স্পিনার, সৌম্য আর বরিশালের পিচ্ছিল ফিল্ডিংয়ে শীর্ষস্থান নিশ্চিত করল চট্টগ্রাম
ফরচুন বরিশাল ১৪৯/৬, ২০ ওভার (সাইফ ৪৬, তামিম ৪৩, আফিফ ২৮*, মোসাদ্দেক ২/১৬, সনজিত ২/২২, জিয়াউর ২/২৫)
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ১৫৩/৩, ১৮.৪ ওভার (সৌম্য ৬২, সৈকত ৩৯, সুমন ২/৩০)
চট্টগ্রাম ৭ উইকেটে জয়ী
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের প্লে-অফ ও শীর্ষ দুইয়ে থাকা নিশ্চিত হয়েছে আগেই, ফরচুন বরিশালের ক্ষেত্রে শেষ দুটি ম্যাচই জিতলে আর কারাও দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে না-- এ ম্যাচের আগে সমীকরণ ছিল এমন। ওপেনিংয়ে ৮৭ রানের ভিত পাওয়ার পরও চট্টগ্রাম স্পিনারদের মাঝের ওভারগুলিতে আঁটসাঁট বোলিংয়ে ১৪৯ রানেই প্রথমে আটকে গেল বরিশাল। রানতাড়ায় ৭৯ রানের ওপেনিং জুটি গড়লো চট্টগ্রামও, তবে তাতে মিশে থাকলো বরিশাল ফিল্ডারদের বদান্যতা। দুই ওপেনার সৌম্য সরকার ও সৈকত আলি পেলেন তিনটি জীবন, যতক্ষণে তাদেরকে ফেরাতে পারল বরিশাল, ততক্ষণে আদতে যা কিছু সুযোগ, শেষ হয়ে গেছে তাদের। শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটের বড় জয়ে চট্টগ্রামের শীর্ষস্থান নিশ্চিত হয়েছে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই। আর বরিশালকে এখন শুধু নিজেদের শেষ ম্যাচে বেক্সিমকো ঢাকাকে হারালেই চলবে না, মিনিস্টার রাজশাহী ও চট্টগ্রামের ম্যাচের ফলের দিকেও তাকিয়ে থাকতে হবে তাদের। ১ ম্যাচ বাকি থাকতে রাজশাহী ও বরিশালের সমান পয়েন্ট, তবে রানরেটে এগিয়ে এখন পর্যন্ত রাজশাহী।
চট্টগ্রাম এদিন নেমেছিল তাদের শীর্ষ তিন পারফরমার-- লিটন দাস, মোস্তাফিজুর রহমান ও শরিফুল হাসানকে ছাড়াই। দুই ফ্রন্টলাইন পেসারের বদলে এদিন এদিন খেললেন রুয়েল মিয়া ও মেহাদি হাসান। তবে মূল কাজটা করেছেন চট্টগ্রামের দুই স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেন ও সনজিত সাহা, ৮ ওভারে তারা দিয়েছেন মাত্র ৩৮ রান, নিয়েছেন ৪ উইকেট। সাইফ হাসানের ৩৩ বলে ৪৬, তামিম ইকবালের ৩৯ বলে ৪৩, দুজনের ৮৭ রানের ওপেনিং জুটির ভিতে দাঁড়িয়েও, তামিমের উইকেটের পর শেষ ৭ ওভারে বরিশাল তুলেছে মাত্র ৪৯ রান, যার ২৩ রানই আবার এসেছে শেষ ২ ওভারে।
নাহিদুলের প্রথম ওভারেই দুই চার মেরেছিলেন সাইফ হাসান, আগের ম্যাচের মতো এদিনও তিনি শুরুটা করেছেন দারুণ। সোজা ব্যাটে দারুণ খেলেছেন, ইনসাইড-আউটে মেরেছেন-- সাইফকে টুর্নামেন্টের শুরু থেকে কেন নিয়মিত খেলায়নি বরিশাল, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। ১১তম ওভারে মোসাদ্দেকের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন তিনি, ৬টি চারের সঙ্গে মেরেছেন দুটি ছয়।
বারদুয়েক জীবন পেয়েছিলেন তামিম। দ্বিতীয় ওভারে মেহাদির বাইরের বলে শরীর থেকে দূরে খেললেও এক্সট্রা কাভারে সৈকত ফেলেছেন লোপ্পা ক্যাচ, এরপর একই বোলারের বলে এজড হলেও ক্যাচটা ঠিক নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেননি উইকেটকিপার মিঠুন। শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেককে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন তিনি।
মূলত বরিশালের পিছলে যাওয়ার শুরুটাও সেখান থেকেই। পরের ওভারে জিয়াউরকে একটা ছয় মারার পর আবারও মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন আগেরদিনের নায়ক পারভেজ হোসেন ইমন, ১০ বলে ১৪ রান করে। ১৫-১৮, এই ৪ ওভারে এরপর মোসাদ্দেক ও সনজিত দিয়েছেন ১৮ রান। এর মাঝে তৌহিদ হৃদয় ও মেহেদি হাসান মিরাজ-- দুজনই সনজিতকে তুলে মারতে গিয়ে ধরা পড়েছেন, দুটি ক্যাচই নিয়েছেন সৌম্য, পরেরটি ছিল দারুণ। পরের ওভারে জিয়া ফিরিয়েছেন শুক্কুরকে, আর শেষ ওভারের প্রথম দুই বলে আফিফের ছয়-চারে ভর করে বরিশাল তুলেছিল ১৫ রান।
লিটন না থাকায় এদিন সৌম্যর সঙ্গে এরপর ওপেন করতে এলেন সৈকত আলি। ৯ রানে প্রথম জীবন পেলেন তিনি, তাসকিনের বলে থার্ডম্যানে নাগাল পেয়েও ক্যাচটা রাখতে পারেননি কামরুল ইসলাম রাব্বি। সৈকত দ্বিতীয় জীবন পেয়েছেন ৩৩ রানে, এবার রাব্বির বলে সেটি ছেড়েছিলেন আফিফ। অবশেষে ৩৩ বলে ৩৯ রান করে তিনি ফিরেছেন মিরাজের বলে স্লগ করতে গিয়ে, তবে মিডউইকেটে সেটিও প্রথমদফা হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল সালাউদ্দিন শাকিলের।
প্রথম ১০ ওভারে চট্টগ্রাম তুললো ৮৩ রান, বরিশালের চেয়ে ১ রান কম। তবে চট্টগ্রামের মতো এরপরের ওভারগুলিতে আঁটসাঁট বোলিং করতে পারেনি বরিশাল। ১৪তম ওভারে সৌম্য ফিরেছেন,
সুমনের বলে লিডিং-এজে তামিমের হাতে ধরা পড়ে। এর আগে করেছেন ৩৭ বলে ৬২, ৭ চারের সঙ্গে ৩ ছয়ে। তবে ১০ রানেই ফিরতে পারতেন তিনি, সুমনের বলে মিডউইকেটে তার ক্যাচ ছেড়েছিলেন আফিফ। সে জীবনের পুরো সদ্ব্যবহার করেছেন সৌম্য, লিটনের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব প্রায় পুরোটাই নিয়ে নিয়েছিলেন।
সৌম্যর পর মোহাম্মদ মিঠুন দ্রুতই ফিরেছিলেন। তবে একদিকে মাহমুদুল হাসান জয়ের অপরাজিত ২৭ বলে ৩১ ও মোসাদ্দেক হোসেনের ১১ বলে ১২ রানে ৮ বল বাকি থাকতেই শেষ হয়েছে ম্যাচ।