৫ গোলের ফাইনালে ইন্টারকে হারিয়ে ইউরোপার রাজা সেভিয়াই
ফুলটাইম
সেভিয়া ৩-২ ইন্টার
ইউরোপা লিগ আর সেভিয়ার ভালোবাসার বন্ধন দৃঢ় হলো আরও। ৫ গোলের নাটকীয় ফাইনালে শুরুতে পিছিয়ে পড়ে আরও একবার শেষ হাসি সেভিয়ার। ইউরোপা লিগের রাজারাই রেকর্ড ষষ্ঠবারের মতো জিতে নিল ইউরোপা লিগের শিরোপা। ৪ গোলের প্রথমার্ধের পর ৭৪ মিনিট পর্যন্ত সমতায় ছিল ম্যাচ। এরপর ডিয়েগো কার্লোসের ওভার হেড কিক রোমেলু লুকাকুর পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে ঢুকে যায় ইন্টার মিলানের জালে। অথচ কার্লোসের ফাউলের পর পাওয়া পেনাল্টিতে ভর করেই ম্যাচের ৪ মিনিটে দলকে এগিয়ে দিয়েছিলেন লুকাকু। শুরু আর শেষে চিত্রনাট্যের নায়ক-ভিলেন গেছে বদলে। লুকাকুর আত্মঘাতী গোলই হারিয়ে দিয়েছে নেরাজ্জুরিদের। তাতে আন্তোনিও কন্তের দল হতাশ হয়েছে, আর হুলেন লোপেতেগি জিতেছেন ইউরোপে নিজের প্রথম শিরোপা।
২০১৫-১৬ মৌসুমে সবশেষ ইউরোপা লিগ জয়ের রাতেও পিছিয়ে পড়েছিল সেভিয়া। এবারও গল্পটা বদলায়নি। ম্যাচের চতুর্থ মিনিটে ডিফেন্ডার আলভেজ লুকাকার সঙ্গে গতিতে না পেরে উঠে ফাউল করে বসেন বক্সের ভেতর। পরে সেখান থেকে স্পটকিকে লুকাকু মৌসুমের ৩৪ তম গোলে করে রেকর্ডও গড়ে ফেলেন। রোনালদো ১৯৯৭-৯৮ এ ইন্টারের হয়ে অভিষেক মৌসুমেই করেছিলেন সর্বোচ্চ ৩৪ গোল। যেটি ক্লাব রেকর্ড, লুকাকু ভাগ বসিয়েছেন তাতে। তবে লুকাকুর শেষটা আর রোনালদোর মতো হয়নি। সেবার ইন্টার মৌসুম শেষ করেছিল ইউয়েফা কাপ (বর্তমান ইউরোপা লিগ) জিতে।
পিছিয়ে পড়ার পর সেভিয়া ম্যাচে ফিরতে সময় নিয়েছিল মাত্র ৮ মিনিট। ডান দিক দারুণ কম্বিনেশন প্লের পর সেভিয়া অধিনায়ক হেসুস নাভাস ক্রস ফেলেছিলেন বক্সের ভেতর। লুক ডি ইয়ং গ্ল্যান্সিং হেডারে সেভিয়াকে সমতায় ফিরিয়ে আনেন তখন। ডি ইয়ং ছিলেন সেমিফাইনালের নায়কও, ম্যান ইউনাইটেডের বিপক্ষে বদলি হিসেবে নেমে গোল করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন দলকে। সেই সুবাদে পাওয়া একাদশের জায়গাটা ডি ইয়ং কাজে লাগিয়েছেন আরও ভালোভাবে।
৩৩ মিনিটে এভার বানেগার ফ্রি-কিক থেকে আবারও হেডে গোল করে বসেন ডি ইয়ং। ফাইনালে জোড়া হেডে গোল করার রেকর্ড এতোদিন ছিল না ইউরোপা লিগে, ছিল না চ্যাম্পিয়নস লিগেও। ডাচ স্ট্রাইকার দলকে এগিয়ে নিয়ে নিজেও নাম লিখিয়েছেন রেকর্ডবুকে। প্রথমার্ধের নাটক অবশ্য সেখানেও থামেনি। আরেক সেটপিস থেকে ইন্টারও এরপর ম্যাচে ফেরে ৩৬ মিনিটে। মার্সেলো ব্রোজোভিচের ফ্রি কিক থেকে হেডে গোল করেন ডিয়েগো গডিন।
