তিন মাসে দুইবার বরখাস্ত থেকে ইউরোপ জয়: লোপেতেগির ছাইভস্ম থেকে পুনর্জন্ম
ইন্টারকে হারিয়ে সেভিয়ার ষষ্ঠ ইউরোপা লিগ জয়ের পর টিভি ক্যামেরায় বেশ কয়েকবার দেখা গেছে দৃশ্যটা। আবেগে কাঁদছেন হুলেন লোপেতেগি, চোখ বেয়ে নামছে অশ্রু। কোচিং ক্যারিয়ারে সিনিয়র পর্যায়ে প্রথম শিরোপা, তাও আবার মহাদেশীয় মঞ্চে। আবেগে ভেসে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে লোপেতেগি কি শুধু সে কারণেই আবেগাপ্লুত হয়েছিলেন, নাকি খাদের কিনারা থেকে উঠে এসে নিজেকে প্রমাণ করতে পারার উচ্ছ্বাসই অশ্রু হয়ে বের হচ্ছিল?
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর একদিন আগের কথা। রাশিয়ার সোচিতে পর্তুগালের বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচের আগে লোপেতেগির অধীনে অনুশীলন করছিল স্পেন। আর তখনই রিয়াল মাদ্রিদ জিনেদিন জিদানের উত্তরসূরি হিসেবে ম্যানেজার পদে লোপেতেগির নাম ঘোষণা করল। বিশ্বকাপের পর লস ব্লাঙ্কোসদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা। বিশ্বকাপে স্পেনের মতো দলকে কোচিং করিয়ে এরপর মাদ্রিদের কোচ হওয়া। সময়টা স্বপ্নের মতো হওয়ার কথা ছিল তার। কিন্তু তা হয়নি। পরদিনই স্পেনের কোচের পদ থেকে বিতাড়িত করা হয় তাকে। এরপর মাদ্রিদে এসেও ভাগ্য ফেরেনি তার। অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের কাছে ইউয়েফা সুপার কাপের ফাইনালে ৪-২ গোলে হার দিয়ে শুরু হয় তার মাদ্রিদ যাত্রা, আর শেষ হয় এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার বিপক্ষে ৫-১ গোলের হার দিয়ে। মাত্র ৩ মাসেই সাঙ্গ হয় তার রিয়াল মাদ্রিদ ক্যারিয়ার।
এরপর প্রায় ৭ মাস পর আবারও কোচিংয়ে ফিরে আসেন তিনি। এবার এস্তাদিও রামন সানচেজ পিজুয়ানে যাত্রা শুরু হয় তার। আগের মৌসুমে লিগে ষষ্ঠ হওয়া এবং ইউরোপা লিগের শেষ ষোল থেকে বিদায় নেওয়া সেভিয়া আবারও লিগে সেরা চারে এবং ইউরোপা লিগে ভালো কিছু করতে চাচ্ছিল। লোপেতেগির হাত ধরে দুটি লক্ষ্যই অর্জন করতে পেরেছে তারা। করোনায় বিপর্যস্ত মৌসুমেও চতুর্থ স্থানে থেকে লিগ শেষে করেছে, পেয়ে গেছে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার টিকিট। আর ইউরোপা লিগেও হারানো রাজত্ব ফিরে পেয়েছে তারা। তিন মৌসুম পর আবারও ইউরোপার রাজার আসনে আসীন সেভিলের ক্লাবটি।
আর সেভিয়ার হয়ে এই অর্জনগুলোর মাধ্যমেই ২০১৮-র দুঃস্বপ্ন থেকে পরিত্রাণ পেয়েছেন লোপেতেগি। অবশ্য সেভিয়াতে বড়সড় চ্যালেঞ্জ মাথায় নিয়েই কোচিং শুরু করতে হয়েছিল তাকে। ক্লাবটির নতুন স্পোর্টিং ডিরেক্টর মনচি দলটির স্কোয়াডকে নতুন চেহারা দিতে চাচ্ছিলেন। গত মৌসুমে সেভিয়া থেকে ১৭ জন খেলোয়াড় বিদায় নেয় এবং ২৮ জন নতুন করে যোগ দেয়। প্লেয়িং স্কোয়াডের এমন বদলের ফলে একদম গোড়া থেকেই কাজ শুরু করতে হয় তাকে। তবে সেই কাজটি যে কতটা নৈপুণ্যের সাথে সম্পন্ন করেছেন লোপেতেগি, সেটি মৌসুমের শেষ ২১ ম্যাচে সেভিয়ার অপরাজিত থাকার পরিসংখ্যানটি দেখলেই আঁচ করা যায়। এবার লা লিগায় সেভিয়ার চেয়ে ভালো রক্ষণের রেকর্ড ছিল শুধু মাদ্রিদের দুই ক্লাব রিয়াল এবং অ্যাটলেটিকোর। রক্ষণ মজবুত করে দৃষ্টিনন্দন পজেশনাল ফুটবল খেলিয়ে সেভিয়াকে আবারও শীর্ষে নিয়ে এসেছেন তিনি।
চাকরীচ্যুত হয়ে রাশিয়া থেকে নতমস্তকে স্পেনে ফিরেছিলেন। তাকে বরখাস্ত করার পর স্পেনও সেই বিশ্বকাপে বেশিদূর যেতে পারেনি। শেষ ষোলয় শক্তিমত্তায় যোজন যোজন পিছিয়ে থাকা রাশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে হেরে বিদায় নিয়েছিল ফার্নান্দো হিয়েরোর স্পেন। বিশ্বকাপে স্পেনের সেই ভরাডুবির পিছনে ‘খলনায়কে’র ভূমিকায় তিনিই ছিলেন। তবে সেই দুঃস্বপ্নের দুই বছর পর আবারও স্পেনে ফিরবেন তিনি, শিরোপা হাতে মাথা উঁচু করে। স্প্যানিশ ক্লাব সেভিয়াকে ইউরোপীয় সাফল্য এনে দেওয়ার মাধ্যমে পরোক্ষভাবে স্পেনের নামই তো সমুন্নত করেছেন লোপেতেগি।