• অন্যান্য
  • " />

     

    ২২ গজের সংখ্যানামা: শূন্য এবং রাজার শূন্যের গল্প

    ২২ গজের সংখ্যানামা:  শূন্য এবং রাজার শূন্যের গল্প    

                                                                শূন্য এবং রাজার শূন্য

     

    চলতি ইংল্যান্ড-ভারত সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে দুই ইনিংসেই প্রথম বলে ফিরে গেছেন স্যাম কারান, যেই ঘটনাকে ক্রিকেটে বলা হয় ‘কিং পেয়ার’। ক্রিকেট ইতিহাসের ২২তম ব্যাটসম্যান হিসেবে এই অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডের খাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি। পেয়ার আর কিং পেয়ারের পরিসংখ্যানের ওপরেই আলোকপাত করা হবে এখানে।

    ‘পেয়ার’ শব্দটার নামকরণ বেশ মজার। দুটো শূন্যকে একসাথে জোড়া লাগালে দেখতে একজোড়া চশমার মত দেখায়। সেখান থেকেই জোড়া বা ‘পেয়ার’ নামটা এসেছে। বুঝতেই পারছেন, দুই ইনিংসেই ব্যাটসম্যান কোনও রানের দেখা না পেয়ে সাজঘরে ফিরলে তার নামের পাশে পেয়ার থাকবে। ক্রিকেট ইতিহাসে পেয়ারের তালিকাটা বেশ লম্বা। তবে দুই ইনিংসেই প্রথম বলেই আউট বা ‘গোল্ডেন ডাক’ এর দুর্ভাগ্য খুব বেশি ব্যাটসম্যানের হয়নি।  

     

    পেয়ার সমাচার

    পেয়ারের কথা ভাবলেই কোন নামগুলো আপনার মাথায় আসে প্রথমে? কোর্টনি ওয়ালশ, মুত্তিয়া মুরালিধরন, ক্রিস মার্টিন? আপনার ভাবনায় তাহলে ভুল নেই, ক্রিকেটের ডাক-সম্রাটরা এই তালিকাতেও আছেন শীর্ষেই। তালিকার শীর্ষে আছেন কিউয়ি পেসার ক্রিস মার্টিন, ৭টি পেয়ার নিয়ে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪টি পেয়ার আছে মোট ৫ জনের, যেখানে একমাত্র স্বীকৃত ব্যাটসম্যান শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক মারভান আতাপাত্তু। এখনও খেলে যাওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩টি পেয়ার আছে ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসনের। 

     

    অভিষেকেই পেয়ারের শিকার!

    নামের পাশে পেয়ার আর কেইবা চায় বলুন! আর সেটা যদি হয় অভিষেক টেস্টে তাহলে তো সেই টেস্ট তাকে দুঃস্বপ্নের মতই তাড়া করে ফেরে হয়ত। ক্রিকেট ইতিহাসে এখন পর্যন্ত ৪৫ জনের কপালে জুটেছে এই দুর্ভাগ্য। শুরুটা হয়েছিল ১৮৮০ সালে, ওভালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অভিষেকেই পেয়ার পেয়েছিলেন ফ্রেড গ্রেস। তালিকায় সর্বোচ্চ ৮ জন আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার। তাদের মধ্যে ক্ল্যারেন্স উইম্বল আবার পেয়ার পেয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকারই অভিষেক টেস্টে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। দেশের অভিষেক টেস্টেই পেয়ার পেয়েছেন আরও দুইজন- দুই কিউইয়ি কেন জেমস ও টেড ব্যাডক। 

    তালিকায় বাংলাদেশের আছেন ২জন- আলমগীর কবির, কামরুল ইসলাম রাব্বি। আর বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকেই পেয়ার পেয়েছেন শুধু একজন- জিম্বাবুয়ের নাতসাই এম’শাংওয়ে (২০১৪) 

     

    অধিনায়কের দুর্ভাগ্য

    এখন পর্যন্ত ২৩ জন অধিনায়ক পেয়ারের শিকার হয়েছেন। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে পেয়ার পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জো ডার্লিং, ১৯০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এদের মধ্যে আবার একই ম্যাচে পেয়ার পেয়েছিলেন দুই অধিনায়ক- পাকিস্তানের সরফরাজ আহমেদ ও দক্ষিণ আফ্রিকার ফাফ ডু প্লেসি। একই টেস্টে দুই অধিনায়কের পেয়ার পাওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র। অধিনায়কত্বের অভিষেকে পেয়ার পেয়েছেন ৩ জন- অস্ট্রেলিয়ার মার্ক টেইলর, পাকিস্তানের রশিদ লতিফ ও বাংলাদেশের হাবিবুল বাশার। আর অধিনায়ক হিসেবে শেষ টেস্টে পেয়ার পেয়েছেন ১ জন- ইয়ান বোথাম। 

