ঢাকাকে নিয়ে ছেলেখেলা করলো চট্টগ্রাম
বেক্সিমকো ঢাকা ৮৮ অল-আউট, ১৬.২ ওভার (নাঈম ৪০, আকবর ১৫, মুক্তার ১৩, শরিফুল ২/১০, মোস্তাফিজুর ২/১৩, মোসাদ্দেক ২/৯)
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ৯০/১, ১০.৫ ওভার (সৌম্য ৪৪*, লিটন ৩৪, নাসুম ১/৫)
চট্টগ্রাম ৯ উইকেটে জয়ী
ছেলেখেলা। ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রামের ম্যাচটিকে আর কিইবা বলা যায়! বোলারদের সমন্বিত পারফরম্যান্সে বেক্সিমকো ঢাকাকে ৮৮ রান গুটিয়ে দেওয়ার পর সৌম্য সরকার, লিটন দাসের ওপেনিং জুটিতেই ৭৯ রান তোলার পর ৯ উইকেটে জিতেছে গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম। দিনশেষে পরের ইনিংসে ঢাকার একমাত্র সান্ত্বনা হতে পারে, চট্টগ্রামকে ১০ উইকেটে জিততে না দেওয়া।
এর আগে ব্যাটিংয়েও চিত্রটা মোটামুটি একইরকম। একজন একাই ২৩ বলে করেছেন ৪০, বাকি দশজন মিলে ৩৯ রান, ৯ অতিরিক্ত। অন্যদলে যিনিই বোলিং করতে এসেছেন পেয়েছেন উইকেট। ঢাকার নাঈম শেখ এক উইকেটে বা কন্ডিশনে, অন্য ব্যাটসম্যানরা যেন ব্যাটিং করলেন অন্য কোথাও। নাঈম শেখ একাই মেরেছেন ৩টি করে চার ও ছয়, ঢাকার বাকি সব ব্যাটসম্যান মিলিয়ে আর ৩টি বাউন্ডারি। চট্টগ্রামের শরিফুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন ও তাইজুল ইসলাম নিয়েছেন ২টি করে উইকেট, বাকি দুটি নিয়েছেন নাহিদুল ইসলাম ও সৌম্য সরকার। দুই বাঁহাতি পেসার শরিফুল ও মোস্তাফিজ নিয়েছেন একটি করে মেইডেনও। এই স্কোরকার্ডে শুধু একটি রান-আউটের অভাববোধ কেউ করতেই পারেন!
৮৮ রানে গুটিয়ে যাওয়া ঢাকা লড়াইয়ের ল-টাও করতে পারেনি এরপর লিটন-সৌম্যর সামনে। দুজনের ওপেনিং জুটি ভেঙেছে ১০ম ওভারে গিয়ে, নাসুমকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ৩৩ বলে ৩৪ রান করা লিটন। দুজনের জুটিতে শুধু আবু হায়দার রনির করা ৮ম ওভার ছাড়া প্রতিটিতেই হয়েছে বাউন্ডারি। লিটন ফিরলেও ছিলেন সৌম্য, ২৯ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত। তার টাইমিং ছিল দুর্দান্ত, ৪টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ২টি ছয়। লিটন চার মেরেছেন ৩টি, সঙ্গে একটি ছয়।
ঢাকার নাঈম বুঝছেন না যেন, কী ঘটল। চট্টগ্রামের বিপক্ষে তার দলের অবস্থাও তেমনই।
দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন চট্টগ্রাম অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন। নাহিদকে দিয়ে প্রথম ওভার করানোর পর মিঠুন আনলেন শরিফুলকে, তার বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে ফিরলেন তানজিদ হাসান তামিম। তিনে উঠে আসা সাব্বির রহমান ভুগলেনই শুধু, ১০ বলে কোনও রান না করা তার মুক্তি মিললো শরিফুলকে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে।
মুশফিকুর রহিমও ডাক মারলেন, তবে সাব্বিরের মতো এতো বল খেললেন না তিনি। মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই নাহিদকে রিভার্স-সুইপ করার সাহসী প্রচেষ্টা তার ব্যর্থ হলো স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ধরা পড়ে। আকবর নামলেন, বেশ বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে বড় এজে পেলেন চার।
তিনিই নাঈমকে একটু সঙ্গ দিতে পেরেছেন। এর আগেই শরিফুলকে দুই চার মারা নাঈম এবার মোস্তাফিজকে ওয়াইড লং-অনে ছয়ের আগে কাভার দিয়ে মারলেন দারুণ এক চার। তাইজুলের প্রথম দুই বলেই নাঈম মারলেন আরও দুই ছয়, প্রথমটা মিডউইকেট দিয়ে, পরেরটা লং-অন দিয়ে।
তবে নাঈমের সেই একলা চলো রে ধরনের ইনিংসটাও শেষ হলো, মোসাদ্দেকের দ্বিতীয় ওভারে। তবে আকবরের সঙ্গে জুটিটা ভেঙেছে আগেই, মোসাদ্দেকের স্টাম্পসোজা বলে কাট করতে গিয়েছিলেন ১৩ বলে ১৫ রান করা আকবর। এরপর ভেতরের দিকে ঢোকা বলটা নাঈমের প্যাডের পর ভাঙলো স্টাম্প। ঢাকার ভাঙার কাজটাও এগিয়ে গেল আরেকধাপ। মোসাদ্দেকের সেই এক ওভারই মূলত হয়ে থেকেছে ঢাকার জন্য সবচেয়ে বড় আঘাত।
শাহাদাত হোসেন দিপু ঝুলে ছিলেন, মোস্তাফিজের শর্ট বলে পুল করার পরই বুঝলেন তিনি কী ঘটতে চলেছে। আবু হায়দার রনি এর আগেই এলবিডব্লিউউ হয়েছেন তাইজুলের বলে। নাসুম সৌম্যর শিকার, তাইজুলকে উড়ে মারতে গিয়ে বোল্ড রুবেল। আর মোস্তাফিজকে স্লগ করতে গিয়ে কাভারে ক্যাচ তুলেছেন মুক্তার। সে ক্যাচ বারকয়েকের চেষ্টায় নিয়েছেন মুমিনুল।
সেই মুমিনুলই যখন চার মেরে ম্যাচ শেষ করলেন, ততক্ষণে পিষ্ট হয়েছে ঢাকা।