জহুরুল-মাশরাফিতে চট্টগ্রামকে গুঁড়িয়ে ফাইনালে খুলনা
জেমকন খুলনা ২১০/৭, ২০ ওভার (জহুরুল ৮০, মাহমুদউল্লাহ ৩০, সাকিব ২৮, ইমরুল ২৫, মোস্তাফিজুর ২/৩১, মোসাদ্দেক ১/২৭)
গাজী গ্রুপ চট্টগ্রাম ১৬৩ অল-আউট, ১৯.৪ ওভার (মিঠুন ৫৩, জয় ৩১, মাশরাফি ৫/৩৫, আরিফুল ২/২৬, হাসান ২/৩৫)
খুলনা ৪৭ রানে জয়ী
টুর্নামেন্টে এতদিন এই কাজটা করে এসেছে চট্টগ্রাম-- প্রতিপক্ষকে গুঁড়িয়ে দেওয়া। গ্রুপপর্বে ৮ ম্যাচের ৭টিতেই জেতা দলটি প্লে-অফে এসে পড়লো জেমকন খুলনার সামনে, টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেভারিট বলা হচ্ছিল যাদের। খুলনা এদিন বের করে আনলো তাদের ‘এ গেম’টা। জহুরুল ইসলামের ৪১ বলে ৮০ রানের ইনিংসের ভিতে দাঁড়িয়ে ইমরুল কায়েস, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ, আরিফুল হকদের ক্যামিওতে প্রথম কোয়ালিফায়ারে ২১০ রান তুললো তারা, এরপর মাশরাফি বিন মুর্তজার ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ উইকেটে চট্টগ্রামকে গুটিয়ে দিল ১৬৩ রানেই। ফল-- টুর্নামেন্টে রানের হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জয়, আর কোয়ালিফায়ার জিতে সরাসরি ফাইনালে। চট্টগ্রাম অবশ্য সুযোগ পাবে আরেকটি, দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে তারা মুখোমুখি হবে এদিন এলিমিনেটর জেতা বেক্সিমকো ঢাকার।
টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে খুলনার শুরুটা দারুণ করেছিলেন জহুরুল, জাকির হোসেন তাকে সঙ্গই দিয়ে গেছেন শুধু। প্রথম ৪ ওভারে ৩৭ রান তোলা খুলনাকে একটু টেনে ধরেছিল সনজিত সাহা ও মোস্তাফিজুর রহমানের করা পরের দুই ওভার, তবে শীঘ্রই সেসব মিলিয়ে গেছে। ৫ম ওভারে ফিরতি একটা কঠিন ক্যাচ দিয়েও সনজিতের হাতে বেঁচে যাওয়া জাকির রান-আউট হয়েছেন ১০ম ওভারে গিয়ে, তবে তার আগেই ওপেনিং জুটিতে উঠেছে ৭১ রান।
খুলনা এরপর অল-আউট অ্যাটাকে গেছে ইমরুল কায়েস নামার পরপরই। নেমেই চার-ছয়-চার মেরেছেন ইমরুল, সৌম্যর করা ১০ম ওভারে উঠেছে ১৮ রান, ১০ ওভার খুলনা তুলেছে ৮৫। ইমরুল-জহুরুলের আগুনে জুটি ভেঙেছেন মোস্তাফিজ, ১২ বলে ২৫ করে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ইমরুল। সাকিব নেমেছেন, মোসাদ্দেককে ছয় মেরে শুরু করেছেন। টুর্নামেন্টে প্রথমবার ব্যাটিংয়ে ছন্দ ফিরে পাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন এদিন সাকিব।
সেঞ্চুরির দিকে এগুতে থাকা জহুরুল মিস করেছেন মোসাদ্দেককে স্কুপ করতে গিয়ে, এর আগে ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন ৩৩ বলে। মাঝে সনজিতের বলে একটা জীবন পেয়েছিলেন, তবে সেটিও হয়েছে ছয়। জহুরুল ফিরলেও অবশ্য খুলনার কিছু যায় আসেনি, নেমেই খুনে মেজাজে ছিলেন মাহমুদউল্লাহও।
