'নেতা' হতে অধিনায়কত্ব পেতে হয় না : তামিম ইকবাল
শেষ বিপিএলেও তামিম ইকবাল খেলেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজার নেতৃত্বে। এরপর মাশরাফি বাংলাদেশ জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়কত্বকে বিদায় বলেছেন, কোভিড-১৯ মহামারি এসেছে, বিপিএল স্থগিত হয়েছে, ক্রিকেটে ফেরার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্টস কাপের পর বিসিবি আয়োজন করছে বিপিএলের আদলে কম দল নিয়ে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ। সে টুর্নামেন্টে মাশরাফি খেলছেন না চোটের কারণে, তামিম নেতৃত্ব পেয়েছেন ফরচুন বরিশালের। এর আগে প্রেসিডেন্টস কাপেও একটা দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এক টি-টোয়েন্টি লিগ থেকে আরেকটির মাঝে তামিমের ক্যারিয়ারের একটা বাঁকবদল হয়ে গেছে তাই, অথবা বলা যায়, তার ক্যারিয়ার একটা বাঁক নেওয়ার অপেক্ষায়।
প্রেসিডেন্টস কাপে বেশ ভাল অবস্থানে থেকেও শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠতে পারেনি তামিমের দল। সেখানে অন্য সবকিছুর সঙ্গে বাড়তি নজর ছিল তার অধিনায়কত্বেও। তবে সেখানে বলেছিলেন, অধিনায়কত্ব নিয়ে সবসময়ই শেখার চেষ্টা করবেন তিনি। নেতৃত্ব পাওয়ার পর থেকেই তামিম যেটি বলে এসেছেন, এখনও বলছেন সেটিই, তার নেতৃত্বকে বিচার করতে অপেক্ষা করতে হবে-- ২০ ম্যাচ, ছয় মাস কিংবা এক বছর... আর বলছেন, 'নেতা' হতে হলে অধিনায়কত্বের দায়িত্বের প্রয়োজন নেই আলাদা করে।
“অধিনায়কত্বের চাপ-- আমি তো এখনো পর্যন্ত ওই রকম কোনো ম্যাচই খেলি নাই। ওটা প্রতিদ্বন্দীতাপূর্ণ ম্যাচ হতে হবে তো! অধিনায়কত্বের চাপ-- এটা আসলে আপনাদের বানানো”, শনিবার সাংবাদিকদের বলেছেন তামিম, “আমি এখনো কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলি নাই। আমি যেদিন অধিনায়কত্ব পেয়েছি ওই দিন বলেছি যে (আমার) অধিনায়কত্ব আপনারা বিচার করবেন ছয় মাস বা এক বছর পর। ওটা পৃথিবীর যত বড় অথবা ছোট নেতা হোক (সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য)।
তামিম : অধিনায়কত্বের চাপ-- এটা আসলে আপনাদের বানানো
“দুই ম্যাচ তিন ম্যাচ পর আপনারা শুরু করেন কী যে অধিনায়কত্ব একটা চাপ। একটা বাচ্চা হাঁটতে কিন্তু নয় মাস সময় লাগবে। একদিনে সে না হাঁঁটলে তো আপনি বলতে পারেন না (কেন হাঁটছে না)। খেলায় আমার অধিনায়কত্ব কতটা প্রভাব ফেলছে সেটা অন্তত বিশ ম্যাচ পর বিচার করবেন। দুই তিন ম্যাচ পর সেটা করতে পারেন না।”
বাংলাদেশকে এর আগে তামিম নেতৃত্ব দিয়েছেন, তবে সেসব ছিল ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব। এমনিতে পূর্ণ-মেয়াদে সহ-অধিনায়কত্বের কাজ করেছেন তামিম। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো দায়িত্ব না থাকলেও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে তাকে মাঠে নিয়মিতই সরব দেখা যায়। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটেও আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব না থাকলেও তামিম প্রায়ই থাকেন সে রূপেই। তামিমের মতে, ‘নেতা’ হওয়ার জন্য অধিনায়কত্বের প্রয়োজন নেই, “আমার কাছে যেটা মনে হয় অধিনায়কের দায়িত্ব অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে। সবার দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। আমি চেষ্টা করবো যতটুকু সম্ভব সবকিছু করার। এরপর দেখতে হবে কী হয়। এটা আমি অধিনায়ক না থাকলেও করি। আমার যে অধিনায়ক হতে হবে (তা নয়)। ‘লিডার’ আপনি যে কোনো সময়ই হতে পারেন। ভালো ‘লিডার’ হওয়ার জন্য অধিনায়কত্বের দরকার নাই। নেতা হিসেবে আপনাকে কথার চেয়ে বেশি কাজ করতে হবে।”
অধিনায়কত্বের এই ‘জাজ’ বা ‘বিচার’ করার ব্যাপারটা যে শুধু তার জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া, সেটি নয়, বরং সবার জন্যই প্রযোজ্য-- তামিম মনে করিয়ে দিচ্ছেন সেটিও, “আমার কোনো সমস্যা হয় না ভাই। আমি ওটা নিয়ে এত চিন্তাও করি না। আমি অধিনায়কত্ব (নিয়ে) যে জিনিস এটা অনেকবারই বলেছি-- এটা আমি ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখি নাই দেশের অধিনায়কত্ব করার। এখন সুযোগ এসেছে আমার কাছে। চেষ্টা করবো পুরোপুরিভাবে করতে। ভালো হবে খারাপ হবে সেটা সময় বলবে। আমি হই বা পরে যে হোক বা আগে যে ছিল-- ভালো ক্যাপ্টেন হতে হলে অনেক কিছু যদি হবে... এক সিরিজ দুই সিরিজে আপনি যদি মনে করেন যে কাজ হচ্ছে না-- এটা আসলে কারো জন্যই ভালো না। আমার জন্য, দলের জন্য, দেশের জন্য। আমার নিজের দেখে বলছি না। আমার পরে যে হবে অথবা অন্য ফরম্যাটে, আপনাকে অনেক কিছু দিতে হবে আসলে।”
জাতীয় দলের অধিনায়ক তামিমকে দেখতে অন্তত জানুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। সে সময় বাংলাদেশ সফরে আসার কথা আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।