মুক্তার আর ঢাকাকে ছাপিয়ে মাহাদি-রাজশাহীর গর্জন
মিনিস্টার রাজশাহী ১৬৯-৯, ২০ ওভার (মাহাদি ৫০, সোহান ৩৯, ইমন ৩৫, মুক্তার ৩/২২, রানা ১/৩১)
বেক্সিমকো ঢাকা ১৬৭-৫, ২০ ওভার (মুশফিক ৪১, আকবর ৩৪, মুক্তার ২৭*, মাহাদি ১/২২, ফরহাদ রেজা ১/৩৩)
রাজশাহী ২ রানে জয়ী
প্রথম ম্যাচের আগেই রাজশাহী পেয়েছিল দুঃসংবাদ, প্লেয়ারস ড্রাফটে তাদের প্রথম পিক মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনকে পাচ্ছে না তারা। টসে জেতা ঢাকা তাদেরকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে আরেকদফা চাপ বাড়ানোর চেষ্টা করেছিল, শুরুতে না হলেও ইনিংসের মাঝপথে সে চাপ তাদের ওপর হাজির হয়েছিল ঠিকই। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসের ১৯তম ওভারে নাগালের মধ্যে থাকা ম্যাচটা আবারও বের হয়ে যেতে ধরেছিল তাদের। দুইক্ষেত্রেই তাদেরকে উদ্ধার করলেন মাহাদি হাসান। ব্যাটিংয়ে করলেন ফিফটি, ৬ষ্ঠ উইকেটে নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে ৮৯ রানের জুটির পর বোলিংয়ে ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে নিলেন ১ উইকেট, এর মাঝে শেষটি ইনিংসের শেষ ওভার, যেখানে মাহাদি ডিফেন্ড করেছেন ৮ রান, তাও আবার একটি নো-বল করেও! বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের শুরুটা হলো দারুণ নাটকীয় এক লড়াইয়ে, যেখানে শেষ হাসি মাহাদির, রাজশাহীর।
রানতাড়ায় দুই থিতু হওয়া ব্যাটসম্যান আকবর আলি ও মুশফিকুর রহিমকে ১০ বলের ব্যবধানে হারিয়ে চাপে পড়েছিল ঢাকা। শেষ ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৩০ রান, ফরহাদ রেজার করা সে ওভারে তিন ছয়ে মুক্তার আলি রাজশাহীর কাছ থেকে ম্যাচটা প্রায় ছিনিয়েই নিয়ে গেলেন। রেজা দিলেন ২১ রান, শেষ ওভারে মাহাদির হাতে ছিল ৮ রান।
প্রথম তিন বলই মাহাদি করলেন ডট, চতুর্থ বলে আবারও ব্লকহোলে করতে গিয়ে দিয়ে ফেললেন ফুলটস। মুক্তার সে সুযোগ ছাড়লেন না, স্কয়ার লেগ দিয়ে মারলেন চার। পরের বলে আবারও ব্লকহোলে ডট, এবার স্টাম্পিংয়ে আবেদন করলেন উইকেটকিপার নুরুল হাসান সোহান। বিপত্তি ঘটলো সেটিতেই, স্টাম্পিং চেক করতে গিয়ে দেখা গেল, মাহাদির ফ্রন্টফুট ছিল পপিং ক্রিজের বাইরে, অন্তত টিভি আম্পায়ার ভাবলেন তেমনই। ডটের বদলে এক রান পেলো ঢাকা, সঙ্গে ফ্রি হিট। মুক্তারকে আবারও পরাস্ত করলেন মাহাদি, পরের বলে এক রানের বেশি নিতে দিলেন না, এরপর করে উঠলেন গর্জন।
শেষের মতো ইনিংসের প্রথম ওভারও করেছিলেন মাহাদি, দারুণ এক কাভার ড্রাইভে তানজিদ হাসান তামিম তাকে চার মেরেছিলেন প্রথম বলেই। তবে দারুণ শুরুর পরও তামিমকে ফিরতে হয়েছে রান-আউট হয়ে, ১১ বলে ১৭ রান করে। ইয়াসির রাব্বিও সুবিধা করতে পারেননি, মাহাদিকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে হয়েছেন এলবিডব্লিউ। নাঈম শেখও শুরুটা ঝড়ো করেছিলেন, তবে আরাফাত সানিকে বড় শটের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন তিনি ১৭ বলে ২৬ রান করার পর।
