• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    রাশফোর্ড মাঠে থাকলেন ২৭ মিনিট, করলেন হ্যাটট্রিক, গড়লেন রেকর্ড

    রাশফোর্ড মাঠে থাকলেন ২৭ মিনিট, করলেন হ্যাটট্রিক, গড়লেন রেকর্ড    

    ফুল টাইম

    ম্যান ইউনাইটেড ৫ - ০ লাইপজিগ


    পিএসজির বিপক্ষে জয়ের পর আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর ম্যান ইউনাইটেড এবার লাইপজিগকেও মাটিতে নামিয়ে এনেছে। পিএসজির মতো এই ম্যাচেও ইউনাইটেডের জয়ের নায়ক মার্কাস রাশফোর্ড। এবার বদলি হিসেবে মাঠে নেমে হ্যাটট্রিক করেছেন তিনি। তাতে ইউলিয়ান নাগেলসমানের লাইপজিগকে উড়িয়ে দিয়েছে ওলে গানার সোলশারের ম্যান ইউনাইটেড। গত চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে পিএসজির কাছে হারার পর থেকে আর কোনো ম্যাচে না হারা লাইপজিগকে পাত্তাই দেয়নি রেড ডেভিলরা। 
     


    মেসন গ্রিনউডের প্রথমার্ধের গোলে ম্যাচে এগিয়ে ছিল ইউনাইটেড। পরে ৬৩ মিনিটে রাশফোর্ডের বদলি হয়ে মাঠ ছাড়েন গ্রিনউড। ২৭ মিনিট মাঠে থেকেই হ্যাটট্রিক পূরণ করে ম্যাচে ইউনাইটেডকে বড় জয় এনে দিয়েছেন তিনি। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে বদলি হয়ে মাঠে নেমে হ্যাটট্রিক করা মাত্র পঞ্চম ফুটবলার র‍্যাশফোর্ড। আর এই ৫ জনের ভেতর সবচেয়ে পরে মাঠে নেমে হ্যাটট্রিকের রেকর্ডটিও গেছে ইংলিশ ফরোয়ার্ডের দখলে। 

    পিএসজিকে হারিয়ে আসার পর নাগেলসমানের উড়ন্ত লাইপজিগের বিপক্ষে একাদশে বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছিলেন সোলশার। র‍্যাশফোর্ডের মতো ব্রুনো ফার্নান্দেজও ছিলেন না একাদশে। তরুণ গ্রিনউডের সঙ্গে শুরু করেছিলেন অ্যান্থনি মার্শিয়াল আর ডনি ভ্যান ডি বিক। এতোগুলো পরিবর্তন নিয়েও শুরু থেকেই ছন্দ খুঁজে পাচ্ছিল ইউনাইটেড। প্রায় প্রতিটি খেলোয়াড় নিজেদের সেরাটা দিয়ে দলকে এগিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন প্রথম থেকেই।

    বল পজেশনের দিক দিয়ে প্রথমার্ধে ম্যান ইউনাইটেডের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও সেই বিষয়টি প্রতিপক্ষের রক্ষণ ভেদ করতে কাজে লাগাতে পারেনি লাইপজিগ। অনেক চেষ্টা করেও ইউনাইটেডের রক্ষণে ফাঁকফোকর বের করতে পারেনি তারা।

    অন্যদিকে ইউনাইটেড ম্যাচের ষষ্ঠ মিনিটেই প্রথম গোলের ভালো সুযোগ পেয়েছিল। বক্সের বাইরে থেকে ফ্রেডের শট দারুণ দক্ষতায় ঠেকিয়ে দেন লাইপজিগের হয়ে ইউরোপিয়ান প্রতিযোগিতায় ৫০ তম ম্যাচ খেলতে নামা হাঙ্গেরিয়ান গোলরক্ষক পিটার গুলাকসি। ম্যাচের শুরু থেকেই ইউনাইটেড মধ্যমাঠের দখল বুঝে নেয়। ম্যাচে মার্সেল সাবিতজারের অভাবে লাইপজিগ মিডফিল্ডের সমন্বয়হীনতায় পরিষ্কার হয়ে উঠেছে বারবার।

    মধ্যমাঠে প্রভাব বিস্তারের সুবাদেই ২১ মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পেয়েছে ম্যান ইউনাইটেড। পল পগবা মিডফিল্ড থেকে বল নিয়ে দারুণ এক দৌড়ে ছন্নছাড়া লাইপজিগ মিডফিল্ডকে পাশ কাটিয়ে থ্রু বল বাড়ান বক্সের দিকে যেতে থাকা গ্রিনউডের উদ্দেশ্য। বক্সে ঢুঁকে উপামেকানোকে একপাশে রেখে বাম পায়ের দারুণ প্লেসিং শটে সেখান থেকে বল জালে পাঠান গ্রিনউড।

    ম্যাচের শুরু থেকে লাইপজিগ ৪-১-৪-১ ফরমেশনে খেলছিল। মিনিট দশেক পরেই ম্যান ইউনাইটেডের রক্ষণ কাঠামো দেখে আক্রমণে জোর বাড়িয়ে ৩-১-৪-২ ফরমেশনে খেলা শুরু করে তারা। সরাসরি মাঝমাঠ দিয়ে আক্রমণে না উঠে ওয়াইড এরিয়া ব্যবহার করে আক্রমণে উঠতে চাচ্ছিল জার্মান ক্লাবটি। তবে ম্যান ইউনাইটেডের দুই ফুলব্যাক ওয়ান-বিসাকা এবং লুক শ খুব সহজেই অ্যাঞ্জেলিনো, এনকুনকুদের প্রচেষ্টাগুলো রুখে দিয়েছেন। আর মাঝমাঠ দিয়ে আক্রমণে ওঠার চেষ্টাগুলো নস্যাৎ করেছেন ফ্রেড এবং মাতিচ। আক্রমণ, রক্ষণ দুই দিকেই সমানতালে আলো ছড়িয়েছেন পগবা।

