• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    শরিফুল-মিরাজদের পর শান্ত-জয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নের এক দিন

    শরিফুল-মিরাজদের পর শান্ত-জয়ে বাংলাদেশের স্বপ্নের এক দিন    

    ১ম টেস্ট, মাউন্ট মঙ্গানুই (টস- বাংলাদেশ/বোলিং)

    নিউজিল্যান্ড- ৩২৮ (কনওয়ে ১২২, নিকোলস ৭৫, ইয়াং ৫২, শরিফুল ৩/৬৯ , মিরাজ ৩/৮৬ , মুমিনুল ২/৬)

    বাংলাদেশ- ১৭৫/২ ( জয় ৭০*, শান্ত ৬৪, সাদমান ২২, ওয়্যাগনার ২/২৭)   

    ২য় দিন, স্টাম্পস

     

    হেনরি নিকোলস ও রচীন রবীন্দ্র যখন ব্যাট হাতে নামছিল তখন কি বাংলাদেশ ভক্তরাও ভেবেছিলেন যে দিনের প্রথম সেশনেই বাংলাদেশের ওপেনাররাও এভাবেই মাঠে নামবে? দুর্দান্ত এক সকালে বাংলাদেশের বোলাররা সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিয়েছেন; আর দিনটা পুরোপুরি বাংলাদেশের করে রেখেছেন মাহমুদুল হাসান জয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ১০৪ রানের জুটির পর শান্ত ফিরলেও ৭০ অপরাজিত আছেন জয়, সাথে আছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। 

     

    জয়ের শুরুটা কিছুটা হলেও ছিল নড়বড়ে। লাঞ্চের আগের তিন ওভারে সাউদির বল ব্যাটের কানায় লেগেছিল একাধিকবার। তবে লাঞ্চের পরে জয় নড়েচড়ে বসেন। একাগ্র মনোযোগে বল ছেড়েছেন, ভাল বলকে যথাযথ সম্মান দিয়েছেন। বিদেশের মাটিতে প্রথম খেলতে নামার কারণে কিছুটা জবুথবু ছিলেন বলে খারাপ বলের সুবিধা অবশ্য আদায় করতে পারেননি সেই অর্থে, যা অবশ্য পারেননি তার ওপেনিং সঙ্গী সাদমান ইসলামও। থিতু হওয়ার চেষ্টা করতে থাকা সাদমান নিল ওয়্যাগনারের লো-ফুল টসে তার হাতে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে ২২ রানে ফিরে যান। উইকেটে এসে নাজমুল হোসেন শান্ত অবশ্য খেলেছেন সপ্রতিভ এক ইনিংস, রান তুলে নিচ্ছিলেন দ্রুত। এমনকি নিজের ফিফটিও পূর্ণ করেছেন রচীন রবীন্দ্রকে বিশাল এক ছয় মেরে। ছুটতে থাকা শান্তকে কোনও পর্যায়েই জড়তা ছুঁয়েছে বলে মনে হয়নি। তবে ওয়্যাগনার যখন এক প্রান্ত থেকে একের পর এক বাউন্সার ছুঁড়ে যাচ্ছিলেন তখন যেন বাউন্সারের জন্যই তিনি প্রস্তুতি নিয়ে রাখছিলেন। ওয়্যাগনারের ফাঁদে তাই শেষমেশ ঠিকই পা দেন তিনি। ক্রমাগত বাউন্সারের মাঝেই আউট সুইঙ্গার দিলে শান্তর ফ্রন্টফুট আর ঠিক জায়গায় যায়নি। স্লিপে থাকা উইল ইয়াংয়ের হাতে ক্যাচ দিয়ে ৬৪ রানে তাই শেষ হয় তার ইনিংস। জয়কে সাথে নিয়ে এরপর অবশ্য কোনও বিপদ ঘটতে দেননি মুমিনুল হক। শেষ বলে জেমিসন এলবিডব্লিউয়ের জোরালো আপিল বিফলে গেলে মুমিনুল তাই দিন শেষ করেন এক চিলতে হাসি মুখেই।  

     

