• অ্যাশেজ ২০২১-২০২২
  • " />

     

    বাটলারদের প্রতিরোধের পরও অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার দুইয়ে দুই

    বাটলারদের প্রতিরোধের পরও অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার দুইয়ে দুই    

    অস্ট্রেলিয়া ৪৭৩/৯ ডি. ও ২৩০/৯ ডি.
    ইংল্যান্ড ২৩৬ ও ১৯২
    ফলাফল: অস্ট্রেলিয়া ২৭৫ রানে জয়ী

    প্রথম টেস্ট জয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টেও অস্ট্রেলিয়ার একটাই লক্ষ-জয়। অথচ অ্যাডিলেইডের দিবারাত্রির টেস্টের আগেই শুনতে হল একাধিক দুঃসংবাদ। তবে একজনের কপাল পুড়লে আরেকজনের দিকে ভাগ্য দেবতা মুখ তুলে তাকায়। জশ হেজলউডকে মাঠের বাইরে ঠেলে দিয়ে  ভাগ্য দেবতা ঝাই রিচার্ডসনের জন্য মঞ্চ প্রস্তুত করলেন। আর সেই মঞ্চের কেন্দ্রীয় নায়কের ভুমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার এই অনাকাঙ্ক্ষিত সুযোগ দুহাত ভরেই নিলেন রিচার্ডসন। নিজের প্রথম টেস্ট ফাইফার দিয়েই নিশ্চিত করলেন অস্ট্রেলিয়ার জয়। শেষ দিনে জস বাটলার-ক্রিস ওকস অস্ট্রেলিয়ার মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠলেও তা উপশম করলেন তরুণ এই পেসার; অস্ট্রেলিয়া পেল ২৭৫ রানের বিশাল জয়।

    অথচ প্রথম ইনিংসে উইকেটের দেখাই পাননি তিনি। তাতে অবশ্য অস্ট্রেলিয়ার কোনও ক্ষতি হয়নি। নিয়মিত অধিনায়ক প্যাট কামিন্স কোভিড নিয়মাবলির জন্য ছিটকে গেলে অধিনায়কত্ব ফিরে পান স্টিভ স্মিথ; টানা ৩ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া পায় ৩য় অধিনায়ক। ব্যাটিং-বান্ধব হিসেবে অ্যাডিলেইডের সুপরিচিতি থাকলেও টসে জিতে স্মিথ ব্যাটিং নেওয়ার পর রীতিমত সংগ্রাম করতে হয় প্রথম সেশনে।  মার্কাস হ্যারিস আরও একবার শুরুতেই ফিরলেও মাটি কামড়ে পড়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার-মার্নাস লাবুশেন। তবে প্রথম সেশনটা টিকে যাওয়ার পর অ্যাডিলেইডের পিচ পড়ে ফেলেন ওয়ার্নার। আর ইংল্যান্ডও সাজায় অদ্ভুত পরিকল্পনা। সেই কুখ্যাত বডিলাইন সিরিজের মত না হলেও লেগ সাইড নির্ভর ফিল্ডিং সাজিয়ে ইংল্যান্ড মন দেয় বাউন্সারে, আর সেই পরিকল্পনার মূল বাস্তবায়ক হলেন বেন স্টোকস।

    তাতে বরং হাত খোলার সুযোগ পান দুই অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান। স্বরূপে ফিরে ওয়ার্নার খারাপ বলের জবাব দিতে ভুল করেননি, খেলেছেন দারুণ কিছু শট। কিন্তু সেঞ্চুরির কাছে যেয়েই যেন মনোযোগে ছেঁদ পড়ল। যেই ওয়ার্নার এর আগে পুরো টেস্ট ক্যারিয়ারে মাত্র ১ বার নব্বইয়ের ঘরে আউট হয়েছিলেন সেই তিনিই গ্যাবার পরে এবার অ্যাডিলেইডেও হলেন নার্ভাস নাইনটিজের শিকার। সেই স্টোকসেরই নিরীহ এক বল সরাসরি তুলে দিলেন ব্রডের হাতে, ফিরলেন ৯৫ রানে। সেঞ্চুরি মিসের আক্ষেপে ওয়ার্নর পুড়লে সেই আক্ষেপ পেয়ে বস্তে পারত লাবুশেনকেও। তবে প্রথম দিন যেন ভাগ্য দেবতার কাছে দুহাত তুলে তবেই ব্যাট হাতে নেমেছিলেন তিনি। সুপারম্যানসুলভ ডাইভ দিয়ে যেই বাটলার ফিরিয়েছিলেন হ্যারিসকে সেই বাটলার ফেলে দিলেন অত্যন্ত সহজ দুটো সুযোগ। আর একবার মিডউইকেটে জেমস অ্যান্ডারসনের হাত গলে বেরিয়ে গেল বল। যেই ৯৫ রানে ওয়ার্নার ফিরেছিলেন সেই ৯৫ রানেই যখন বাটলার মামুলি সেই ক্যাচ ফেলে দেল, এরপর দ্বিতীয় দিন সকালে এসে আর সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল করেননি। ক্যারিয়ারে ৬ষ্ঠ ও অ্যাশেজে নিজের প্রথম সেঞ্চুরি পেলেও সকালে বেশ ধুঁকছিলেন লাবুশেন। অলি রবিনসনের বলে একবার ফিরেছিলেনও; বাউন্ডারি লাইন পার হওয়ার আগে রিপ্লেতে নো বল ধরা পড়লেই নিজের ভাগ্যকে বিশ্বাস করতে নিজেরই কষ্ট হচ্ছিল লাবুশেনের। তবে তার একটু পরে সেই রবিনসনের বলে বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়েই থামেন লাবুশেন, ১০৩ রানে।

