• মেসির দলবদল
  • " />

     

    বার্সেলোনা ছেড়ে কোথায় যাবেন মেসি?

    বার্সেলোনা ছেড়ে কোথায় যাবেন মেসি?    

    লিওনেল মেসি বার্সেলোনা ছাড়ছেন। এই খবর চাউর হওয়ার পর থেকেই তার পরবর্তী গন্তব্য নিয়ে কৌতূহলী হয়ে উঠেছে ফুটবল দুনিয়া। কেউ গুরুশিষ্যের পুনর্মিলন দেখছেন ম্যানচেস্টারে তো কেউ বিশ্বসেরা দুই ফুটবলার মেসি এবং রোনালদোকে একই জার্সিতে দেখার বাসনা ব্যক্ত করছেন। তবে শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনা ছেড়ে মেসি কোথায় যাবেন সেটা জানতে আরও কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ বার্সেলোনা থেকে মেসির বিদায় আইনি ফ্যাসাদে পড়তে পারে বলে ধারণা করছেন অনেকে। কারণ মেসি যে ক্লজ অনুযায়ী ক্লাব ছাড়ার বার্তা দিয়েছেন, সেই ক্লজের মেয়াদ গত জুনেই পেরিয়ে গেছে। তাই মেসির দলবদল নিয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

    তবে যেহেতু মেসি ক্লাব ছাড়ার ব্যাপারে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়ায় এসেই পড়েছেন, সেই বার্তা ক্লাব পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছেন, তাই তার পরবর্তী গন্তব্যগুলো নিয়ে একটু পর্যালোচনা করা যাক। প্রথমেই একটি কথা বলে নেওয়া ভালো মেসিকে বড় অংকের বেতন দেওয়ার মতো ক্লাব ইউরোপে খুব বেশি নেই। তবে যে কয়েকটি ক্লাব মেসির পিছনে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করতে পারে, তাদের মধ্যে সবার প্রথমেই নাম আসবে ম্যানচেস্টার সিটির।


    অর্থ অবশ্যই ম্যান সিটির নাম উঠে আসার পিছনে বড় একটি নিয়ামক, তবে তার চেয়েও বড় টোপ হচ্ছেন পেপ গার্দিওলা। যে মহারথীর অধীনে বার্সেলোনায় ফুলেফেঁপে উঠেছিল মেসির ক্যারিয়ার। সেই কোচের সঙ্গে পুনর্মিলনের সুযোগ মেসি লুফে নিতেই পারেন। আর শুধু গার্দিওলাই সিটির ব্যাকরুম স্টাফের ফেরান সরিয়ানো এবং জিকি বেগিরিস্টেইনও একসময় মেসির সঙ্গে বার্সেলোনায় কাজ করেছেন। এছাড়া মেসির স্বদেশী বন্ধু সার্জিও আগুয়েরোও দীর্ঘদিন ধরে সিটিজেনদের ডেরাতেই রয়েছেন।

    তবে সিটি এখনো তার জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো প্রস্তাব দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেনি বলে জানিয়েছেন প্রখ্যাত ইতালিয়ান সাংবাদিক ফ্যাব্রিজিও রোমানো। আর সিটিজেনদের ধীরগতির সুযোগ তাদের নগর প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড নিয়ে নিতে পারে বলে খবর দিয়েছে বিবিসি। গত কয়েক মৌসুমে অবশ্য দলবদলের বাজারে ‘আনাড়ি’র মতো আচরণ করেছে ম্যান ইউনাইটেড। তবে এরপরও ইউনাইটেডের মালিকপক্ষ গ্ল্যাজার্স পরিবার এক্ষেত্রে চমক দেখালে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। গত মার্চে আমেরিকার রাগবি দল ট্যাম্পা বে বুকানিয়ার্স রাগবি ইতিহাসের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় টম ব্র্যাডিকে দলে টেনে সবাইকে চমকে দিয়েছিল। আর ট্যাম্পার মালিক হচ্ছে এই গ্ল্যাজার্স পরিবার। তাই দলবদলের সেই ঘটনা থেকে একটি বিষয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যায়, ফুটবলে দলবদলের ক্ষেত্রে গ্ল্যাজার্স পরিবারের তেমন সুনাম না থাকলেও দলবদলের বাজারে চোখ ঘুরিয়ে দেওয়া চমক দেখানোর সামর্থ্য রয়েছে তাদের। 

