• বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ ২০২০
  • " />

     

    মিরপুরের কুয়াশায় শেষ বলের ছয়ে চট্টগ্রামের নায়ক শামসুর

    মিরপুরের কুয়াশায় শেষ বলের ছয়ে চট্টগ্রামের নায়ক শামসুর    

    জেমকন খুলনা ১৫৭/৯, ২০ ওভার (শুভাগত ৩২*, মাহমুদউল্লাহ ২৬, ইমরুল ২৪, শরিফুল ৩/৩৪, মোস্তাফিজুর ২/৩৬, রাকিবুল ০/২৩, মোসাদ্দেক ১/২৩, জিয়াউর ১/১৮)
    গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ১৬২/৭, ২০ ওভার (শামসুর ৪৫*, মাহমুদুল ২৪, নাহিদুল ১৮, সাকিব ২/৩০, শুভাগত ২/৩৪, মাশরাফি ১/২৮)
    চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে জয়ী 


    কুয়াশাচ্ছন্ন মিরপুরে শামসুর রহমানের শেষ বলের ছয়ে খুলনাকে টপকে গেছে চট্টগ্রাম। আল-আমিন হোসেনের করা সেই বলে চট্টগ্রামের প্রয়োজন ছিল ২ রান, সেটিতে স্লগ করেছেন শামসুর। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স যে ম্যাচে খুব বেশি আলাদা করা যাচ্ছে না, সেখানে তিনি অপরাজিত ছিলেন ৩০ বলে ৪৫ রানে, ৫টি চার ও শেষ বলের ওই ছয়ে। টেবিলের শীর্ষ দুই দলের লড়াইয়ে শেষের কয়েক ওভারের নাটকের পর শেষ হাসি তাই চট্টগ্রামেরই, ২ ম্যাচ বাকি রেখে যাদের পয়েন্ট এখন ১০। ১ ম্যাচ বেশি খেলে খুলনার পয়েন্ট ৮। ৫ দলের টুর্নামেন্টে প্লে-অফে যাবে ৪ দল। 

    ১৫৮ রানতাড়ায় চট্টগ্রাম বড় জুটি গড়তে পারেনি। মাশরাফি বিন মুর্তজা ও সাকিব আল হাসানের শুরুতে তৈরি করা দ্বিমুখী চাপের মাঝে মাহমুদুল হাসান জয় একটু নিজেকে মেলে ধরেছিলেন, তবে বাকিরা ঠিক বয়ে নিতে পারেননি দলকে। শুভাগত হোমের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ তুলেছিলেন নাহিদুল, তবে কুয়াশার মাঝে সেটি দেখতেই পাননি মাহমুদউল্লাহ। সে ওভারে তার মারা দুটি ছয় ঘুরিয়ে দিয়েছে মোমেন্টাম, শেষ বলে তিনি আউট হলেও শেষ ওভারে মোস্তাফিজের একটি চারের সঙ্গে শামসুরের দৃঢ়তা পার করেছে চট্টগ্রামকে। 

    রানতাড়ায় চট্টগ্রাম প্রথম হোঁচট খেয়েছিল সাকিবের প্রথম বলেই, ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে আসতে থাকা লিটন বলের পিচিংয়ে যেতে না পেরে ক্যাচ তুলেছিলেন। সাকিবকেই দুটি চার ও একটি ছয় মারা জয় ফিরেছেন শুভাগতকে তুলে মারতে গিয়ে। শেষ ওভারে আল-আমিনকে মারা মিঠুনের তিন চারে পাওয়ারপ্লেতে চট্টগ্রাম তুলেছিল ৫০ রান। সৌম্য-মিঠুনের জুটি এরপর ভেঙেছেন সাকিব, নিজের ফিরতি স্পেলে এসে। আর মিঠুন হাসান মাহমুদের বলে হয়েছেন এলবিডব্লিউ। মোসাদ্দেক মাশরাফিকে একটা ছয় মেরেছেন, ঠিক পরের বলে আবারও ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে সে কাটার মিস করে হয়েছেন বোল্ড। মার্চের পর আবারও খেলতে নামা মাশরাফি শেষ পর্যন্ত ৪ ওভারে দিয়েছেন ২৮ রান, খুলনার সবচেয়ে কম ইকোনমি এদিন ছিল তারই। 

