• অ্যাশেজ ২০২১-২০২২
  • " />

     

    সুপার সিডনিতে যেভাবে জয়ের সমান ড্র পেল ইংল্যান্ড

    সুপার সিডনিতে যেভাবে জয়ের সমান ড্র পেল ইংল্যান্ড    

    অ্যাশেজ ৪র্থ টেস্ট, এসসিজি

    অস্ট্রেলিয়া ৪১৬/৮ (ডি.) ও ২৬৫/৬ (ডি.)

    ইংল্যান্ড  ২৯৪ ও ২৭০/৯

    পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ৩-০ তে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া

    ম্যাচসেরা: উসমান খাওয়াজা

     

    ‘শেষ রক্ষা হলো না ইংল্যান্ডের। পারলেন না জেমস অ্যান্ডারসন আর স্টুয়ার্ট ব্রড মিলে ম্যাচটা বাঁচাতে। চলতি অ্যাশেজে আরো একটি পরাজয় সঙ্গী হলো তাদের।’ 

    এতটুকু পড়ে কেউ কেউ নিশ্চয়ই ভ্রু জোড়া কুঁচকে ফেলেছেন ইতোমধ্যে। রিপোর্টার পাগল হয়ে গেল নাকি? না, ম্যাচের ফলাফল অমন হয়নি।  তবে হওয়ার সম্ভাবনা ছিল শতভাগ। 

    প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক আর দারুণ ছন্দে থাকা স্কট বোল্যান্ডের মতো পেসাররা যে দলে আছেন, তাদের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের টেলএন্ডাররা অমন পিচ কামড়ে পড়ে থাকবেন- ক’জনই বা ভেবেছেন? ক’জনই বা তাদের পক্ষে বাজি ধরবেন? পাঁড় ইংল্যান্ড সমর্থক হলে ভিন্ন কথা। তবে সেই সম্ভাবনা আর ফ্যাক্ট বিবেচনায় নিলে, লেখার শুরুটাও বোধহয় অমন হতেই পারত।

    সেই সুযোগটা দেননি জ্যাক লিচ, স্টুয়ার্ট ব্রড আর টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার নট আউট থাকা জেমস অ্যান্ডারসন। এই তিনজনের প্রাণপণ চেষ্টায় অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টে জয়ের সমতুল্য ড্র নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ইংল্যান্ড। কী দারুণ হাতেই না স্টার্ক-বোল্যান্ডদের প্রতিটা বল সামলেছেন তারা। বাইরের বল ছেড়ে, স্পিন সামলে, টার্ন বুঝে খেলেছেন নাথান লায়নকেও।  

    দিনের খেলার বাকি তখন তিন ওভার। আলোক স্বল্পতার কথা মাথায় রেখে থার্ড আম্পায়ার জানান, পেস বোলারদের দিয়ে বল করানো যাবে না। অধিনায়ক কামিন্স ডাকলেন স্টিভেন স্মিথকে। যিনি সর্বশেষ টেস্ট উইকেট পেয়েছেন প্রায় ছয় বছর আগে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। 

    স্মিথ যেন জ্যাকপট জিতলেন অজিদের জন্য। নিজের ওভারের শেষ বলে ইংল্যান্ডের আশার পিদিম হয়ে ওঠা লিচকে ফেরান এই লেগ স্পিনার। স্লিপে চমৎকার ক্যাচ নেন ডেভিড ওয়ার্নার। দুই ওভার, এক উইকেট; এমন সমীকরণ সামনে রেখে উইকেটে যান অ্যান্ডারসন। অপর প্রান্তে তাকে রেখে লায়নের ওভারটা সাবধানে কাটিয়ে দেন ব্রড। 

    দিনের শেষ ওভারে মুখোমুখি অ্যান্ডারসন-স্মিথ। সিডনির বাতাস তখন ছুঁয়েছে উত্তেজনার সর্বোচ্চ চুড়া।.চরম নাটকীয় এক শেষের অপেক্ষায় সবাই। আমব্রেলা ফিল্ড পজিশনে দাঁড়ানো অস্ট্রেলিয়ার ফিল্ডারদেরও একই অবস্থা। ম্যাচ জিততে অজিদের দরকার এক উইকেট। জয়ের সমান ড্র করতে ইংল্যান্ড তথা অ্যান্ডারসনের টিকে থাকা চাই এক ওভার। 

