ব্যাটিং উইকেটে দেখা গেল 'সত্যিকারের' বাংলাদেশকে
বাংলাদেশ বনাম নিউজিল্যান্ড, ৫ম টি-টোয়েন্টি, মিরপুর (টস- নিউজিল্যান্ড/ ব্যাটিং)
নিউজিল্যান্ড ১৬১/৫, ২০ ওভার ( ল্যাথাম ৫০*, অ্যালেন ৪১, নিকোলস ২০, শরিফুল ২/৪৮,আফিফ ১/১৮, নাসুম ১/২৫)
বাংলাদেশ ১৩৪/৮, ২০ ওভার ( আফিফ ৪৯*, মাহমুদউল্লাহ ২৩, নাইম ২৩, আজাজ ২/২১, কুগেলাইন ২/২৩, সিয়ার্স ১/২১)
নিউজিল্যান্ড ২৭ রানে জয়ী
সিরিজের শেষ ম্যাচে এসে মোটামুটি স্পোর্টিং উইকেটের দেখা মিলল। কিন্তু সেই পরীক্ষাতেই পাশ করতে পারল না বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডের ১৬১ রানের জবাবে এক আফিফ ছাড়া আর কেউই সেভাবে লড়াই করতে পারলেন না। তাতেই শেষটা মনে রাখার মতো হলো না, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে অনেকগুলো প্রশ্নচিহ্নও এখন বাংলাদেশ দলের সামনে।
১৬২ রানের লক্ষ্যে প্রথম বলেই মোহাম্মদ নাইমের চার দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশের ইনিংস। বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করলেও এরপরের ওভারগুলোতে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ছিল না আক্রমণের ছাপ। ৫ম ওভারে এসে পুরো সিরিজে বাংলাদেশকে ভোগানো সেই আজাজ পাটেলই ফেরান লিটন দাসকে। ব্যাকফুটে গিয়ে শট খেলতে গেলে টার্নের কারণে টাইমিং করতে না পারায় পয়েন্টে স্কট কুগেলাইনের ঝাঁপিয়ে পড়ে এক হাতে নেওয়া ক্যাচে ১০ রানেই ফিরে যান লিটন। আর কোনও উইকেট না হারিয়ে পাওয়ারপ্লেতে বাংলাদেশ তোলে ৩৫ রান।
পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই ফিরে যান এই সিরিজে প্রথম নামা সৌম্য সরকার। কোল ম্যাককঙ্কির বলে কাট করতে গেলে পয়েন্টে রচীন রবীন্দ্রর দারুণ ক্যাচের শিকার হয়ে তিনি ফেরেন মাত্র ৪ রান করেই। অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসে বেন সিয়ার্সের করা প্রথম বল যেন চোখেই দেখলেন না নাইম। দ্বিতীয় বলে ১৪৭ কিমি. গতির বাউন্সারে দিক্বিদিকশূন্য শট খেলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় নাইমের ২১ বলে ২৩ রানের ইনিংস, সিয়ার্স পেয়ে যান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট। পরের ওভারে মুশফিকুর রহিমের বিদায়ে বাংলাদেশের আকাশে দেখা দেয় বিপদের ঘনঘটা। রবীন্দ্রকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দিয়ে মাত্র ৩ রান করেই ফেরেন মুশফিক।
নিউজিল্যান্ড যেখানে পাওয়ারপ্লেতেই তুলেছিল ৫৮ রান সেখানে বাংলাদেশ সেই রান ছোঁয় ১১.২ ওভারে গিয়ে। ৩০ বল পরে আফিফ হোসেনের ব্যাট থেকে আসে প্রথম বাউন্ডারি। সিয়ার্সের সেই ওভারের শেষ বলে ছয় মেরে ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দেন আফিফ। এরপর সামনে যেই বোলারই এসেছে কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি আফিফ। ১১-১৫ ওভারে বাংলাদেশ ৫৮ রান তুলে বেশ শক্তভাবেই ম্যাচে ফিরে আসে। অপর প্রান্তে ধরে খেলতে থাকা মাহমুদউল্লাহ ১৬তম ওভারে এসে বিদায় নিলেই ঘটে বিপদ। কুগেলাইনের অফ স্টাম্পের বাইরের নিরীহ বল ডিপ কাভারে থাকা অ্যালেনের হাতে সরাসরি তুলে দিয়ে ২১ বলে ২৩ রান করে ফেরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। আজাজের করা পরের ওভারে চার মারার পরের বলেই ফিরে যান নুরুল হাসানও। ম্যাচ থেকে বাংলাদেশ পুরোপুরি ছিটকে যায় জ্যাকব ডাফির করা ১৮তম ওভারে। মাত্র ২ রান দিয়ে ঐ ওভারে তিনি নেন শামীম হোসেন পাটওয়ারীর উইকেট। কুগেলাইনকে দুই চার মেরে তাসকিন কিছুটা চেষ্টা করলেও তিনি ফিরে যান ঐ ওভারের শেষ বলে। শেষ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয় রান হয়ে দাঁড়ায় ৩৫। শেষ ওভারে বাংলাদেশ সেখানে তুলতে পারে মোটে ৭ রান। ৪৯ রানে অপরাজিত থাকা আফিফকে তাই ফিরতে হয় শূন্য হাতেই। আর দারুণ অল রাউন্ড পারফরম্যান্সের বদৌলতে সিরিজের শেষটা তাই শক্তভাবেই করেছে কিউইরা।
টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া নিউজিল্যান্ডের ড্রেসিং রুম পরিকল্পনাতে নিশ্চয় বাংলাদেশের মাত্র ৩ বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে নামার প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল। শুরু থেকেই তাদের ব্যাটিং ভঙ্গিতেও বাংলাদেশের ওপর চড়াও হওয়ার ইঙ্গিত ছিল পরিষ্কার। তাসকিনের করা প্রথম ওভারে প্রায় সব বলেই সপাটে ব্যাট চালিয়েছেন ফিন অ্যালেন। ঐ ওভারে মাত্র ২ রান এলেও সুফল আসতে শুরু করে এর পরের ওভার থেকেই। নাসুমের করা পরের ওভারের প্রথম বলেই রচীন রবীন্দ্রর সজোরে করা কাট শামীম হোসেন পাটওয়ারীর হাতে সরাসরি গেলেও ধরতে পারেননি তিনি। প্রান্ত বদল হওয়ায় ফিন অ্যালেন এরপর নাসুমকে স্বাগত জানান চার-ছয়ে। শরিফুল ইসলামের প্রথম ওভারে তো চার-ছয়ের পসরা সাজিয়ে অ্যালেন তোলেন ১৯ রান!
সেই থেকেই প্রতিশোধের জন্য হয়ত মুখিয়ে ছিলেন শরিফুল। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভার করতে এলে তার প্রথম বলই মাঠছাড়া করেন অ্যালেন। দ্রুতই ঘুরে দাঁড়িয়ে আরেক ওপেনার রচীনকে ১৭ রানে ফেরান তিনি; মুশফিকুর রহিমের দারুণ ক্যাচের যদিও কৃতিত্ব বেশি সেখানে। রচীনের বিদায়ে ভাঙা ৫৮ রানের এই ওপেনিং জুটি অবশ্য এই সিরিজে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ। এটি পরের বলেই অ্যালেনকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেছিলেন। রিভিউ নিয়ে সেই যাত্রায় বেঁচে গেলেও স্পরের বলেই স্টাম্পে বল ডেকে এনে শেষ হয় তার ২৪ বলে ৪১ রানের ঝড়। শরিফুল পান মধুর প্রতিশোধের স্বাদ। দারুণ পাওয়ারপ্লে কাটানো কিউইদের শেষটা তাই ভাল হয়নি, ৫৮ রান যদিও এই সিরিজের সর্বোচ্চ।
সপ্তম ওভারের প্রথম বলে নেমেই কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম বাংলাদেশ অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে চার মেরে স্বাগত জানালেও রানের চাকা স্তিমিত হয়ে আসে। সেই চাপেই সিরিজে প্রথম হাত ঘুরাতে আসা আফিফ হোসেনের অফ স্পিনে উইকেটের পিছে ক্যাচ দিয়ে ৬ রানে ফিরে যান উইল ইয়াং। উইকেটে নবাগত কলিন ডি গ্র্যান্ডহোমের জন্য দুর্বিষহ এক সিরিজ গেলেও এদিন শুরুটা মন্দ হয়নি তার। তবে ভাগ্যের চাকা বদলায়নি। নাসুম আক্রমণে এলে তার ওপর চড়াও হতে গিয়ে টাইমং করতে পারেননি একদমই। ফলাফল সিরিজে ৪র্থ বারের মত নাসুমের শিকার হয়ে ডি গ্র্যান্ডহোমের ফিরে যাওয়া।
মাঝের ওভারগুলোতে মাহমুদউল্লাহ-আফিফের স্পিন জুটি চেপে বসলে বাউন্ডারির খোঁজে হন্যে হয়ে থাকা কিউইরা ২৭ বল পর ১৫তম ওভারে এসে প্রথম বাউন্ডারির দেখা পায়। বাউন্ডারি খরা কাটানো হেনরি নিকোলস অবশ্য এরপর ফিরে যান দারুণ প্রথম দুই ওভার করা তাসকিনের শিকার হয়ে, ২১ বলে ২০ রান করে শেষ হয় তার বিপদ সামাল দেওয়া ইনিংস। অপর প্রান্তে থাকা ল্যাথাম অবশ্য দলের হাল ধরে দক্ষতার সাথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন ইনিংস। তাসকিনের করা ১৯তম ওভারে দুই ছয় এক চারে তিনি তোলেন ১৮ রান। শেষ ৫ ওভারে ৫৪ রান তুলে নিউজিল্যান্ড থামে ১৬১ রানে, যা এই সিরিজের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। দিনশেষে সেটাই কিউইদের জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়ে দাঁড়ায়।