• বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০
  • " />

     

    মিরপুরের থ্রিলারের পর রাজশাহীকে দিয়ে চট্টগ্রামের চক্রপূরণ

    মিরপুরের থ্রিলারের পর রাজশাহীকে দিয়ে চট্টগ্রামের চক্রপূরণ    

    গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ১৭৬/৫, ২০ ওভার (লিটন ৭৮*, মোসাদ্দেক ৪২, সৌম্য ৩৪, মুগ্ধ ৩/৩০, ইমন ১/২২)
    মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী ১৭৫/৭, (ইমন ৫৮, শান্ত ২৫, মাহাদি ২৫, মোস্তাফিজ ৩/৩৭, শরিফুল ২/৪১)
    চট্টগ্রাম ১ রানে জয়ী 


    রোমাঞ্চ জাগিয়ে, চট্টগ্রামকে প্রবল শঙ্কার চোরাস্রোতে ফেলেও শেষ পর্যন্ত পারলো না রাজশাহী। ১৭৬ রানতাড়ায় শেষ বলে গিয়ে ১ রানের ব্যবধানে থামতে হলো তাদের। লিটন দাসের ৫৩ বলে অপরাজিত ৭৮-এর সঙ্গে মোসাদ্দেক হোসেনের ২৮ বলে ৪২ ও সৌম্য সরকারের ২৫ বলে ৩৪ রানে ভর করে টুর্নামেন্ট-সর্বোচ্চ ১৭৬ রান তোলা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম থাকল নিরাপদই। শেষ ৩ বলে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ১৪ রান, চতুর্থ ও পঞ্চম বলে যথাক্রমে একটা ক্লিন-হিটে ছয়, ইনসাইড-এজে চারের পর শেষ বলে ২ রানের বেশি নিতে পারলেন না রনি তালুকদার। ফলে চট্টগ্রাম নিজেদের প্রথম চার ম্যাচে হারালো টুর্নামেন্টের বাকি চার দলকেই, হলো চক্রপূরণ। 

    ১৭৭ রানতাড়ায় শেষ ১৪ বলে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৩৩ রান। ১৮তম ওভারের পঞ্চম বলে মোস্তাফিজকে ছয় মেরে আশা জোগালেন নুরুল, এরপর শরিফুলকে চার-ছয় রেজা। তবে রেজা ফিরলেন লো-ফুলটসে লং-অনে ধরা পড়ে, শেষ ওভারের প্রথম বলে নুরুল মোস্তাফিজের বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে। এরপরের দুই বল ডট দিলেন রনি, ৪র্থ বলে মারলেন লং-অন দিয়ে ছয়। পরের ইনসাইড-এজটা ফাঁকি দিল লিটনকে, একটু আগেও কঠিন সমীকরণটা এসে দাঁড়ালো একটা শটের ব্যবধানে। যেটি হলো না শেষ পর্যন্ত। 

    রাজশাহীকে শুরুতে আশা দিয়েছিলেন শান্ত-ইমন। পাওয়ারপ্লের প্রথম ৫ ওভারেই দুজন তুলে ফেলেছিলেন ৫১, এর মাঝে নাহিদুলের করা তৃতীয় ওভারে এসেছিল ১৮, শান্ত মেরেছিলেন দুই ছয়। তবে ৬ষ্ঠ ওভারে ছন্দপতন হলো, মোস্তাফিজ এসেই ব্রেকথ্রু দেওয়াতে। ডাউন দ্য লেগের বলে এজড হওয়ার আগে শান্ত করেছেন ১৪ বলে ২৫। 

    মাঝে ২ ওভার আঁটসাঁট যাওয়ার পর আবারও শেকল ভেঙেছিলেন ইমন, তাইজুলকে একটা ছয় মেরে। আশরাফুল স্ট্রাইক বদলের দিকেই মনযোগী ছিলেন বেশি বড় শটের চেয়ে। একবার জীবন পেলেন মোসাদ্দেকের বলে ক্যাচ তুলেও সৈকত মিস করায়, সে বলে ওভারথ্রো থেকে ছয় রানও পেলেন। তবে সে ওভারেই সুইপের চেষ্টায় টপ-এজড হয়ে ফিরতে হয়েছে তাকে, ১৯ বলে ২০ রান করার পর। ইমন ফিফটি পেয়েছিলেন ৩৫ বলে, তবে শেষদিকে গতি কমে এসেছিল তার। ফিফটির পর ৯ বলে করেছেন ৭ রান, জিয়াকে আড়াড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন ৪৪ বলে ৬ চার ও ১ ছয়ে ৫৮ রান করে। 
     