    এই মুমিনুলের অধিনায়কত্ব নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলতেই পারেন। আজও বাউন্সারের ফাঁদে ফেলার যেই পরিকল্পনা তিনি এঁটেছিলেন তা পুরোই মাঠে মারা গিয়েছিল। তবে বোলারদের কাছে তিনি যা চেয়েছিলেন তা পেয়েছেন দুহাত ভরেই। মেহেদী হাসান মিরাজকেও দারুণভাবে ব্যবহার করেছেন তিনি। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নরাও উইকেট দিয়ে এসেছে স্বভাববিরুদ্ধভাবেই। গতকাল সকালের মত দুর্দান্ত কোনও স্পেল বাংলাদেশের বোলাররা আজ করতে পারেননি। এক প্রান্তে শরিফুল চাপ ধরে রাখলেও অন্য প্রান্তে তাসকিন বা এবাদত আজ চাপ তৈরি করতে পারেননি। তবে গতকাল মিরাজ কিছুটা অকার্যকর থাকলেও আজ যেমন চাপ তৈরি করেছিলেন, তেমনই টার্ন আদায় করে শেষ দিকে তুলে নিয়েছেন উইকেটও। 

     

    মিরাজদের উইকেটের রাস্তা দিনের শুরুতেই করে দিয়েছিলেন আগের দিনেও নিজের প্রতিভার ছাপ রাখা শরিফুল। অফ স্টাম্পের লাইনে গুড লেংথে বল ফেলে রবীন্দ্রকে সামনে টেনে এনেছেন। ফলাফলস্বরূপ রবীন্দ্রর ব্যাটের কানায় বল লেগে দ্বিতীয় স্লিপে থাকা সাদমানের কাছে বল গেলে নিচু হয়ে আসা ক্যাচ দক্ষতার সাথে লুফে নেন তিনি। রবীন্দ্রর বিদায়ে এক প্রান্ত আগলে বাংলাদেশের বাউন্সার পরিকল্পনাকে পুরোপুরি ভেস্তে দিয়ে নিজের ১২তম টেস্ট ফিফটি তুলে নেন নিকোলস। তবে আরেক প্রান্তে মিরাজকে আক্রমণ করতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কাইল জেমিসন। এরপর সাউদিও মিরাজের বলে মুমিনুলকে ক্যাচ অনুশীলনের সুযোগ করে দিয়ে ফিরে যান। পরের বলেই দারুণ এক অফ স্পিনে নিল ওয়্যাগনারকে স্টাম্পের পিছে তালুবন্দি করেন। তবে আম্পায়ার আউট না দিলে লিটনের জোরালো আবেদনে সাড়া দিয়ে মুমিনুল রিভিউ নেওয়াতে ঠিকই ফিরতে হয় তাকে। তবে হ্যাটট্রিকটা আর পাওয়া হয়নি মিরাজের। মিরাজের বলে তীক্ষ্ণ ঘূর্ণি দেখেই মুমিনুল নিজে আক্রমণে আসেন। এতক্ষণ শেয়ানে শেয়ানে লড়ে যাওয়া নিকোলস তাতেই মনোযোগ হারিয়ে বসেন। দ্রুত রান তোলার তাগিদে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে সংযোগ হয়নি তার ঠিকমত; আগের বলেই ক্যাচ ফেলা  সাদমান সেবার আর ভুল করেননি। নিউজিল্যান্ড তাই তাদের ইতিহাসে বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন ৩২৮ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল। অসাধারণ এক সকালের পর ব্যাটিংয়েও বাংলাদেশ তাই স্বপ্নের মত এক দিন কাটানোয় দিনটার পরিসমাপ্তি বাংলাদেশের জন্য ছিল উপভোগ্য হয়েই। তবে এখনও পাড়ি দিতে হবে বহুদূর। তৃতীয় দিনে ম্যাচের মোড় যাতে অন্য দিকে না ঘোরে সেজন্য উইকেটের সুবিধা বাংলাদেশকে নিতেই হবে। প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মুমিনুলের ব্যাট আরেকবার হাসলে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ তাই হয়ত থাকবে বাংলাদেশের কাছেই।