দুই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান-- অধিনায়ক মুশফিক ও আকবর মিলে এরপর অনেকখানি টেনেছেন ঢাকাকে। দুজনের জুটিতে উঠেছিল ৭১ রান। তবে তাদের দ্রুত উইকেট চাপে ফেলেছে ঢাকাকে। অবশ্য রান-বলের ব্যবধান কমাতে হতো তাদের। রেজাকে বড় শট খেলতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন আকবর ২৯ বলে ৩৪ করে, এবাদতকে স্কুপ করতে গিয়ে কট-বিহাইন্ড হওয়ার আগে মুশফিক ৩৪ বলে করেছেন ৪১ রান।
এর আগে আনিসুল ইসলাম ইমনের ২৩ বলে ৩৫ রানের পর মাহাদির ৩২ বলে ৫০ ও নুরুল হাসান সোহানের ২০ বলে ৩৯ রানে ভর করে ১৬৯ পর্যন্ত গিয়েছিল রাজশাহী। মাঝে ৫ বলের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেছিল তারা। রাজশাহী এতদূর গেছে মাহাদি ও সোহানের ৬ষ্ঠ উইকেটে ৮৯ রানের জুটিতে ভর করে। ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন মুক্তার আলি।
টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন ঢাকা অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, অবশ্য মিরপুরের এ উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য ছিল ভালই। বল ব্যাটে আসছিল। ৪র্থ ওভারে প্রথম ব্রেকথ্রু পেয়েছিল ঢাকা, নাসুম আহমেদের বলে ক্যাচ দিয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, ১৬ বলে ১৭ করেছেন রাজশাহী অধিনায়ক। সে ওভারেই নাসুমকে দুই ছয় মেরেছিলেন শান্ত। রনি তালুকদার মুক্তারের প্রথম শিকার-- ৮ বলে ৬ রান করে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে।
মেহেদি হাসান রানাকে দুই চারে শুরু করা আনিসুল ইসলাম ইমন ভাল কিছু শট খেলেছেন, পরে আরেকদফা টানা দুই চার মেরেছেন একই বোলারকে। নাঈমকে ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে মিস করে স্টাম্প হয়েছেন শেষ পর্যন্ত। তার এক বল আগেই নাঈমের দারুণ ক্যাচ পরিণত হয়েছেন আশরাফুল, মুক্তারের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে পয়েন্টে ধরা পড়েছেন তিনি।
ইমনের উইকেটের পর ফজলে রাব্বির রান-আউটে হুট করে চাপে পড়ে গিয়েছিল রাজশাহী, সোহান-মাহাদির দারুণ ব্যাটিং ফিরিয়ে এনেছে তাদের। নাঈমকে স্লগ করে ছয়ের পর কাট করে চার মেরে শুরু করেছিলেন মাহাদি, পরের ওভারে নাসুমকে কাভার দিয়ে ছয় মেরেছিলেন সোহান। নাঈমের তৃতীয় ও ইনিংসের ১৪তম ওভারে দুজন মিলে তুলেছিলেন ১৯ রান।
এরপর রুবেলকে চার-ছয়, সাব্বিরকে ছয়, রানাকে চারের পর সিঙ্গেল নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেছেন মাহাদি। ১৮তম ওভারে মুক্তারের বলে কট-বিহাইন্ড হওয়ার আগে নুরুল মেরেছেন ২টি চারের সঙ্গে ৩টি ছয়, রানার বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে মাহাদি মেরেছেন ৩ চার ও ৪ ছয়। ইনিংসের শেষ বলে রুবেলকে ছয় মেরে ১৬৯ পর্যন্ত রাজশাহীকে নিয়ে গেছেন ফরহাদ রেজা। ২২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন মুক্তার।
সেই রেজাকে পিষ্ট করে প্রায় নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন মুক্তার, তবে দিনটা যে মাহাদির।
আর্কাইভ- 'দ্য কিউরিয়াস কেস অফ (মেহেদি, মাহেদি, মাহাদি) হাসান'