• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    পেস, অ্যাকুরেসি, আগ্রাসন- এবাদতের স্বপ্নের স্পেলটা যেমন ছিল...

    পেস, অ্যাকুরেসি, আগ্রাসন- এবাদতের স্বপ্নের স্পেলটা যেমন ছিল...    

    এবাদত হোসেনকে নিয়ে আপনি প্রশ্ন তুলতে পারেন। এই টেস্টের আগেও ১০ ম্যাচে তার ছিল ১১ উইকেট। এমনকি এই টেস্টের একাদশ ঘোষণার পরও প্রশ্ন উঠেছিল, রাহীকে না নিয়ে কেন এবাদতকে নেওয়া হলো? সেই প্রশ্নের উত্তর সবাই বোধ হয় পেয়ে গেছেন।

    টেস্টে ফাস্ট বোলিং করে বাংলাদেশের কোনো পেসার আগুন ঝরাচ্ছেন, ১৪০ কিলো গতির বলে প্রতিপক্ষের স্টাম্প ছারখার করে ফেলছেন- এসব দৃশ্য খুব নিয়মিত নয়। বাংলাদেশের কোনো পেসারের টেস্টে ৫ উইকেট পাওয়ার স্মৃতিও সেই ৯ বছর আগের- ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়েতে ছিল রবিউল ইসলামের। এরপর রাহী, তাসকিন, মোস্তাফিজরা বিক্ষিপ্তভাবে কিছু স্পেল ভালো করেছেন। কিন্তু শুধু প্রতিপক্ষের টপ অর্ডারকে একাই গুটিয়ে দিচ্ছেন- তাও আবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদেরই মাটিতে- বাংলাদেশের কোনো পেসারের জন্য এটি একটু বেশিই কষ্টকল্পনা ছিল। বিশেষ করে এবাদতের জন্য তো বটেই, দলের তিন পেসারের মধ্যে যার জায়গাটা সম্ভবত বেশি নড়বড়ে ছিল।

    এবাদতের পেস নিয়ে আসলে সংশয় ছিল না কখনোই। ১৪০ গতির বলে নিয়মিত বল করেছেন। দুই বছর আগের বিপিএলে ১৪২ গতির একটা ইয়র্কারে উপড়ে ফেলেছিলেন শেন ওয়াটসনের স্টাম্প। সেই বিপিএলে নিয়মিতই গতির ঝড় তুলে গেছেন। কিন্তু সমস্যাটা ছিল ধারাবাহিকতা, টানা ভালো জায়গার বল করে যাওয়ার সামর্থ্যের অভাব। সেজন্যই ১০টি টেস্ট খেলে ফেললেও একটা সময় তার বোলিং গড় ছিল ১০০-র বেশি। এমনকি এই টেস্টের প্রথম ইনিংসের শুরুর দিকেও তার বল ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। তাসকিন- শরিফুলের দুর্দান্ত ওপেনিং স্পেলের পর এবাদত এসে খানিকটা এলোমেলো বল করে চাপ আলগা করে ফেলেছিলেন। সবকিছু রেখে দিয়েছিলেন দ্বিতীয় ইনিংসের জন্য।

    সকালের স্পেলেই এবাদত আগুন ঝরাছিলেন। বেশ কয়েকবার দুই ব্যাটসম্যান উইল ইয়াং ও ডেভন কনওয়েকে বিট করেছেন। কনওয়েকে ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ইনসাইড এজ করিয়ে আউট করেছেন। সেই স্পেলে এতোটাই তেঁতে ছিলেন, অতি উত্তেজনায় হাস্যকর একটা রিভিউও নিয়েছেন অধিনায়ককে দিয়ে। তবে বেশ কয়েকবার বল এজ হয়েছে, ভাগ্য ভালো থাকলে ওই স্পেলেই আরও গোটাদুয়েক উইকেট নিতে পারতেন।

    এরপর একের পর সুযোগ হাতছাড়া- দুইটি সহজ ক্যাচ মিস, সহজ রান আউটের সুযোগ মিসের পর যখন মনে হচ্ছিল বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস তলানিতে, নিউজিল্যান্ড ধীরে ধীরে ম্যাচটা বের করে নিয়ে যাবে, তখনই দৃশ্যপটে আবার এলেন এবাদত। দিনের শেষ স্পেলে বল যখন পুরনো হয়ে গেল, খানিকটা রিভার্স সুইং করছিলেন। এবাদত মনযোগ দিলেন বেসিকেই। গতিটা ঠিক রেখে বল স্টাম্পে করে গেলেন। ইয়াং পুল করতে গিয়ে লাইন মিস করতে গিয়ে বলেন বোল্ড।

    ক্রিজে একেন হেনরি নিকোলস। এবার রাউন্ড দ্য উইকেটে এবাদত, প্রথম বলটাই লাগল প্যাডে। জোর আপিল হলো, কিন্তু সাড়া দিলেন না আম্পায়ার। রিভিউ নেই বাংলাদেশের, এবাদত আবার বল করতে গেলেন। পরের বলটা একেবারে ফুল লেংথের, এবার পুরোপুরিই গতির কাছে হার মানলেন নিকোলস। বল ছত্রখান করে দিল স্টাম্পস।

    টম ব্লান্ডেলকে পেলেন এক ওভার পর। প্রথম বলটা ইনসাইড এজ পাস হলো, একটু এদিক হলেই সেটা জমতে পারত কিপারের গ্লাভসে। এক বল পর এবার আবার লেট সুইং, ব্লান্ডেলের প্যাডে লাগল। এবার আম্পায়ার আঙুল তুলে দিলেন, এবাদতের স্যালুট। দুই ওভারের মধ্যে ৩ উইকেট নিয়ে বদলে দিলেন ম্যাচের গতিপথ।

    এবাদত অবশ্য জানেন, কাজ তার শেষ হয়নি। ৫ উইকেট পেতে মাত্র ১ উইকেট দরকার তার। হতে পারে, ৬, ৭ এমনকি তার চেয়েও বেশি। এবাদত চাইবেন আরেকটি স্বপ্নের স্পেল করতে। মাউন্ট মঙ্গানুইতে আরেকটি স্পেলে হয়ে যেতে পারে ইতিহাস। এই টেস্টে এমন অনেক কিছুই হয়েছে যা আগে হয়নি। এবাদতের স্পেল তার মধ্যে ওপরের দিকেই থাকবে।