• বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০
  • " />

     

    ইমনের সেঞ্চুরিতে রাজশাহীর ২২০ টপকে বরিশালের 'আউট অফ দ্য বক্স' রেকর্ড জয়

    ইমনের সেঞ্চুরিতে রাজশাহীর ২২০ টপকে বরিশালের 'আউট অফ দ্য বক্স' রেকর্ড জয়    

    মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী ২২০/৭, ২০ ওভার (শান্ত ১০৯, ইমন ৬৯, রাব্বি ৪/৪৯, সুমন ২/৪৩)
    ফরচুন বরিশাল ২২১/২, ১৮.১ ওভার (ইমন ১০০*, তামিম ৫৭, সাইফ ২৭, আফিফ ২৬*)
    বরিশাল ৮ উইকেটে জয়ী


    টুর্নামেন্ট শুরুর আগে তামিম ইকবাল বলেছিলেন, ‘আউট অফ দ্য বক্স’ কিছু করতে হবে তাদের, এই দল নিয়ে এগুতে হলে। সেই দল এই ম্যাচে এলো এমন অবস্থায়, যেখানে জয়ের আদতে তেমন বিকল্প নেই। টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়ে খেই হারিয়ে ফেললেন ফরচুন বরিশাল বোলাররা, ইনিংসের মাঝপথেই সেরা বোলার চলে গেলেন স্ট্রেচারে করে বাইরে। বিপক্ষ দলের তরুণ ওপেনারের ঝড়ো ফিফটি, অধিনায়কের সেঞ্চুরিতে সামনে এলো ২২১ রানের লক্ষ্য, যে রান বাংলাদেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টিতে এর আগে তাড়া করেনি কোনও দল। তবে বরিশাল দমলো না। ঠিক প্রথম বলেই সাইফউদ্দিনকে মারা সাইফ হাসানের বাউন্ডারির পর থেকে যে পালটা তান্ডব শুরু হলো, সেটি থামলো তাদের ইতিহাসগড়া জয়ে ‘আউট অফ দ্য বক্স’ নায়ক পারভেজ হোসেন ইমনের ৪২ বলে অপরাজিত ১০০ রানে। মাঝে তামিম করলেন পরিস্থিতি বিবেচনায় দারুণ এক ফিফটি, আফিফ হোসেন অপরাজিত থাকলেন ১৬ বলে ২৬ রানে অপরাজিত।

    দুই দলের বোলাররাই লাইন-লেংথ নিয়ে ভুগেছেন, স্বাভাবিকভাবেই পিচের আচরণও মোটামুটি একই ছিল, যেখানে ব্যাটিংটা উপভোগ করেছেন ব্যাটসম্যানরা। এক ম্যাচ তাই দেখলো দুই সেঞ্চুরি, দুই ফিফটি, ৪৪১ রান (এবং একটি হ্যাটট্রিক), ২৮ ছয়-- রানের হিসেবে এ টুর্নামেন্টে যা কিছু রেকর্ড ছিল, মোটামুটি সবই ভেঙে গেল এ ম্যাচে। তবে বরিশালের ইনিংসের সমীকরণে ছিল সবচেয়ে বড় একটা চলক-- চাপ। অবশ্য রানতাড়ায় একেবারে শুরু থেকেই বরিশাল দেখালো, আদতে সমানতালে আক্রমণ করে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই তাদের এবং সেটিই করতে চান তারা। প্রথমে সাইফ হাসান দারুণ সব শট খেললেন, ৫ম ওভারে সাইফউদ্দিনের বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে তিনি করেছেন ১৫ বলে ২৭ রান। পাওয়ারপ্লেতে রাজশাহীর ৬৪ ছাপিয়ে বরিশাল তুলেছে ৬৭ রান।
     


    ২৩ রানে তামিমকে একটা জীবন দিয়েছেন ফজলে রাব্বি, থার্ডম্যানে। ম্যাচের বিবেচনায় সেটির বড় মাশুলই গুণতে হয়েছে তাদের। ফরহাদ রেজার করা ৮ম ও ১৩তম-- এ ২ ওভারে তামিম-ইমন মিলে তুলেছেন ৪২ রান, বরিশালকে আত্মবিশ্বাসের চূড়ায় নিয়ে গেছে যেন এসব। সঙ্গে ছিল মাহাদি হাসানের করা ১০ম ওভার, যেখানে তিনি করেছেন টানা ৪ ওয়াইডসহ ১১ ডেলিভারি। প্রথম বলে আম্পায়ার দিয়েছিলেন ওয়াইড, স্টাম্পিং চেক করতে গিয়ে সেটি হয়েছে নো-- বরিশালের পক্ষে গেছে সবকিছুই। 

    ১৪তম ওভারে ডাবলস চুরি করতে রান-আউট হয়ে ফিরেছেন ৩৭ বলে ৫৭ রান করা তামিম, তবে ততক্ষণে ইমনের ব্যাটিং হয়ে দাঁড়িয়েছে এমনই দাপুটে, বরিশাল পেছন ফিরে তাকায়নি একবারও। তামিমের সঙ্গে ১১৭ রানের জুটি ছিল তার, এরপর আফিফকে নিয়ে ১১ বল আগেই ম্যাচ শেষ করার আগে যোগ করেছেন আরও ৬০ রান। রেজাকে ছয়-ছয়-চার-ছয়ের অনুক্রমের দ্বিতীয় ছয় দিয়ে ২৫ বলে ফিফটি পূর্ণ হয়েছে ইমনের, পরের ফিফটিতে যেতে খেলেছেন মাত্র ১৭ বল। ৭টি ছয় যেমন মেরেছেন, বিপরীতে মেরেছেন ৯টি ছয়ও। শেষে গিয়ে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৪, তার সেঞ্চুরির জন্যও তাই। ইমনকে কাভার দিয়ে চার মেরে দুটিই সেরেছেন ইমন, এরপর মেতেছেন উল্লাসে। 

