• বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০
  • " />

     

    ঢাকাকে পিষ্ট করে ফাইনালে চট্টগ্রাম

    ঢাকাকে পিষ্ট করে ফাইনালে চট্টগ্রাম    

    বেক্সিমকো ঢাকা ১১৬ অল-আউট, ২০ ওভার (আল-আমিন ২৫, ইয়াসির ২৪, মোস্তাফিজুর ৩/৩২, শরিফুল ২/১৭, নাহিদুল ১/১৫, রাকিবুল ১/২৬)
    গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ১১৭/৩, ১৯.১ ওভার (লিটন ৪০, মিঠুন ৩৪, সৌম্য ২৭, আল-আমিন ১/৪, মুক্তার ১/২৮)
    চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে জয়ী 


    টসে জিতে ব্যাটিং, বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে দৃশ্যটা পরিচিত নয় মোটেই। টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় ম্যাচে মিনিস্টার রাজশাহীর বিপক্ষে এই কাজ করে ১৪৬ রানেই থমকে গিয়েছিল জেমকন খুলনা, হেরেছিল ৬ উইকেটে। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে এসে আবারও সেই কাজ করলো বেক্সিমকো ঢাকা, লক্ষ্য ছিল বোর্ডে রান জমা করে নক-আউটের চাপে ফেলা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে। হয়েছে উলটো, চট্টগ্রামের বিপক্ষে ঢাকা তুলতে পেরেছে ১১৬ রান, চাপে পড়ে গেছে তারাই। সেই চাপ থেকে আদতে আর বেরুতে পারেনি তারা, এমন সংগ্রহে যেমন ফিল্ডিং বা বোলিং দরকার ছিল, হয়নি সেটিও। অবশ্য বোলাররা শুরুতে কিছু সুযোগ তৈরি করলেও সেসব নিতে পারেননি ঢাকার ফিল্ডাররা। লিটন দাস, সৌম্য সরকার, মোহাম্মদ মিঠুনরা তাই আরও ঝুঁকি না নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, ৫ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে ফাইনালে চলে গেছে চট্টগ্রাম, ১৮ তারিখের ম্যাচে যারা মুখোমুখি হবে জেমকন খুলনার। 

    পাওয়ারপ্লে, মিডল ওভার বা শেষে-- ঢাকাকে চাপ আলগা করার সুযোগই দেয়নি চট্টগ্রাম। সাব্বির রহমানের সঙ্গে মুক্তার আলিকে এদিন ওপেনিংয়ে পাঠিয়েছিল ঢাকা, তবে তাদের এসব সিদ্ধান্ত কাজে আসেনি। চতুর্থ ওভারের মাঝেই ফিরেছেন এ দুজন-- প্রথমে শরিফুলকে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন সাব্বির, নাহিদুলকে তুলে মারতে গিয়ে লিডিং-এজে এক্সট্রা কাভারে ধরা পড়েছেন মুক্তার আলি। তিনে আসা নাঈম শেখ মারতে পেরেছেন শুধু একটি ছয়, মিডউইকেটে রাকিবুলের বলে তোলা তার ক্যাচ দারুণভাবে নিয়ে তাকে মুক্তি দিয়েছেন নাদিফ চৌধুরি। 


    মুশফিক ছিলেন আরও কিছুক্ষণ, ইয়াসির আলি রাব্বির সঙ্গে। মাঝে ২০ বলের বাউন্ডারি-খরা কাটিয়েছিলেন ইয়াসির, এরপর ইনসাইড-আউটে রাকিবুলকে মারা তার ছয়টা ছিল ইনিংসের অন্যতম সেরা শট। তবে সেই রাকিবুল একটু পর হাজির হয়েছেন অন্যরূপে। স্কয়ার লেগ থেকে ছুটে এসে সামনে ডাইভ দিয়ে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা ক্যাচ নিয়েছেন রাকিবুল, ৩১ বলে ২৫ রান করা ঢাকা অধিনায়ককে ফেরাতে, যিনি মোসাদ্দককে করতে গিয়েছিলেন স্লগ। এর আগে রিভার্স-সুইপের চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছিল তার, অথচ পেয়েছিলেন ফুলটস। 

    মুশফিকের উইকেটের পর আল-আমিন একটা ছয় মারলেন, ক্রিজে ইয়াসির, আকবর আলি আসতে বাকি-- ঢাকা একটু হলেও হয়তো আশা পাচ্ছিল। তবে ঠিক পরের বলেই মোস্তাফিজের বলে এজড হয়ে ফিরেছেন ইয়াসির, ইনিংসে ১০০-এর ওপর স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করা দুই ঢাকা ব্যাটসম্যানের একজন। শরিফুলের শর্ট বলে সামনে এসে খেলতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন আকবর, ঢাকার চাপ বেড়েছে আরও তাতে। 

    মোস্তাফিজের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ছয় মেরেছিলেন আল-আমিন, এরপরের দুই বলে তাকে ও নাসুমকে বোল্ড করেছেন মোস্তাফিজ, পরেরটিতে তো ভেঙেছে স্টাম্পই। ঢাকার ওপর চেপে বসা চট্টগ্রাম শেষ ওভারে দেখেছে সৌম্য সরকারের বোলিং, সে ওভারে এসেছে ৩ রান, গেছে ২ উইকেট। এর মাঝে একটি রান-আউট হলেও বোলার সৌম্য স্টাম্প ভেঙেছিলেন দারুণভাবে। 

    সেই সৌম্য যতক্ষণে কাভার থেকে সিঙ্গেল চুরি করতে গিয়ে আকবরের ডিরেক্ট থ্রোয়ের শিকার হয়েছেন, পাওয়ারপ্লেতে ৪২ রানের পর ওপেনিংয়ে ৪৪ রান তুলে ফেলেছে চট্টগ্রাম। সৌম্যর উইকেটও তাই তেমন কোনো পার্থক্য গড়েনি, মিঠুন এসে খেলেছেন ধীরলয়ে। অযাচিত আক্রমণ করতে যাননি তারা। শেষ পর্যন্ত আল-আমিনকে স্লগ করতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন লিটন, ৪৯ বলে ৪ চারে ৪০ রান করে। পরের ওভারে মুক্তার আলি একটা চারের পর আবার তুলে মারতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে বাউন্ডারিত লাইনে সাব্বিরের ভাল ক্যাচে পরিণত হয়েছেন মিঠুন, ৩৫ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ৩৪ রান করে। মিঠুনের উইকেটে যদি একটু উত্তেজনা ছড়ায়ও, নেমেই ছয় মেরে সেটি শেষ করে দিয়েছেন শামসুর রহমান। পরের ওভারে আল-আমিনের বলে সিঙ্গেল নিয়ে আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন মোসাদ্দেক হোসেন। 

    ম্যাচশেষে মুশফিকুর রহিম বলেছেন, এদিন যেভাবে খেলেছেন, ফাইনাল তাদের প্রাপ্য ছিল না। আর মিঠুন বলেছেন, টুর্নামেন্টে যেভাবে খেলেছেন, ফাইনাল খেলাটা তাদের প্রাপ্যই। এখন পর্যন্ত অবশ্য মিঠুনের সঙ্গে দ্বিমত পোষণের সুযোগও নেই। এ ম্যাচে চট্টগ্রামের পারফরম্যান্স বলছে, প্রথম কোয়ালিফায়ারের পারফরম্যান্সটা তাদের সফটওয়্যারে একটা বাগই ছিল।