    টেস্টের সব নাটক, উত্তেজনা যেন অপেক্ষা করছিল এই ওভারটার জন্যই। হার্ড লেন্থে পিচ করিয়ে স্পিনে ধোঁকা দিতে চেয়েছেন স্মিথ। ঝুলিয়ে দেয়া টসড আপ ডেলিভারিতে সামনের পায়ে খেলিয়েছেন অ্যান্ডারসনকে। তবুও কাজ হয়নি, অ্যান্ডারসন যে কোনো ভুলই করেননি। স্মিথের ছয়টা বলই আটকেছেন টেস্ট ইতিহাসে সর্বোচ্চ নট আউট থাকা এই ব্যাটসম্যান। 

    আরো একবার নট আউট রইলেন অ্যান্ডারসন। হারের কিনারায় ঝুলতে থাকা দলকে উদ্ধার করেছেন। চরম নাটকীয়, রুদ্ধশ্বাস একটা সেশনের অবসান হয়েছে তারই ব্যাটে। টেস্টের সব রোমাঞ্চ যে জমা থাকে শেষ দিনের শেষ সেশনের জন্য, সেটাই ঘুরেফিরে এলো বারবার। 

    ইংল্যান্ড পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করেছিল স্কোরবোর্ডে বিনা উইকেটে ৩০ রান নিয়ে। সামনে ছিল ৩৮৭ রানের বিশাল লক্ষ্য। সেই পথে মৃদুমন্দ তালে হাঁটছিল ইংলিশরা। তাদের জন্য জয়ের পথটা আরো কঠিন করে তোলেন বোলান্ড, গ্রিন আর লায়ন মিলে। ৯৬ রানের ভেতর টপাটপ তিন উইকেট তুলে নেন তারা। ৬৯ রানের জুটিতে জো রুট-বেন স্টোকস মিলে সেই ধাক্কা সামলে নেন অনেকটাই।  কিন্তু রুটকে ফিরিয়ে আবারও সিডনিকে সরগরম করে তোলেন বোল্যান্ড। 

    এরপর দলের সর্বোচ্চ স্কোরার স্টোকসও বেশিক্ষণ থাকেননি। লায়নের বলে স্মিথের হাতে ক্যাচ দেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। স্টোকসের পর এক প্রান্ত আগলে রাখেন জনি বেয়ারস্টো। বেয়ারস্টো অবিচল থাকলেও, কামিন্সের জোড়া আঘাতে ফিরে যান জস বাটলার ও মার্ক উউ।  

    লিচকে সাথে ড্র’য়ের সংকল্প বাঁধেন বেয়ারস্টো। কিন্তু অজি অধিনায়ক কামিন্সের অসাধারণ বোলিং চেঞ্জ আর ফিল্ডিং প্লেসমেন্টে ফিরে যান বেয়ারস্টো। এরপর শেষ সেশনের নাটকীয়তা, উত্তেজনা তো জন্ম দিয়েছে আরো একটা অ্যাশেজ রোমাঞ্চের।

    দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করে অজিদের নায়ক উসমান খাওয়াজা। প্রায় আড়াই বছর পর ডাক দলে ডাক পেয়েছেন তিনি। ঘরের মাঠে  প্রত্যাবর্তনটাও রাঙিয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ইনিংস ঘোষণা করে স্কোরবোর্ডে ৪১৬/৮ নিয়ে। খাওয়াজা একাই করেন ১৩৭। ব্রড নেন পাঁচ উইকেট; ক্যারিয়ারের ১৯তম বার।

    জবাবে ব্যাট করতে নেমে প্রবল হোঁচট খায় চলতি অ্যাশেজের প্রথম তিন টেস্ট হারা ইংল্যান্ড। ৩৬ রানেই নেই চার উইকেট। স্টার্ক-বোলান্ড-গ্রিন ত্রয়ীর তোপে দিশেহারাহয়ে পড়ে ইংল্যান্ডের টপ অর্ডার। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলে স্টোকস-বেয়ারস্টো জুটি। ষষ্ঠ উইকেটে দুজন মিলে করেন ১২৮। স্টোকস ব্যক্তিগত ৬৬ রানে ফিরলেও, সেঞ্চুরি হাঁকান বেয়ারস্টো। ১১৩ রান করেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। 

    দুই ইনিংসেই অজিদের পেস ব্যাটারির নেতৃত্ব দিয়েছেন বোল্যান্ড। ম্যাচে নিয়েছেন সাত উইকেট। যার মধ্যে প্রথম চারটি নেন  প্রথম ইনিংসে ৩৬ রানের খরচায়। 

    অ্যাশেজ ইতোমধ্যে নিজেদের করে নিয়েছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া।  ৩-০ তে এগিয়ে থেকে সিডনি টেস্ট শুরু করা অজিরা অল্পের জন্য ব্যবধানটা ৪-০ করতে পারেনি। জয়-পরাজয় কিংবা ড্র’য়ের সূক্ষ্ম মার্জিনটা টেনে দিয়েছেন অ্যান্ডারসন-ব্রড মিলে।