    অথচ প্রথম ইনিংসে গর্জন করেছিলেন শান্ত। তখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টে পাওয়ারপ্লেতে সর্বোচ্চ স্কোর, ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ স্কোর, যে কোনও উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি-- রাজশাহী যেন খেলছিল বরিশালকে নিয়ে। নাজমুল হোসেন শান্তর ৫৪ বলে ১০৯, আনিসুল ইসলাম ইমনের ৩৯ বলে ৬৯ এবং এ দুজনের ১৩১ রানের ওপেনিং জুটি তাদেরকে নিয়ে গিয়েছিল বহুদূর। 

    টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন বরিশাল অধিনায়ক তামিম ইকবাল, প্রথম ২ ওভার ছিল তাদের পক্ষেই। তবে তৃতীয় ওভার থেকে সে সিদ্ধান্তকে বুড়ো আঙুল দেখানো শুরু করেছিলেন আনিসুল ইসলাম ইমন। সুমন খানকে টানা তিন চার মেরেছিলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ ওভারে উঠেছিল ৩০ রান। ৫ম ওভারে আবু জায়েদ রাহি চাপ তৈরি করেছিলেন, কামরুল ইসলাম রাব্বি এসে সেসব মিলিয়ে দিয়েছেন। ৭ম ওভারে রাহি আবারও লাগাম টেনেছিলেন, তাসকিন পরের ওভারে সেটি ধরে রাখতে পারেননি। ৯ম ওভারের দ্বিতীয় বলটা করার সময় মাংসপেশির টানে স্ট্রেচারে করে মাঠ ছাড়তে হয়েছে রাহিকে, রাজশাহী এরপর বরিশালের ওপর চালিয়েছে তান্ডব। পুরো ইনিংসজুড়েই বরিশাল বোলাররা লেংথ বা লাইন খুঁজে পাননি, হয় বেশি ওয়াইড, অথবা বেশি শর্ট অথবা বেশি ফুললেংথে গেছেন তারা। বিপরীতে ইমন, শান্ত কিংবা রাজশাহীর পরের ব্যাটসম্যানরাও দুহাতে সেসব সুযোগ নিয়েছেন, হিটিং আর প্লেসমেন্টে তারা ছিলেন দুর্দান্ত। 


    প্রথমদিকে শান্ত ছিলেন চুপচাপ, ইমনের সঙ্গীর ভূমিকাই পালন করছিলেন তিনি। প্রথম ১২ বলে করেছিলেন ৭ রান, প্রথম ১৯ বলে সমানসংখ্যক রান। ইমন যতক্ষণে ২৫ বলে ফিফটি পূর্ণ করেছেন, শান্ত ততক্ষণে চলে গেছেন ২৬ বলে ৩৭ রানে। প্রথম ১০ ওভারে ১০৭ রান তুলেছিলেন দুজন, প্রথম ব্রেকথ্রু ১৩তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছিল বরিশালকে। সুমনের বাইরের বলে স্ল্যাশ করতে গিয়ে পয়েন্টে আফিফের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ইমন করেছেন ৩৯ বলে ৬৯, ৭টি চারের সঙ্গে ৩টি ছয়। 

    ইমনকে থামালেও শান্তকে শীঘ্রই থামাতে পারেনি বরিশাল। ৩২ বলে ফিফটি করেছেন, পরের ফিফটিতে গেছেন মাত্র ২০ বলে। এর মাঝে আফিফকে এক ওভারেই মেরেছেন ৩ ছয়। নব্বই পেরিয়ে একটু ধীরগতির ছিলেন তুলনামূলক, ১৭ ও ১৮তম ওভারে বরিশাল দিয়েছিল মাত্র ৯ রান, নিয়েছিল ২ উইকেট। সুমনের দারুণ ফিরতি ক্যাচে রনি তালুকদার ফেরার পরের বলেই মাহাদি হয়েছেন রান-আউট। 

    তবে ১৯তম ওভারে আবারও রাজশাহীকে নিয়ে আরেকটি লাফ দিয়েছেন শান্ত ও সোহান, তাসকিনের সে ওভারে এসেছে ৩টি ছয়। এর মাঝে প্রথমটি দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়েছে শান্তর, শেষ বঙ্গবন্ধু বিপিএলে করেছিলেন প্রথমটি। শেষ ওভারে গিয়ে ৪টি চারের সঙ্গে বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানের রেকর্ড ১১ ছয় মেরে শান্ত ফিরেছেন রাব্বির বলে তামিমের হাতে কাভারে ক্যাচ দিয়ে। শান্তর আগে নুরুল আর পরে রেজার উইকেট দিয়ে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছেন রাব্বি, এক বল বাদে সাইফউদ্দিনের উইকেট দিয়ে টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে ৫ বলে ৪ উইকেট নেওয়া ৬ষ্ঠ বোলার হয়ে গেছেন তিনি।