শরিফুলকে টানা তিন ছরের পর সনজিতকে মেরেছেন টানা দুই চার, এরপর আবারও ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ক্যাচ দেওয়ার আগে করেছেন ৯ বলে ৩০। শেষ ওভারের প্রথম বলে নিজের উইকেট স্যাক্রিফাইস করার আগে আরিফুল করেছেন ৯ বলে ১৫, মোস্তাফিজের বলে স্টাম্প হারানোর আগে সাকিব ১৫ বলে ২৮। শেষ ওভারে ২ বিমার দেওয়ার পর বোলিং থেকে সরে যেতে হয়েছে মোস্তাফিজকে, তার বাকি থাকা শেষ ২ বল করতে আসা সৌম্যকে একটি ছয় মেরে খুলনাকে ২১০ পর্যন্ত নিয়ে গেছেন মাশরাফি। এদিন জিয়াউরকে বাদ দিয়ে বাড়তি ব্যাটসম্যান হিসেবে সৈকতকে খেলিয়েছে চট্টগ্রাম, তবে কাজে আসেনি সে কৌশল।
সেই মাশরাফিই এরপর নিয়েছেন চট্টগ্রামের প্রথম তিন উইকেট। সৌম্য-লিটনকে ফেরানোর পর ফিরতি স্পেলে এসে ভেঙেছেন মিঠুন-জয়ের ৭৩ রানের জুটি। প্রথমে ফিরেছিলেন সৌম্য, তার শটটায় টাইমিং দারুণ হলেও সেটি গেল সরাসরি মিডউইকেট ফিল্ডারের হাতে। লিটন ইতিবাচকই ছিলেন, তবে আরেকবার সামনে এসে খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন তিনি-- এবার বোল্ড।
মিঠুন টুর্নামেন্টের নিজের সেরা ব্যাটিং করলেন এদিন, সাকিবকে মারা টানা দুই ছয় ছিল তার প্রথম দুই বাউন্ডারি। জয়ের সঙ্গে জুটির পর ৩০ বলে করলেন ফিফটি, তবে বাড়তে থাকা রানরেটের চাপ সামাল দিতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। আরিফুলের কাটার মিস করে গেছেন ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে স্লগ করতে গিয়ে।
মাশরাফির বাইরের বলে এর আগেই স্ল্যাশ করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন জয়, ২৭ বলে ৩১ রান করে। নিজের শেষ ওভারে এসে প্রথমে শামসুর, এরপর মোস্তাফিজকে দিয়ে ৫ উইকেট পূর্ণ করেছেন টুর্নামেন্টে মাত্র তৃতীয় ম্যাচ খেলা মাশরাফি, টি-টোয়েন্টিতে এটি তার প্রথম পাঁচ। এ ৫ উইকেটের মাঝে মাশরাফির সর্বোচ্চ গতির ডেলিভারিটি ছিল ঘন্টায় ১২৪ কিলোমিটারের, শুধু তিনি নয়, খুলনার বাকি পেসাররাও এদিন স্লোয়ার-কাটারের ব্যবহার করেছেন দারুণভাবে। আর মাশরাফির চতুর্থ উইকেট শামসুরের ক্যাচটা দারুণভাবে নিয়েছেন বদলি উইকেটকিপার এনামুল হক বিজয়, চট্টগ্রাম ব্যাটসম্যান জয়ের সঙ্গে সংঘর্ষে চতুর্থ ওভারেই উঠে গিয়েছিলেন নিয়মিত উইকেটকিপার জাকির।
মাশরাফির ৫ পূর্ণ হওয়ার আগে মোসাদ্দেককে ফিরিয়েছেন সাকিব, সৈকত আলিকে হাসান মাহমুদ। দুই বল বাকি থাকতে শরিফুলকে ক্যাচ বানিয়ে ম্যাচ শেষ করেছেন আরিফুল।