প্রথমার্ধের ৪ গোল উত্তেজনা বাড়িয়ে দিয়েছিল ম্যাচের। তবে দ্বিতীয়ার্ধে সেই তুলনায় আর আক্রমণে উঠতে পারেনি কোনো দলই। কন্তের ৩-৫-২ ফরমেশন শুরুতে কাজে লাগলেও সময়ের সঙ্গেই ফিকে হয়ে যায়। লুকাকুর সঙ্গে লাউতারো মার্টনেজ জুটি ইউরোপা লিগে আগের ম্যাচগুলোয় ইন্টারকে যেমন সাহায্য করেছে সেটাও করতে পারেনি সেভিয়ার বিপক্ষে। ৬৫ মিনিটে লুকাকু ওয়ান অন ওয়ানে আটকে যান সেভিয়া গোলরক্ষকের কাছে। ম্যাচ শেষে ওই মিসটা বড় ফারাক গড়ে দিয়েছে দুইদলের খেলায়।
সেভিয়ার মিডফিল্ডে এভার বানেগা আরও একবার ছিলেন উজ্জ্বল। সেভিয়ার জার্সিতে নিজের শেষ ম্যাচটা খেললেন সাবেক ক্লাব ইন্টারের বিপক্ষে। ৩২ বছর বয়সী আরও একবার প্লেমেকারের ভূমিকায় সেভিয়ার জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন। সেই তুলনায় ইন্টারের মিডফিল্ড ছিল ধীর গতির।
চোটের কারণে ৭১ মিনিটে লুকাস অকাম্পোসকে হারিয়ে অবশ্য বিপদে পড়ে গিয়ছিল সেভিয়া। কিন্তু ডিফেন্ডার আলভেজের ওই ওভারহেড কিক কপাল খুলে দিয়েছে তাদের। আর তাতে পুরো মৌসুমে দুর্দান্ত খেলা লুকাকুকে শেষে এসে চরম পরিণতি মেনে নিতে হয়েছে।
ইন্টার শেষদিকে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন, অ্যালেক্সিস সানচেজদের নামিয়ে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছিল। সানচেজ ৮২ মিনিটে গোলটা প্রায় পাইয়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু জটলার ভেতর থেকে তার প্রচেষ্টা সেভিয়া ডিফেন্ডার জুলস কোন্ডে গোললাইন থেকে ক্লিয়ার করলে আরেকবার সমতয়ায় ফেরা হয়নি নেরাজ্জুরিদের।
২০১০ সালে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ের পর বড় শিরোপার জন্য ইন্টারের হাহাকার তাই বাড়ল আরও। সিরি আতে দুইয়ে থেকে শেষ করে, সেভিয়ার কাছে হারে মৌসুম শেষ হলো কন্তের দলের। আর লা লিগায় চতুর্থ হওয়ার পর সেভিয়ায় নিজের প্রথম মৌসুমে সাফল্য পেয়ে লোপেতেগি নিজেকে প্রমাণ করলেন স্পেনে। স্পেন ও রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক কোচের জন্য এই শিরোপা বড় পাওয়াই।
বড় পাওয়া নাভাসের জন্যও। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে এই শিরোপা জিতেছিলেন। এরপর মাঝে ম্যান সিটিতে সময় কাটিয়ে ফিরে এসে সেভিয়ার অধিনায়কের আর্মব্যান্ড পরেছেন। এই প্রথম অধিনায়ক হিসেবে শিরোপা উঁচিয়ে ধরার ভাগ্য হলো সেভিয়া কিংবদন্তীর। এই শিরোপার সঙ্গে সেভিয়ার সম্পর্কটাই তো এমন।
ইন্টার মিলান
হান্দানোভিচ, গডিন, ডি ভ্রাই, বাস্তোনি, ডাম্ব্রোসিও, বারেল্লা, ব্রোজোভিচ, গ্যালিয়ারদিনি, ইয়াং, লুকাকু, মার্টিনেজ
সেভিয়া
বনু, নাভাস, কোনডে, কার্লোস, রেগুইলন, জর্ডান, ফার্নান্দো, বানেগা, ওকাম্পোস, ডি ইয়ং, সুসো