বার্সা ছাড়ছেন মেসি: যে ৭ প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন আপনি
লিওনেল মেসি তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য বার্সেলোনাকে অনুরোধ করেছেন। এই মুহূর্তে এটাই সবচেয়ে বড় খবর, আনুষ্ঠানিক না হলেও খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে সব সংবাদমাধ্যম। কিন্তু মেসি কি আসলেই বার্সা ছাড়ছেন? ছাড়লে সেটার প্রক্রিয়া কী হবে? আপনার যেসব প্রশ্নের উত্তর জানা প্রয়োজন...
মেসি কি সত্যিই ক্লাব ছাড়ছেন?
হ্যাঁ। এই মুহূর্তে সেই সম্ভাবনাই বেশি। বুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে তার ইচ্ছা জানিয়েছেন মেসি। আপনি বলতে আরেন, ২০০৮ সালেও একবার বার্সা ছাড়া নিয়ে কথা হয়েছিল। ২০১৬ সালেও একবার কর সংক্রান্ত বিষয়ে ঝামেলার পর মেসির বার্সা ছাড়ার গুঞ্জন উঠেছিল। তবে এবারের পরিস্থিতি সেরকম নয়। মেসি আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় এবার ক্লাব ছাড়ার সবচেয়ে কাছাকাছি। সুতরাং, পরের মৌসুমে মেসি ছাড়া বার্সাকে দেখার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারেন।
বার্সা এখন কী করবে?
এখানেই হচ্ছে মূল ঝামেলাটা। বার্সা কোনোভাবেই মেসিকে ছাড়তে চায় না। অন্তত মেসি যেভাবে চাচ্ছেন সেভাবে তো অবশ্যই না। মেসির চুক্তিতে একটা ধারা আছে ১০ জুনের আগে যদি ক্লাব ছাড়ার কথা জানান তাহলে তাকে ফ্রিতে ছেড়ে দিতে হবে। মেসি এই ধারাটা ব্যবহার করেই ক্লাব ছাড়তে চাইছেন। আর বার্সার দাবি, যেহেতু ১০ জুন চলে গেছে এই মৌসুমে ধারাটা আর ব্যবহার করা যাবে না। মেসিকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর মেসির আইনজীবিদের দাবি, করোনাভাইরাসের জন্য এবার মৌসুম লম্বা হয়েছে। সেজন্য মেয়াদ ১০ জুন থেকে অন্তত ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়া উচিত।
কিন্তু যদি কেউ আপোস না করে?
দুই পক্ষই যদি নিজের অবস্থানে অটল থাকে তাহলে এই ব্যাপারটা গড়াবে কোর্টে। মনে রাখতে হবে, মেসি যদি ক্লাব ছাড়তে চান তাহলে কোর্টের সিদ্ধান্ত তার পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। অনুশীলন, প্রি সিজনে মেসি যোগ না দিলে ব্যাপারটা আরও কুৎসিত হবে। সেক্ষেত্রে বার্সা কী করবে সেটাও দেখার একটা বিষয়। বার্সার দাবি, মেসিকে পেতে হলে নেইমারের যে রিলিজ ক্লজ ছিল, সেই ২২২ মিলিয়ন ইউরোর চেয়ে অন্তত বেশি দিতে হবে। আর কাগজে কলমে মেসির রিলিজ ক্লজ ৭০০ মিলিয়ন ইউরো। যদি বার্সা আদালতে জিতে যায়, তাহলে মেসিকে হয়তো আরও এক বছর থেকে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে বেলের মতো সেই এক বছর কাটাতে পারেন বেঞ্চেও।
যদি বার্তোমেউ পদত্যাগ করেন ?
স্প্যানিশ একটা দৈনিকের দাবি, বার্সার এখনকার সভাপতি বার্তোমেউ পদত্যাগ করলে মেসি থেকে যেতে পারেন বার্সায়। তবে ব্যাপারটা আপাতত সেরকম না বলেই মনে হচ্ছে। প্রথমত, বার্তোমেউ পদত্যাগ করছেন এরকম কোনো আভাস দেয়নি বার্সা বোর্ড। আর যদি পদ ছাড়েনই, মেসি তারপরও গলবেন এরকম আভাস পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে নতুন বোর্ডের সাথে মেসির সমঝোতার পথটা আরেকটু সহজ হতে পারে অবশ্য। কিন্তু তারপরও ট্রান্সফার ফির মাধ্যমে হলেও মেসি বার্সা ছাড়তে চান, এরকমই শোনা যাচ্ছে। যদিও বার্তোমেউ চলে গেলে অনেক কিছুই বদলে যেতে পারে।
কিন্তু মেসির জন্য এত টাকা কোন ক্লাব খরচ করবে?
সজ উত্তর , কেউ না। ৭০০ মিলিয়ন দেওয়ার মতো অবস্থা কোনো ক্লাবেরই নেই এখন, এটা বলা যায়। ২২২ মিলিয়ন হয়তো কেউ খরচ করতে পারে, তবে ৩৩ বছর বয়সী একজনের জন্য সেটা করবে কি না সেটাও প্রশ্ন। আর সঙ্গে মেসির আকাশ্চুম্বী বেতন তো আছেই। এই মুহূর্তে মেসি মাসে ৮ মিলিয়ন ইউরো বেতন পান বলে জানা যাচ্ছে। সেটা বছরে প্রায় ১০০ মিলিয়নের কাছাকাছি। এরকম বেতন দিতে পারার সামর্থ্য খুব বেশি ক্লাবের নেই।
মেসিকে এত বেতন দিতে পারবে কে?
বেতন দেওয়ার মতো সামর্থ্য বেশ কিছু ক্লাবের কাছে। ইংলযান্ডে ম্যান সিটির কথাই বেশি শোনা যাচ্ছে, মেসি নিজেও নাকি সেখানেই যেতে চাইছেন। ম্যান ইউনাইটেড আর চেলসিও দলবদলে এবার সেরকম বাজেট নিয়ে নেমেছে। পিএসজির সামর্থ্য তো আছেই, ওদিকে ইতালিতে ইন্টার মিলান হতে পারে ভালো একটা অপশন। কিন্তু ২০০ মিলিয়নের বেশি ট্রান্সফার ফি এদের কেউ দেবে কিনা সেটাই প্রশ্ন।
কিন্তু মেসি বার্সা ছাড়ছেন কেন?
এক কথায় বললে এই বার্সা বোর্ডের সাথে মেসির সম্পর্ক অবনতির শেষ ধাপে। ভালভের্দেকে রাখা, নেইমারকে আনার চেষ্টা না করা, সেতিয়েনকে নিয়ে আসা- এরকম ছোট ছোট অনেক ব্যাপারে অসন্তোষ জমেছিল মেসির মনে। দুঃস্বপ্নের একটা মৌসুম শেষে তাই সিদ্ধান্তটা নিয়েছেন। এখনো শীর্ষ পর্যায়ে আরও কয়েক বছর খেলে যেতে পারেন। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে নতুন চ্যালেঞ্জ নেওয়াও একটা কারণ হতে পারে।