• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    কিক অফের আগে : রিয়ালের ধারাবাহিক হওয়ার মিশন, মিদজিল্যান্ডের দেখা অবশেষে পাচ্ছেন ক্লপ

    কিক অফের আগে : রিয়ালের ধারাবাহিক হওয়ার মিশন, মিদজিল্যান্ডের দেখা অবশেষে পাচ্ছেন ক্লপ    

    চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ ডে তিনে অপেক্ষা করছে মোট ৮টি ম্যাচ। একেক ম্যাচে গল্প একেক রকম। উল্লেখযোগ্য ম্যাচগুলো নিয়েই এই প্রিভিউ।


    হ্যাজার্ড ফিরছেন, তবে রিয়ালের স্বস্তি অন্য জায়গায়
    জিনেদিন জিদানের অধীনে রিয়াল মাদ্রিদ সবসময় একটা পথ খুঁজে পেয়েছে। যতবার বিপর্যয় ধেয়ে এসেছে ঠিক ততোবারই জিদান নতুন কোনো রাস্তা বাতলে দিয়েছেন দলকে। বার্সেলোনার বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের সবশেষ ম্যাচ জিদান জাদুর আরেকটি উদাহরণ মাত্র।

    ঘরের মাঠে কাদিজ আর শাখতার দোনেৎস্কের কাছে টানা দুই ম্যাচ হারের পর চাপে পড়ে গিয়েছিলেন জিদান। বার্সার বিপক্ষে দারুণ জয় নিমিষেই সেই চাপ উধাও করে দিয়েছে। জার্মান ক্লাব বরুশিয়া মনশেনগ্লাডবাখের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় ম্যাচের আগে এডেন হ্যাজার্ডও ফিরেছেন দলে। জিদান আর রিয়াল মাদ্রিদ তাই এক সপ্তাহের ব্যবধানে এখন অনেকটাই স্থিতিশীল।

    তবে মনশেনগ্লাডবাখকে হালকা করে দেখার উপায়ও নেই। প্রথম ম্যাচে ইন্টার মিলানকে সান সিরোতে আরেকটু হলেই হারিয়ে দিতে পারত মনশেনগ্লাডবাখ। রোমালু লুকাকুর জোড়া গোল ইন্টারকে হারের হাত থেকে রক্ষা করেছে তখন। ম্যাচ ড্র হয়েছিল ২-২ গোলে।

    হ্যাজার্ড ফেরার চেয়ে এই রিয়াল মাদ্রিদের জন্য বেশি জরুরি ছিল সার্জিও রামোসের ফেরা। রিয়ালের দুর্দান্ত অধিনায়ক ফিরেই বার্সার বিপক্ষে দলকে জয় এনে দিয়েছেন। এখন সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে ইউরোপে জয়ে ফেরাই রিয়ালের লক্ষ্য। শুধু জয় অবশ্য যথেষ্ট নাও হতে পারে জিদানের জন্য। চ্যাম্পিয়নস লিগে এর আগে কখনও গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করেনি রিয়াল। আর গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচ হারা দল কখনও শিরোপাও জেতেনি। এই সমীকরণ ভুল প্রমাণ করতে হলে ধারাবাহিক হতে হবে রিয়ালকে।

    গ্রুপের অন্য ম্যাচে ইন্টার মিলান খেলতে যাবে শাখতারের বিপক্ষে। রিয়ালের বিপক্ষে দলের নিয়মিত ১০ সদস্য ছাড়াও মাদ্রিদে এসে ৩-২ গোলের জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল শাখতার। শাখতারের বিপক্ষে ইউক্রেনে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাই আশা করতে পারে ইন্টার। এর পরের ম্যাচে তাদের খেলতে হবে রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে। শাখতারের বিপক্ষে ফল পক্ষে না গেলে গ্রুপের দুই ম্যাচ শেষেই চাপে পড়ে যেতে হবে নেরাজ্জুরিদের।



    অবশেষে মিদজিল্যান্ড যাচ্ছেন ক্লপ
    ড্যানিশ ক্লাব মিদজিল্যান্ডের বয়স মাত্র ২১ বছর। এই স্বল্প সময়েই ইউরোপে এখন নিয়মিতই জায়গা করে নিচ্ছে মিদজিল্যান্ড। তাদের সাফল্যের পেছনে আছে অন্যরকম এক গল্প। গল্পটা বিজ্ঞানের। ডাটা অ্যানালাইসিস কাজে লাগিয়ে দ্রুতই একেবারে শূন্য থেকে শিখরে পৌঁছেছে মিদজিল্যান্ড। এই প্রক্রিয়াটা ক্লপের জানা ছিল আগে থেকেই। সেটা আকৃষ্টও করেছিল তাকে। বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের চাকরি ছাড়ার পর একবার নিজ চোখে মিদজিল্যান্ড ক্লাবটা ঘুরে দেখার পরিকল্পনা করেছিলেন ক্লপ। কিন্তু লিভাপুলের কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়ে যাওয়ায় সেটা আর হয়নি। ৫ বছর চ্যাম্পিয়নস লিগের ম্যাচ খেলতেই এখন তাদের মুখোমুখি হচ্ছেন ক্লপ।

