• বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০
  • " />

     

    শেষ ৫ বলে ৪ ছয়ে বরিশালের জয় ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন 'অবিশ্বাস্য' আরিফুল

    শেষ ৫ বলে ৪ ছয়ে বরিশালের জয় ছিনিয়ে নিয়ে গেলেন 'অবিশ্বাস্য' আরিফুল    

    ফরচুন বরিশাল ১৫২-৯, ২০ ওভার (ইমন ৫১, হৃদয় ২৭, অঙ্কন ২১, শহিদুল ৪/১৭, সাকিব ১/১৮) 
    জেমকন খুলনা ১৫৫-৬, ১৯.৫ ওভার(আরিফুল ৪৮*, জহুরুল ৩১, মাহমুদউল্লাহ ১৭, সাকিব ১৫, তাসকিন ২/৩৩)
    খুলনা ৪ উইকেটে জয়ী 


    আরিফুল হক অপরাজিত ২৯ বলে ২৪ রানে। শুরু থেকে রান বের করতে ভুগছিলেন তিনি, তাকে করতে হতো অবিশ্বাস্য কিছুই। সামনে মেহেদি হাসান মিরাজ, খুলনার জয়ের জন্য প্রয়োজন ২২ রান। দিনের প্রথম ম্যাচে মিরাজের প্রায় ‘নেমসেক’ মাহাদি ডিফেন্ড করেছিলেন ৮ রান। মিরাজের প্রথম বলটা টেনে লং-অনে ছয় মারলেন আরিফুল, টাইমিং ছিল দুর্দান্ত। ওভারের প্রথম বলে ছয় সবসময়ই চাপের, সে চাপ থেকে বেরুতে পারলেন না মিরাজ। তার জোরের ওপর করা ডেলিভারিগুলিতে আরও জোরের ওপর ব্যাট চালালেন এরপর আরিফুল। দ্বিতীয় বলেও ছয়। তৃতীয় বলে লং-অফে গেল বল, তবে সিঙ্গেল নিলেন না আরিফুল। অথচ নন-স্ট্রাইক প্রান্তে তখন শহিদুল ইসলাম, আগের ওভারে তাসকিন আহমেদের শেষ বলে ছয় মেরে যিনি কার্যত খুলনার অবিশ্বাস্য আশাটা বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তবে আরিফুল আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে তখন, চতুর্থ বলে কাউ-কর্নার, পঞ্চম বলে মিডউইকেট দিয়ে ছয় মেরে খেল খতম করে দিলেন। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে প্রথম দিনের দ্বিতীয় ম্যাচও দেখলো রোমাঞ্চ। 

    অথচ একসময় শামিম হোসেনের উইকেটটি মনে হচ্ছিল খুলনার কফিনের শেষ পেরেক। সুমন খানের বাইরের বলে ১৮ বলে ২৬ রান করা শামিম ক্যাচ দেওয়ার পর খুলনার প্রয়োজন ছিল ১৪ বলে ৩১ রান, তাসকিন ১৯তম ওভারে প্রথম ৫ বলে দিলেন এরপর মাত্র ১। তার শেষ বলে শহিদুল মারলেন ছয়, আরিফুলকে হয়তো উজ্জীবিত করলো সেটিই! 

    রানতাড়ায় ইনিংসের প্রথম ওভারই ছিল ঘটনাবহুল। তাসকিনের দ্বিতীয় বলে চার মেরেছিলেন এনামুল বিজয়, পরের বলে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অনে দিয়েছেন ক্যাচ। এরপরের বলেই ইমরুল বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে এজড। শেষ বলে রিয়াদ স্টিয়ার করে চার মেরেছেন, যেন খুলনাকে আশা জোগালেন সবকিছু শান্ত করার। 

    মাহমুদউল্লাহর আগেই ক্রিজে এসেছেন সাকিব, খুলনার অনেক কিছু নির্ভর করছিল এ দুজনের ওপর। দুজন করছিলেন দায়িত্বশীল ব্যাটিং-ই। তবে ৫ বলের ব্যবধানে ফিরলেন দুজন-- মিরাজের ফ্লোটারে মাহমুদউল্লাহ লং-অনে, সুমনের শর্ট অফ আ লেংথ থেকে তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিলেন সাকিব। ৬ ওভারে ৩৭ রান তুলতেই ৪ উইকেট নেই, এরপর জহুরুল-আরিফুলের জুটিতে উঠলো ৪২ রান। তবে সেখানেও যা করার করলেন জহুরুলই। 


    আরিফুল হকের এক রাত... 