    ম্যাচের ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে যাওয়ার পর দুই দলই মধ্যমাঠে শক্তি বাড়াতে খেলোয়াড় বদল করেছে। লাইপজিগ সাবিতজারকে মাঠে নামিয়েছে, অন্যদিকে ইউনাইটেডও ব্রুনো ফার্নান্দেজ এবং স্কট ম্যাকটমিনেকে মাঠে নামিয়ে মধ্যমাঠের দখল মজবুত করার চেষ্টা করেছে।


    তবে ৬৩ মিনিটে গ্রিনউডের বদলি হিসেবে নামা মার্কাস রাশফোর্ডই ম্যাচটিকে সম্পূর্ণভাবে ম্যান ইউনাইটেডের দখলে নিয়ে এসেছেন। ৭৪ এবং ৭৮ মিনিটে তার দুই গোলেই জয় নিশ্চিত হয়েছে ইউনাইটেডের। প্রথমে নিজেদের অর্ধে ফার্নান্দেজের পাস ধরে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে গুলাকসিকে পরাস্ত করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন, সাইডলাইনে থাকা রেফারি অবশ্য সেটিকে অফসাইড ঘোষণা করেছিলেন। তবে গোলের বিল্ডআপে বল যখন রাশফোর্ডের পায়ে আসে তখন তিনি নিজেদের অর্ধে থাকাতে ভিএআর সেই সিদ্ধান্ত আমলে নেয়নি।

    ম্যান ইউনাইটেডের আক্রমণের ঝড়ে তখন দিশেহারা লাইপজিগ। বুন্দেসলিগার শীর্ষে থাকা লাইপজিগকে এদিন বেশিই বিবর্ণ মনে হয়েছে।

    দ্বিতীয় গোলের মিনিট চারেক পরেই মধ্যমাঠ থেকে বল দখলে নিয়ে রাশফোর্ডের উদ্দেশ্য বল বাড়ান ফ্রেড। খুব সহজেই উপামেকানোকে কাটিয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে বল জালে পাঠান রাশফোর্ড। ম্যাচ থেকে ছিটকে গিয়ে এরপর সর্বশক্তি দিয়ে আক্রমণে যেতে চেয়েছিল লাইপজিগ, তা করতে গিয়ে রক্ষণ অরক্ষিত হয়ে পড়ে তাদের। আর সেই সুযোগে ম্যাচের চতুর্থ গোলটি পেয়ে যায় ইউনাইটেড। ৮৭ মিনিটে অনেকটা বিনা বাধায় লাইপজিগ গোলের একেবারে সামনে এসে পড়েন মার্শিয়াল। উপায়ান্তর না দেখে তাকে সর্বশক্তি দিয়ে ঠেকাতে গিয়ে বক্সের ভেতর বাজেভাবে ট্যাকল করেন পলসেন। রেফারি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। মার্শিয়াল নিজেই পেনাল্টি নিয়ে ম্যাচে ইউনাইটেডের গোলের হালি পূর্ণ করেন।

    তবে বদলি রাশফোর্ডের তখনো গোলক্ষুধা মেটেনি। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে বাম প্রান্ত থেকে মার্শিয়ালের পাতে তুলে দেওয়া ক্রস ধরে আবারও ডান পায়ের বুলেট গতির শটে বল জালে জড়িয়ে নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন রাশফোর্ড। এই গোলের পর ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছেন রাশফোর্ড, যেখানে তার সঙ্গী শুধু বর্তমান ম্যান ইউনাইটেড ম্যানেজার সোলশার। ম্যান ইউনাইটেডের হয়ে রাশফোর্ডের আগে শুধু সোলশারই বদলি হিসেবে নেমে হ্যাটট্রিক করেছিলেন, ১৯৯৯ সালে প্রিমিয়ার লিগে নটিংহাম ফরেস্টের বিপক্ষে সেই কীর্তি গড়েছিলেন তিনি। আর ইউনাইটেডের হয়ে সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস লিগে হ্যাটট্রিক করেছিলেন রবিন ফন পার্সি, ২০১৪ সালে। 

    এই জয়ে দুই ম্যাচ থেকে পূর্ণ ছয় পয়েন্ট নিয়ে এখন গ্রুপ 'এইচের' শীর্ষে অবস্থান মজবুত করেছে ম্যান ইউনাইটেড।

    ম্যান ইউনাইটেড একাদশ

    ডি গিয়া, ওয়ান-বিসাকা, লিন্ডেলফ, মাগুয়ের, শ, মাতিচ, ফ্রেড, পগবা, ভ্যান ডি বিক, গ্রিনউড, মার্শিয়াল

    লাইপজিগ একাদশ

    গুলাকসি, হলস্টেনবার্গ, উপামেকানো, কোনাতে, অ্যাঞ্জেলিনো, কাম্পল, এনকুনকু, হেনরিখস, ফর্সবার্গ, পুলসেন, ওলমো