    শেষ ৬ ওভারে রাজশাহীর প্রয়োজন ছিল ৬৯ রান। তাইজুলকে প্রথম দুই বলেই চার, এরপর মোস্তাফিজকে ছয় মেরে আশা জুগিয়েছিলেন মাহাদি। শরিফুলের বলে স্কুপ করতে গিয়ে মিস করে এলবিডব্লিউ হয়েছেন তিনি, রিভিউ নিয়েও বদলাতে পারেননি তানভির আহমেদের সিদ্ধান্তটা। পরের বলে মোস্তাফিজের শিকার ফজলে রাব্বি, যিনি আগের ওভারে মেরেছিলেন একটি ছয়। মাহাদি পারলেন না, রাব্বি পারলেন না, এরপর সোহান বা রনিও তাই। 

    এর আগে টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার রীতি এদিনও ভাঙেননি রাজশাহী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, প্রথম ম্যাচে লো-স্কোরিং লড়াই হয়তো আরও উদ্বুদ্ধ করেছিল তাকে। তবে লিটন-সৌম্যর ওপেনিং জুটি বেশ হতাশ করল তাদের। মাহাদির প্রথম ওভারে দুই চারের পরের ওভারে এবাদতকে আরও দুই চার-- সৌম্য ইনফ্রন্ট অফ স্কয়ারকে নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিলেন। এরপর যোগ দিয়েছেন লিটন, মাহাদিকে দুই চারের পর ফরহাদ রেজাকে মেরেছিলেন টানা তিন চার, সে ওভারেই সৌম্য রেজাকে মেরেছিলেন ছয়। চতুর্থ ও পঞ্চম ওভারে আরাফাত সানি ও এবাদত মিলে দিয়েছিলেন মাত্র ৫, তবুও পাওয়ারপ্লেতে চট্টগ্রাম তুলেছে ৫৪। 

    সৌম্য এর মাঝে বারদুয়েক বেঁচেছেন, প্রথমে রনি তালুকদার ক্যাচ নিয়েও সীমানাদড়ি স্পর্শ করে ফেলেছিলেন, আর ফজলে রাব্বি ভারসাম্য রাখতে না পেরে ক্যাচ ছেড়ে বাউন্ডারি বাঁচিয়েছিলেন। অবশেষে মুকিদুল ইসলামকে টেনে মারতে গিয়ে লং-অনে ধরা পড়েছেন সৌম্য, ভেঙেছে ৬২ রানের ওপেনিং জুটি। 

    এরপরের সময়ে চট্টগ্রাম এগিয়েছে ধীরলয়ে, উইকেট হারিয়েছে স্কুপ-রোগে আক্রান্ত হয়ে। অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন ও শামসুর রহমান-- যথাক্রমে আনিসুল ইসলাম ইমন ও রেজার ফুললেংথের বলে স্কুপ করতে গিয়ে হয়েছেন বোল্ড। 

    মোসাদ্দেক হোসেনও নেমে শান্তই ছিলেন, প্রথম ১৪ বলে করেছিলেন সমানসংখ্যক রান। ইমনকে ছয় মেরে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এলেন, এরপরের ১৪ বলে করলেন দ্বিগুণ রান। ২টি করে চার ও ছয়ের পর শেষ ওভারে গিয়ে মুগ্ধর শিকার তিনি। শেষ বলে ফিরেছেন সৈকত আলিও, যেটি মুগ্ধর তৃতীয় উইকেট। 

    তবে শেষ পর্যন্ত অপরাজিতই ছিলেন লিটন। মাঝের সময়ে একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন তিনি, ইনিংসের পেসও বদলেছেন দারুণভাবে। ৩৫ বলে ফিফটি করেছেন, ইনিংসে ১টি ছয়ের বিপরীতে মেরেছেন ৯টি চার। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে এটি ১২তম ফিফটি তার, এর আগে বঙ্গবন্ধু বিপিএলে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে করেছিলেন তার আগের সর্বোচ্চ ৭৫।