    এছাড়া প্রিমিয়ার লিগের চেলসি, আর্সেনাল এবং লিভারপুলও মেসির জন্য বিড করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যেহেতু মেসি বার্সেলোনায় তার সন্তানদের ব্রিটিশ স্কুলেই পড়াচ্ছেন তাই মেসির প্রিমিয়ার লিগের আশার সম্ভাবনাই আপাতত পালে হাওয়া পাচ্ছে বেশি।

    কয়েকদিন আগে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের পর পিএসজি কোচকে প্রশ্ন করা হয়েছিল মেসিকে নিয়ে। ‘মেসিকে কোন কোচ দলে চাইবে না?’ বলে উল্টো প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলেন তিনি। আর চোখ কপালে তুলে দেওয়া দলবদল সম্পন্ন করার দিক দিয়ে পিএসজির সুখ্যাতি রয়েছে। নেইমার এবং কিলিয়ান এমবাপের দলবদল দিয়ে বিশ্ব ফুটবলকে নাড়িয়ে দেওয়া পিএসজি মেসিকেও প্যারিসে নিতে চায় না, সেই বিষয়ে অবশ্য সরাসরি পিএসজির তরফ থেকে কিছু জানা যায়নি। আর পিএসজিতে মেসির অপেক্ষায় থাকবেন নেইমার। ২০১৭ সালে নেইমারের চলে যাওয়ার পর থেকেই যে বার্সা বোর্ডের সঙ্গে মেসির সংকটের শুরু।


    আর দীর্ঘদিন ধরে মেসিকে ইন্টার মিলানের সঙ্গে জড়িয়ে খবর বের হচ্ছে। ইন্টারের আর্থিক অবস্থা সিটি অথবা পিএসজির মতো না হলেও জুভেন্টাসকে টক্কর দিতে ইন্টার মেসিকে চায় বলে শোনা গেছে বেশ কয়েকবার। যদিও দলটি কোচ আন্তোনিয় কন্তে সেটিকে শুধু ‘ফ্যান্টাসি ফুটবলে’ই সম্ভব বলে বর্ণনা করেছিলেন। তবুও মেসির পরবর্তী গন্তব্য হিসেবে আবারও ঘুরেফিরে আসছে ইন্টারের নাম। ইতালিয়ান গণমাধ্যমের সূত্রমতে, মেসির প্রতিনিধিদের সঙ্গে কিছুটা আলাপ-আলোচনাও নাকি হয়েছে ইন্টারের চাইনিজ সভাপতি স্টিভেন ঝাংয়ের।

    অবসরের আগে নিজের পুরনো ক্লাব নিওয়েলস ওল্ড বয়েজের হয়ে আরেকবার খেলার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন মেসি। তবে যেহেতু মেসি এখনো তার সেরা ছন্দে রয়েছেন তাই ইউরোপিয়ান ফুটবল ছেড়ে তার আর্জেন্টিনায় পাড়ি জমানোর সম্ভাবনা কমই। একই কারণে মধ্যপ্রাচ্য অথবা পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও মেসির যাওয়ার সম্ভাবনা একরকম উড়িয়ে দেওয়া যায়। 

    মেসি আনুষ্ঠানিকভাবে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছের কথা বার্সেলোনাকে জানিয়ে দিয়েছেন। নানা কারণে ক্লাবের প্রতি পুঞ্জীভূত ক্ষোভ থেকেই তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত শৈশবের ক্লাবেই মেসির থেকে যাওয়ার সম্ভাবনাকে একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে যাই হোক, মেসির দলবদলের ঘটনাটি ফুটবল ইতিহাসের স্মরণীয় হয়ে থাকবে, সেটা নিশ্চিত।