    লাবুশেন সেঞ্চুরি পেলেও লাবুশেনের প্রিয় সতীর্থ স্টিভ স্মিথ অবশ্য পারেননি। অ্যাশেজ আর স্টিভ স্মিথের সেঞ্চুরি যেন সমার্থক হয়ে দাঁড়িয়েছে গত কয়েক বছরে। এদিনও আগাচ্ছিলেন সেই পথেই। দুর্দান্ত খেলতে থাকা স্মিথ অবশ্য নাকাল হলেন অ্যান্ডারসনের ভেতরে ঢোকা বলে। এলবিডব্লিউ হয়ে ৯৩ রানে স্মিথ ফিরলে অন্য প্রান্তে থাকা অ্যালেক্স ক্যারি অবশ্য তুলে নেন নিজের প্রথম টেস্ট ফিফটি। ক্যারি ৫১ রানে ফেরার পর মিচেল স্টার্কের ৩৯* ও অভিষিক্ত মাইকেল নিসারের ঝড়ো ৩৫ রানে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ঘোষণা করে ৪৭৩ রানে। ম্যাচ যেন ওখানেই শেষ। এরপরে সেই পুরনো দৃশ্যপট-শুরুতেই দুই ওপেনারের প্রস্থান, ডাভিড মালান-জো রুট জুটি অতঃপর তাসের ঘরের মত বাকিদের লুটিয়ে পড়া। মালানের ৮০ ও রুটের ৬২ রানের পর ৩৪ রান করে যা একটু প্রতিরোধ গড়েছিলেন স্টোকস। তবে দিবারাত্রির টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অবিসংবাদিত সেরা মিচেল স্টার্ক জ্বলে উঠেছিলেন আরও একবার। ৪ উইকেট নেওয়ার পথে প্রথম বোলার হিসেবে দিবারাত্রির টেস্টে ছুঁয়েছেন ৫০ উইকেটের মাইলফলক। সাথে ন্যাথান লায়নের ৩ ও ক্যামেরন গ্রিনের ২ উইকেটে ইংল্যান্ডকে ২৩৬ রানেই গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর ফলো-অনের বোঝা আর তাদের ওপর না চাপানোর সিদ্ধান্তই নেন স্মিথ।

    নিজেরা ব্যাটিংয়ে নেমে দ্রুত রান তোলার লক্ষেই খেলতে থাকে অস্ট্রেলিয়া। তাতে অবশ্য উইকেটও পড়তে থাকে দ্রুত। ৫৫ রানেই ৪ উইকেট হারানোর আগে একটু সাবধানীও হয়ে উঠে তারা। তবে সেই পথ পাড়ি দিয়ে এরপর আরও একবার ফিফটি তুলে নেন লাবুশেন। আর অন্যদিকে ওয়ানডে মেজাজে খেলে ফিফটি পূর্ণ করেন প্রথম টেস্ট সেরা ট্রাভিস হেড। দুজনেই ৫১ রানে ফেরার পর গ্রিনের ৩৩* রানে ইংল্যান্ডের সামনে ৪৬৮ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য দাঁড় করায় অজিরা। জবাবে হাসিব হামিদ শুরুতেই ফিরলেও এবার ররি বার্নস টিকেছিলেন কিছুক্ষণ। তবে এবার আর দেখে মেলেনি রুট-মালানের প্রতিরোধেরও। তিন জনই ৪র্থ দিন শেষ হওয়ার আগে ফিরেছেন। সেদিন মাঠে নামার আগেই অণ্ডকোষে আঘাত পেয়ে চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন; মাঠে নেমে সেই জায়গায়ই এসে লাগে স্টার্কের গোলা। ব্যাথায় কাতরাতে থাকা রুট দিনের শেষ ওভারে এরপর ফেরেন ওই স্টার্কের বলেই।

    শেষ দিনে তাই ইংল্যান্ডের পরাজয় ছিল অবশ্যম্ভাবী। তবে প্রায় ৩০ ওভার একসাথে ব্যাট করে বাটলার-ওকস যখন এই অ্যাডিলেইডেই ডু প্লেসি-ডি ভিলিয়ার্সদের বীরত্বগাঁথার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তখন সেই রিচার্ডসন এসেই দারুণ এক ইন্সুইঙ্গারে উপড়ে ফেলেন ৪৪ রানে থাকা ওকসের স্টাম্প। তবে হার-না-মানা বাটলার যেভাবে রিচার্ডসনের কাছে ফিরলেন তা যেন দুঃস্বপ্নের দ্বিতীয় প্রহর। সব প্রশ্নের জবাব শক্ত হাতে দেওয়া বাটলার শেষমেশ ফিরলেন হিট উইকেট হয়ে। এরপর বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারতেও সময় নেয়নি অস্ট্রেলিয়া। নিজের ৫-উইকেট পূর্ণ করে রিচার্ডসন নিশ্চিত করেন অস্ট্রেলিয়ার জয়। টানা দুই জয়ে অস্ট্রেলিয়া তাই ছুটে যাচ্ছে ঘরের মাটিতে আরও একটা অ্যাশেজ জয়ের দিকেই।