    তবে সেসব চাপ কাবু করতে পারেনি শামসুরকে, এদিন পুরো ম্যাচেরই যিনি ছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার। আগে ব্যাটিং করা খুলনার হয়ে সর্বোচ্চ ৩২ করেছিলেন শুভাগত হোম, মাত্র ১৪ বলে। শুভাগতর শেষের ওই ঝড়ের আগে ম্যাচটা ছিল চট্টগ্রামের বাঁহাতি পেসের কম্বো শরিফুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমানের, সঙ্গে দুই স্পিনার নাহিদুল ইসলাম ও রাকিবুল হাসানের আঁটসাঁট বোলিংয়ে খুলনাকে ১৫৭ রানে আটকে রাখতে পেরেছিল চট্টগ্রাম।

    শরিফুল ও মোস্তাফিজ-- চট্টগ্রাম পেসাররা এদিন নেমেছিলেন শর্ট বলের থিওরি নিয়ে। ইনিংস-বিরতিতে শরিফুল নিজেই জানিয়েছেন সেটি, আগের ম্যাচের বোলিং তাদের উদ্বুদ্ধ করেছে শর্ট অফ আ লেংথে যেতে। দুজন ৫টি উইকেটের ৩টিই পেয়েছেন শর্ট বলে, বাকি ২টি একেবারে ফুললেংথ থেকে। 

    টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনার শুরুটা ঠিক প্রথম ম্যাচের মতো র‍্যাপিড ফায়ার না হলেও ঠিকঠাকই ছিল। শরিফুলের উঠাউঠি শর্ট বলের প্রথমটিতে চার মারার পর আবারও শট খেলার চেষ্টায় জাকির হাসান গ্লাভড হয়ে ফিরলে বাঁধলো প্রথম বিপত্তিটা। পাওয়ারপ্লেতে ৪৩ রান তোলার পর শরিফুলের পরের ওভারে আবারও শর্ট বলে ধরা পড়লেন আরেকজন, এবার জহুরুল ইসলাম হলেন টপ-এজড। 

    মার্চ মাসের পর আবারও ক্রিকেটে ফেরা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে চারে পাঠালো খুলনা, তবে তার শেষটা হলো ট্র্যাজিক। রাকিবুলের ফুললেংথের বলে সোজা তার দিকে ড্রাইভ করেছিলেন সাকিব, হাতে লেগে বল স্টাম্প ভেঙে আটকে দিল ক্রিজের বাইরে থাকা মাশরাফিকে। সাকিব অবশ্য এদিনও ঠিক ছন্দ খুঁজে পাননি ব্যাটিংয়ে, ১৬ বলে ১৫ করে আউট হয়েছেন মোসাদ্দেকের লং-হপে। 

    মাহমুদউল্লাহ ও ইমরুল কায়েস এরপর গিয়ার বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন, ২৭ বলে দুজনের জুটিতে উঠেছিল ৪৩ রান। অসময়ে ফিরেছেন দুজনই, পরপর দুই ওভারে-- মোস্তাফিজের শর্ট বলে ওপরে তুলেছিলেন ইমরুল, শরিফুলকে সামনে এসে খেলতে গিয়ে লেংথ নিজেই ব্লক করে ফেলে ইনসাইড-এজের পর বোল্ড হয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। এরপর শামীম হোসেন মোস্তাফিজের সুইঙ্গিং ইয়র্কারে এলবিডব্লিউ হলে খুলনার উড়ান বাধা পেয়েছে আরেকদফা, যদিও রিভিউটা নিলে বেঁচে যেতে পারতেন শামিম। 

    এরপর আরিফুল ফিরলেও খুলনাকে টেনেছেন শুভাগত। মোস্তাফিজ ও শরিফুল নিজেদের প্রথম ৩ ওভারে দিয়েছিলেন যথাক্রমে ২২ ও ২০ রান, তবে নিজেদের শেষ ওভারে তারা গুণেছেন যথাক্রমে ১৫ ও ১৪।