্যাচ খেলেছে একটি। সেটাও জুভেন্টাসের বিপক্ষে তুরিনে। ফ্রান্সে লিগ বন্ধ ঘোষণা করার সময় সপ্তম অবস্থানে থাকায় পরের বার চ্যাম্পিয়নস লিগ তো দূরে থাক ইউরোপা লিগেও খেলা হবে না লিঁওর। সিটির বিপক্ষে লিওঁর জয় মিরাকল আরও বহু কারণে। কিন্তু মাঠের ফুটবল দেখলে অবশ্য এই ধারণা আর থাকবে না আপনার। কাড়ি কাড়ি বাজেটের সিটিকে সাদামাটা বানিয়ে লিওঁ লিখেছে রোমাঞ্চকর এক ইতিহাস।


    লিসবনে প্রথম কুড়ি মিনিটের পানসে খেলার পর ম্যাচে প্রাণ ফেরে লিওঁ-র গোলে। ২৪ মিনিটে আচমকা এক আক্রমণ থেকে গোল পেয়ে যায় রুডি গার্সিয়ার দল। গোলটা করেন সিটির ‘পুরনো শত্রু’ কর্নেই। ২০১৮-১৯ চ্যাম্পিয়নস লিগে গ্রুপ পর্বে যখন লিওঁ-র মুখোমুখি হয়েছিল সিটি, সেখানেও গার্দিওলার দলের বিপক্ষে দুই ম্যাচে ৩ গোল করেছিলেন ফ্রেঞ্চ ক্লাবটির এই উইংব্যাক।

    মধ্যমাঠ থেকে মার্সাল শুন্যে ভাসানো বল পাঠিয়েছিলেন একাম্বির উদ্দেশ্যে, তরুণ সিটি ডিফেন্ডার এরিক গার্সিয়া তাকে তাড়া করছিলেন। সিটি গোলরক্ষক এডারসন সন্দিহান হয়ে পড়লেন, শেষ পর্যন্ত গার্সিয়া একাম্বিকে ঠেকাতে পারে কিনা সেটা নিয়ে। সেই সন্দেহের বশেই গোল ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে এসেছিলেন তিনি একাম্বির দিকে। অফসাইড ভেদ করতে পেরেছেন কিনা সেটা নিয়ে ধন্দে থাকায় বল পায়ে দৌড়ের গতি কিছুটা কমিয়ে দেন একাম্বি। আর সেই সুযোগেই ডাইভিং ট্যাকল করে বল ক্লিয়ারের চেষ্টা করেন গার্সিয়া, ক্লিয়ার হওয়ার বদলে সেই বল গিয়ে পড়ে কর্নেইয়ের পায়ে। গোল ছেড়ে অনেকটা বেরিয়ে আসা এডারসন তখন অপ্রস্তুত হয়ে যান। বাম প্রান্ত দিয়ে কিছুটা দৌড়ে এসে এরপর প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে সিটির গোল লক্ষ্য করে বাঁ পায়ে বাঁকানো শট করেন কর্নেই। এডারসনের চেয়ে চেয়ে বল জালে জড়াতে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তখন। ওই গোলের পর প্রথমার্ধের বাকিটা সময় লিওঁ-কে চেপে ধরেও সমতাসূচক গোল আদায় করে নিতে পারেনি সিটি।

    লিওঁ ম্যানেজার রুডি গার্সিয়া ৩-৫-২ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন। ম্যাচের আগে গার্দিওলাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল তিনি কোন ফর্মেশনে সিটিকে খেলাবেন। চমক রেখে তিনি তখন বলেছিলেন, ম্যাচ শুরু হলেই দেখা যাবে সেটা! ম্যাচ শুরুর পর দেখা গেল, লিওঁ-র ফর্মেশনেই খেলছে সিটি। ফার্নান্দিনহো ছিলেন তিন সেন্টারব্যাকের একজন। কিন্তু ম্যাচের শুরু থেকেই এই ফর্মেশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারেনি সিটি। লিওঁ-র ইস্পাতদৃঢ় রক্ষণ আর আক্রমণে বুদ্ধিদীপ্ততার কাছে কেভিন ডি ব্রুইন-গ্যাব্রিয়েল হেসুসদের তখন বেশ অসহায় মনে হচ্ছিল।

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও আবার প্রথমার্ধের সেই চিত্র। খেলার গতিপথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও প্রথম ২০ মিনিটে মোটে একবার বল লক্ষ্যে রাখতে পেরেছে সিটি, তাও ফ্রি কিক থেকে। ডি ব্রুইনের সেই ফ্রি কিক ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন লিওঁ গোলরক্ষক অ্যান্থনি লোপেস। তবে এরপর ৬৯ মিনিটে রহিম স্টার্লিংয়ের কাট ব্যাক থেকে ঠান্ডা মাথার ফিনিশে সিটিকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন কেভিন ডি ব্রুইন।