    কামরুল ইসলাম রাব্বির স্লোয়ারে ভেঙেছে সে জুটি, এজড হয়ে ফিরেছেন জহুরুল। এরপর শামিম হোসেন নেমে দেখাচ্ছিলেন তার হিটিং সামর্থ্য, তবে অতি-চেষ্টা সফল হয়নি তার শেষ পর্যন্ত। এরপর যদি খুলনার সব শেষ ভেবে থাকেন কেউ, নিশ্চিতভাবেই তিনি ভুল ভেবেছেন! 

    তবে আগে ব্যাটিং করা বরিশালের ১৫২ রানের স্কোরটাকেই মনে হচ্ছিল একটু ‘ট্রিকি’। ঠিক কমও নয়, আবার বরিশাল হয়তো করতে পারত আরেকটু বেশি-- এমন। পারভেজ হোসেন ইমনের ৪২ বলে ৫১ রানের ইনিংসে একটা ভিত দিয়েছিলেন, তবে তার ওপর দিয়ে দাঁড়িয়ে ১৫২ রানের বেশি তুলতে পারেনি ফরচুন বরিশাল। খুলনার বিপক্ষে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বরিশালকে আটকে দেওয়ার মূল কাজ করেছেন শহিদুল ইসলাম, শেষদিকে ৪ বলের ব্যবধানে তিনি নিয়েছেন ৩ উইকেট। ৪০৯ দিন পর খেলতে নামা সাকিব ৩ ওভারে ১৮ রানে দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। 

    টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনার শুরুটা হয়েছিল বীভৎস। তামিম ‘আউট অফ দ্য বক্স’ ক্রিকেটের কথা বলেছিলেন, একেবারে নতুন কিছু না হলেও তার ওপেনিং সঙ্গী ছিলেন অনিয়মিত একজন- মেহেদি হাসান মিরাজ। তবে ইনিংসের প্রথম বলেই শফিউল ইসলামের বাড়তি বাউন্সে ভড়কে গিয়ে ক্যাচ তুলেছেন তিনি। অবশ্য সে ওভারেই শফিউলকে একটা ছয় মেরেছিলেন পারভেজ হোসেন ইমন। তামিম প্রথম স্ট্রাইক পেয়েছেন ইনিংসের ৯ম বলে গিয়ে। 

    ৩টা চার মেরেছেন তামিম, তবে তাকে অতি-আক্রমণাত্মক হওয়ার চেষ্টায় শহিদুলকে স্টাম্প ছেড়ে মারতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ দেওয়ার করেছেন সমানসংখ্যক বলে ১৫ রান। ৭ম ওভারে প্রথম বোলিং করতে আসা সাকিব নিজের দ্বিতীয় ওভারে সফল হয়েছেন-- আফিফ হোসেন তার মোটামুটি হাফট্র্যাকারে তুলেছেন ক্যাচ। 

    তৌহিদ হৃদয় ও পারভেজ হোসেন ইমন এরপর একটা ভিত গড়ার চেষ্টা করেছেন, দুজন মিলে ২০ বলে তুলেছিলেন ৩২ রান। ইমন খেলেছেন দারুণ কিছু শট, স্লগ করে সাকিবকে পাঠিয়েছিলেন কাউ কর্নারের গ্যালারিতেও। শহিদুলকে দারুণ টাইমিংয়ে চার মেরেছিলেন একটা। ১২তম ওভারে হাসানকে পুল করতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে ফাইন লেগে ধরা পড়ার আগে ৪টি ছয়ের সঙ্গে মেরেছেন ৩টি ছয়। 

    ইরফান শুক্কুর খোলস ছেড়ে বেরুতে পারেননি, শফিউলের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে সোজা ধরা পড়েছেন কাভারে, সমানসংখ্যক বলে ১১ রান করে। অঙ্কন তার ১০ বলে ২১ রানের ক্যামিওতে মেরেছেন ৩টি ছয়, আল-আমিনকে একটির পর হাসানের পরপর দুই বলে দুইটি- একটা স্কুপ, পরেরটি স্লগ করে। 

    তবে শহিদুলের করা ১৯তম ওভারে যাওয়া-আসার খেলায় মেতেছিলেন বরিশাল ব্যাটসম্যানরা। বিপ্লব লং-অফে, এতক্ষণ আটকে থাকা হৃদয় মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন পরপর দুই বলে, এক বল পর সুমন খান স্লগ করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন মিড-অফে। হুট করে মনে হচ্ছিল, সেটিই বোধহয় শেষ ওভার। আদতেই যে শেষ ওভার, সেটিতে তাসকিন হাসানকে মেরেছেন চার-ছয়। তার ৫ বলে ১২ রানের ছোট ওই ইনিংসেই দেড়শ পেরিয়েছে বরিশাল।  

    ১৯তম ওভার শেষে যে স্কোর মনে হচ্ছিল যথেষ্টর চেয়েও বেশি কিছু। কিন্তু আরিফুলের মনে যে ছিল অন্য কিছু।