    বাশারের সাথে তালিকায় আছেন আরও একজন বাংলাদেশি- বাংলাদেশের বর্তমান টেস্ট অধিনায়ক মমিনুল হক। ২০১৯ সালে ইডেন গার্ডেনসের সেই ঐতিহাসিক দিবারাত্রির টেস্ট ভারতের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে তিনি ফিরেছিলেন উমেশ যাদবের আর দ্বিতীয় ইনিংসে ইশান্ত শর্মার বলে। 

     

    অলিম্পিক ও অডির কেচ্ছা

    টানা দুই টেস্টে পেয়ার পেয়েছিলেন মার্ক ওয়াহ। সতীর্থরা তার এই টানা চার ডাকের ঘটনার পরে ব্যঙ্গ করে তাকে ‘অডি’ ডাকতেন, প্রখ্যাত জার্মান অটোমোবাইল কোম্পানি অডির লোগো যে জোড়া লাগানো চারটি বৃত্ত। ড্রেসিং রুমে এও ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল যে পরের ইনিংসেও ডাক মেরে বসলে মার্ক ওয়াহকে ডাকা হবে ‘অলিম্পিক’, রানের খাতা খোলায় সেই যাত্রায় রেহাই পান তিনি। 

    অলিম্পিকে ক্রিকেট আর না থাকলেও ক্রিকেট ইতিহাসে ‘অলিম্পিক’ তথা টানা পাঁচ ইনিংসে ডাকের ঘটনা আছে। এই রেকর্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট ৩ দুর্ভাগা ক্রিকেটার হলেন অজিত আগারকার, বব হল্যান্ড, মোহাম্মদ আসিফ। আর টানা দুই টেস্টে পেয়ার পাওয়া মোট ক্রিকেটার ১২ জন।

     

    কিং পেয়ার 

    এক টেস্টের দুই ইনিংসেই প্রথম বলে ফিরে যাওয়ার এই দুর্ভাগ্যের শিকার হওয়া প্রথম ক্রিকেটার হলেন ইংল্যান্ডের উইলিয়াম অ্যাটওয়েল, ১৮৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে ঘটে এই ঘটনা। 

    দুই ইনিংসে প্রথম বলেই আপনাকে আউট হতে হল, তা নাহয় মানা গেল। কিন্তু ঐ ব্যাটসম্যানটার জায়গায় নিজেকে একবার ভাবুন তো যে দুই ইনিংসেই একই বোলারের কাছে প্রথম বলে ফিরে গেছেন! ক্রিকেট ইতিহাসে এরকম ঘটনা আছে ৩টি। ১৯১২ সালে ওল্ড ট্রাফোর্ডে দুবারই অস্ট্রেলিয়ার জিমি ম্যাথিউসের কাছে ফিরেছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার টমি ওয়ার্ড। কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিতে দুবারই জিমি ম্যাথিউস হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেছিলেন এই টমি ওয়ার্ডের উইকেট নিয়েই।  টেস্ট ইতিহাসের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের(২৬) ম্যাচেই নিউজিল্যান্ডের ইয়ান কলকুহুন হয়েছিলেন এই ঘটনার দ্বিতীয় শিকার,  দুবারই তিনি ফিরেছিলেন বব অ্যাপলইয়ার্ডের কাছে। তবে ম্যাথিউসের মত হ্যাটট্রিক পাননি অ্যাপলইয়ার্ড। মজার ঘটনা হল কলকুহুনকে দুবারই ফেরানোর পর দুবারই তার হ্যাটট্রিকের সুযোগ বানচাল করেছিলেন অ্যালেক্স ময়ার। 

    তৃতীয় ঘটনাতে অবশ্য এতো জটিল কোনও সমীকরণ নেই। ঢাকায় ভারতের জহির খানের বিপক্ষে দুবারই প্রথম বলে ফিরেছিলেন বাংলাদেশের জাভেদ ওমর বেলিম।

    কিং পেয়ারের তালিকায় আছেন আরও একজন বাংলাদেশি- নুরুল হাসান সোহান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সেবার প্রথম ইনিংসে তিনি ফিরেছিলেন কিমো পলের শিকার হয়ে আর দ্বিতীয় ইনিংসে জেসন হোল্ডারের। আউট হওয়ার ধরন অবশ্য ছিল একই-এলবিডব্লিউ।