    সিটির গোলের পরেই লিওঁ অধিনায়ক মেমফিস ডিপাইকে উঠিয়ে ৭৫ মিনিটে মুসা ডেম্বেলেকে নামান গার্সিয়া। আর সেই পরিবর্তনের ফলও পেয়ে যান হাতেনাতে। মাঠে নামার চার মিনিটের মধ্যেই লিওঁ-কে এগিয়ে দেন ডেম্বেলে। মধ্যমাঠ থেকে হুসেম আওয়ার পাস দিয়েছিলেন তোকো একাম্বির উদ্দেশ্যে। কিন্তু নিজে অফসাইড পজিশনে আছে বুঝতে পেরে বল খেলার কোনও চেষ্টাই করেননি তিনি। তার পায়ের পাশ দিয়েই সামনে চলে যায় বল। আর সেখানেই ধোঁকা খেয়ে যায় সিটির রক্ষণ। একাম্বিকে অফসাইডের ফাঁদে ফেলতে গিয়ে উল্টো ডেম্বেলেকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে দেয় তারা। একাম্বির ছেড়ে দেওয়া বল নিয়ে এরপর সামনে এগিয়ে যান ডেম্বেলে। তার সামনে তখন শুধু এডারসন। বক্সের বাইরে থেকেই জোরের ওপর শট নেন তিনি, এডারসনের গায়ে লেগে গতি কমলেও সিটির জাল ঠিকই খুঁজে নেয় বল।

    ৮৬ মিনিটে সিটিকে সমতায় নিয়ে আসার দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন স্টার্লিং। গ্যাব্রিয়েল হেসুসের ক্রস থেকে বল পেয়েছিলেন ছয় মিটার বক্সের ভেতরে। কিন্তু সেই বল ফাঁকা গোলপোস্টের ওপর দিয়ে পাঠিয়ে দেন এই ফরোয়ার্ড। স্টার্লিংয়ের মিসের পর ডাগআউটে মাটিতে হাঁটু গেঁড়ে লুটিয়ে পড়েন গার্দিওলা। গত চ্যাম্পিয়নস লিগে কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যাচের যোগ করা সময়ে যখন স্টার্লিংয়ের জয়সূচক গোল ভিএআর বাতিল করে দেয়, তখনও সাইডলাইনে একই প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছিল গার্দিওলার কাছ থেকে।


    স্টার্লিংয়ের অভাবনীয় মিসের ৪৯ সেকেন্ডের মাথায় আবারও সিটির জালে লিওঁ-র গোল। এডারসনের দায় তাতে অনেক বড়। আওয়ারের শট ঠেকিয়ে দিয়ে সেটি ডেম্বেলের পাতে তুলে দেন সিটির ব্রাজিলিয়ান শট স্টপার। ট্যাপ-ইন ফিনিশে এরপর বল জালে পাঠাতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি ডেম্বেলের।

     লিওঁ-র এখন ইউরোপ সেরা হতে আর মাত্র দুই জয় প্রয়োজন। তবে সেমিফাইনালে এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগের সবচেয়ে নির্দয় ঘাতক বায়ার্ন মিউনিখের সামনে পড়ছে তারা। সেটা অবশ্য লিওঁর জন্য আলাদা চাপ নয়। সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাত্রার পর আর হারানোর কিছু থাকার কথা নয় তাদের।

    গার্দিওলা অবশ্য সব হারালেন। কেবল লিগ কাপটাই তার সান্ত্বনা হয়ে থাকল এবার। সিটির কোচ হয়ে আসার পর চতুর্থ মৌসুমেও দেখলেন না সেমিফাইনালের মুখ। চ্যাম্পিয়নস লিগে গার্দিওলাকে নিয়ে সন্দেহ করা লোকের সংখ্যা এরপর বাড়বে আরও। 

    ম্যানচেস্টার সিটি একাদশ

    এডারসন, ওয়াকার, গার্সিয়া, লাপোর্তে, ক্যান্সেলো, ফার্নান্দিনহো, রড্রিগো, গুন্দোয়ান, ডি ব্রুইন, স্টার্লিং, হেসুস

    লিওঁ একাদশ

    লোপেস, দেনায়ের, মার্সেলো, মার্সাল, ডুবয়, কর্নেই, ক্যাকেরেই, গিমারায়েস, আওয়ার, তোকো একাম্বি, ডিপাই