    "আমি ওদের ক্লাব নিয়ে এই গল্পগুলো অল্প-স্বল্প জানতাম। তারা আসলে বিজ্ঞানকে অন্যভাবে কাজে লাগিয়েছে। বেশ কিছু নতুন ধ্যান ধারণা নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করে দেখেছে। আমি একবার ভেবেছিলাম এই কাজগুলো ক্লাবে গিয়েই দেখব। কিন্তু এরপর লিভারপুলের প্রস্তাবটা পেয়ে গেলাম। তাই আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি।"- মিদজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগে বলেছেন ক্লপ। 

    মিদজিল্যান্ডের অনেকগুলো আবিষ্কারের ভেতর একটি ছিল থ্রো ইন কোচ। থমাস গ্রনামার্ককে নিয়োগ দিয়ে মিদজিল্যান্ড থ্রো-ইন থেকেও সেরা ফলটা বের করে আনার ছক কষেছিল। পরে সেই গ্রনামার্ক কেড়েছেন লিভারপুলের আকর্ষণ। লিভারপুলও পরে নিয়োগ দিয়েছে তাকে। তাতে থ্রো ইনে উন্নতি করেছে লিভারপুলও।

    মিদজিল্যান্ড আগের ম্যাচে আটালান্টার কাছে ৪-০ গোলে হেরেছে। এবার তাদের প্রতিপক্ষ লিভারপুল। ইংলিশ চ্যাম্পিয়নরা এই ম্যাচে থিয়াগো আলকান্তারা, নাবি কেইতা জোয়েল মাটিপদের না  পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। শেফিল্ড ইউনাইটেডের বিপক্ষে ২-১ গোলে জেতা সবশেষ ম্যাচে অবশ্য গোলবারের নিচে অ্যালিসন ফিরেছিলেন। সেটাই লিভারপুলকে অনেকখানি চাঙ্গা করেছে আগের চেয়ে।

    লিভারপুল-মিদজিল্যান্ডের ফল অনুমিত হলেও গ্রুপের অন্য ম্যাচটা দারুণ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। গতবারের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট আটালান্টা আর তার আগেরবারের সেমিফাইনালিস্ট আয়াক্সের ম্যাচে কাউকে এগিয়ে রাখাও কঠিন। জিয়ান পিয়েরো গ্যাস্পারিনির আটালান্টা এরই মধ্যে ইউরোপের অন্যতম সেরা আক্রমণাত্মক দল হিসেবে বিবেচিত হয়। আয়াক্সও বছর দুই আগে নতুন জাদুতে মুগ্ধ করেছিল, তার রেশ রয়ে গেছে এখনও। দুই দলের ম্যাচটা উপভোগ্যই হওয়ার কথা।

    এবার ছন্দ খুঁজে পাবে ম্যান সিটি?
    কিছুতেই যেন নিজেদের খুঁজে পাচ্ছে না পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। এক সপ্তাহ আগে পোর্তোর বিপক্ষে ঘরের মাঠে জয় দিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ শুরু করেছিল সিটি। কিন্তু তিনদিন পর ওয়েস্ট হামের সঙ্গে ১-১ ড্রয়ে আবার সঙ্কট ঘনীভূত হয়েছে। পোর্তোর বিপক্ষে জয়েও সিটির খেলা মন ভরাতে পারনি। প্রিমিয়ার লিগে ৫ ম্যাচে ২ জয়, ২ ড্র আর ১ হারে সিটি আছে পয়েন্ট টেবিলের ১৩ নম্বরে। ওয়েস্ট হামের বিপক্ষে ম্যাচে সার্জিও আগুয়েরো আবার চোটে পড়েছেন। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির কারণে মার্শেইয়ের বিপক্ষে খেলা হবে না তার। স্ট্রাইকার ছাড়াই তাই ফ্রান্সে যাচ্ছে সিটি। পোর্তোর বিপক্ষে চোটে পড়া ফার্নান্দিনহোও সেরে উঠতে সময় নেবেন আরও। রক্ষণ নাথান আকের খেলা নিয়েও আছে সংশয়।  

    মার্শেইয়ের বিপক্ষে ম্যাচটা তাই কোনোভাবেই সহজ হওয়ার কথা নয় সিটির।