লিটন-সৌম্য-নাহিদুলে রাজশাহীকে গুঁড়িয়ে আটে সাত চট্টগ্রামের
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ১৭৫/৪, ২০ ওভার (সৌম্য ৬৩, লিটন ৫৫, শামসুর ৩০, ইমন ২/২১, সাইফউদ্দিন ১/৩২)
মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী ১৩৯/৮, ২০ ওভার (নুরুল ২৮, মাহেদি ২৬, নাহিদুল ৩/১৯, জিয়াউর ২/১৭, মোস্তাফিজ ১/২৩, শরিফুল ১/২৮)
চট্টগ্রাম ৩৬ রানে জয়ী
লিটন দাসের ৪৩ বলে ৫৫, সৌম্য সরকারের ৪৮ বলে ৬৩ রানের পর শেষদিকে শামসুর রহমানের ১৮ বলে ৩০ রানের ক্যামিওতে ১৭৫ পর্যন্ত যাওয়া গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের মিনিস্টার রাজশাহীকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পরের কাজটা করেছেন নাহিদুল ইসলাম, শুরুতেই ৩ উইকেট নিয়ে। ৩৬ রানের বড় জয় নিয়ে গ্রুপপর্ব শেষ করলো শীর্ষে থাকা দল, প্লে-অফে তারা যাচ্ছে ৮ ম্যাচে ৭ জয় নিয়ে। অন্যদিকে রাজশাহীর এখন তাকিয়ে থাকতে হবে বেক্সিমকো ঢাকা ও ফরচুন বরিশালের ম্যাচটির দিকে, সে ম্যাচ বরিশাল হারলেই শুধু প্লে-অফে যেতে পারবে তারা। এ ম্যাচে বড় হারে রানরেটেও বরিশালের নিচে নেমে গেছে রাজশাহী।
এ ম্যাচে জয়টা গুরুত্বপূর্ণ ছিল মিনিস্টার রাজশাহীর, তবে আগের ম্যাচে ২২০ রান করেও বরিশালের কাছে হারের শক থেকে যেন এদিনও বেরুতে পারলো না তারা। আগে ফিল্ডিং করে ১৫তম ওভার পর্যন্ত ব্রেকথ্রু পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে, এরপর শেষ ২ ওভারে গুবলেট পাকিয়ে ফেলেছে তাদের বোলিং, এমনকি শরীরি ভাষাও বলছিল তাদের অবস্থাটা। ব্যাটিংয়ে সেই অর্থে আশা জোগাতে পারেননি রাজশাহীর কেউই, চারের চেয়ে ছয় বেশি মারলেও আদ্দতে সেসব হুমকি হয়ে উঠতে পারেনি চট্টগ্রামের কাছে।
রাজশাহীর জন্য প্রায় বাঁচা-মরার ম্যাচ হলেও আগেই শীর্ষস্থান নিশ্চিত করা চট্টগ্রামের জন্য এ ম্যাচ ছিল প্লে-অফের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেওয়ার। আগেরদিন মোস্তাফিজ-লিটন-শরিফুলের সঙ্গে রাকিবুলকে বিশ্রাম দেওয়া হলেও এদিন খেলেছেন সবাই।
টসে জিতে অনুমিতভাবেই চট্টগ্রামকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন রাজশাহী অধিনায়ক শান্ত, তবে শীঘ্রই উইকেটে দেখা পাননি তারা। অবশ্য পাওয়ারপ্লেতে এসেছিল মাত্র ৬টি বাউন্ডারি, চট্টগ্রাম তুলেছিল ৪৮ রান। প্রথম ১০ ওভারে উঠেছে ৮৫ রান, ১২ ওভার শেষে চট্টগ্রাম ছুঁয়েছে ১০০। পরের দুই ওভারে ফিফটি ছুঁয়েছেন দুজন, প্রথমে ৪০ বলে সৌম্য, এরপর ৩৮ বলে লিটন।
১৫তম ওভারে প্রথম উইকেটের দেখা পেয়েছে রাজশাহী, আনিসুল ইসলাম ইমনকে একটা ছয়ের পর আবারও ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে গিয়ে খেলতে গিয়ে এজড হয়েছেন সৌম্য, তার ইনিংসে তিনি মেরেছেন ৩টি চার ও ৪টি ছয়। লিটন ৫টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি ছয়, রাজাকে স্কুপ করতে গিয়ে বোল্ড হওয়ার আগে।
লিটন-সৌম্যর যে উড়ান দেওয়ার কথা ছিল, সেটি তারা দিতে পারেননি বলে অথবা তাদের অসময়ে উইকেটের পর পরের উড়ানটা দিতে বেসেহ দেরিই হয়েছে চট্টগ্রামের। লিটনের উইকেটের ওভারশেষে প্রথমবার চট্টগ্রামের রানরেট নেমে এসেছে ৮-এর নিচে। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন বা মোসাদ্দেক হোসেন, ওপেনারদের ভিতে দাঁড়িয়ে কিছু করতে পারেননি এ দুজন। মিঠুন ইমনের দ্বিতীয় শিকার, মোসাদ্দেক ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন সাইফউদ্দিনকে।
তবে রাজশাহীর বোলাররা হুট করেই যেন ফিরে তাকালেন চাপে থাকা চট্টগ্রামের দিকে। ১৯তম ওভারে রাজা করেছেন তিনটি বৈধ ডেলিভারি, দিয়েছেন ২১ রান। শামসুরকে দুটি বিমার দিয়ে আক্রমণ থেকে সরে যেতে হয়েছে তাকে। সে দুই ফুলটসসহ শামসুর মেরেছেন আরেকটি ছয়। শেষ ৩ বলে অবশ্য ইমন দিয়েছেন শুধু একটি ওয়াইড। শেষ ওভারের প্রথম বলে বিমার করেছেন সাইফউদ্দিনও, তবে শেষদিকে দুই ওয়াইড হলেও এসেছে ১৩ রান।
সেই এলোমেলো অবস্থা ব্যাটিংয়েও কাটেনি রাজশাহীর, পাওয়ারপ্লেতেই তারা হারিয়েছে ৩ উইকেট-- ৩টিই নিয়েছেন নাহিদুল। ইমন ক্রিজ ছেড়ে বেড়িয়ে হয়েছেন স্টাম্পড, শান্ত ও রনি তালুকদার বড় শটের চেষ্টায় দিয়েছেন ক্যাচ।
এরপর এসেছে ‘অড-বাউন্ডারি’, আর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট। ফজলে রাব্বি ২ ছয় মারলেও ২০ বলে ১৯-এর বেশি করতে পারেননি, রাকিবুলের বলে এলবিডব্লিউ হয়েছেন। চট্টগ্রাম সে উইকেট পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। মাহেদি ৩ ছয়ে ১৭ বলে করেছেন ২৬, শরিফুলের বলে নাহিদুলের ভাল ক্যাচে পরিণত হয়েছেন ডিপ এক্সট্রা কাভারে।
সাইফউদ্দিন জিয়াকে একটা ছয় মারার পরের বলেই আউটসাইড-এজে ধরা পড়েছেন লিটনের হাতে। শেষ আশা নুরুল সমানসংখ্যক বলে ২৮ রান করে মোস্তাফিজের বলে লিডিং-এজে ক্যাচ দিয়েছেন থার্ডম্যানে। এরপর জিয়া ফিরিয়েছেন টুর্নামেন্টে প্রথম ম্যাচ খেলা সানজামুলকে। রাজশাহী খেলতে পেরেছে শুধু ২০ ওভারই।