• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশের স্বপ্নের ভোর

    মাউন্ট মঙ্গানুইতে বাংলাদেশের স্বপ্নের ভোর    

    ১ম টেস্ট, মাউন্ট মঙ্গানুই (টস- বাংলাদেশ/বোলিং)

    নিউজিল্যান্ড- ৩২৮ ও ১৬৯  (ইয়াং ৬৯, টেইলর ৩৭*, ল্যাথাম ১৪, এবাদত ৬/৪৬ , তাসকিন ৩/৩৬)

    বাংলাদেশ- ৪৫৮ ও ৪২/২ ( শান্ত ১৭, মুমিনুল ১৩*, বোল্ট ৪/৮৫, জেমিসন ১/১২, সাউদি ১/২১)   

    বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী


    অবিশ্বাস্য! টেস্ট চ্যাম্পিয়নরা ধরাশায়ী হল বাংলাদেশের কাছে, সেটাও নিজেদের মাটিতে। মুশফিকুর রহিম যখন চার মেরে লক্ষ্য পূরণ করলেন তখনও যেন মনে হচ্ছিল স্বপ্ন। এই নিউজিল্যান্ড যে কত ১৭ টেস্ট ধরে নিজেদের মাটিতে অপরাজিত! এই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে যে এর আগে কোনও ফরম্যাটে জয় পায়নি বাংলাদেশ। সেসব পরিসংখ্যানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে, পয়েন্ট তালিকার তলানিতে থাকাকে তোয়াক্কা না করে বাংলাদেশ ছিনিয়ে নিল অসাধারণ এক জয়।

     

    এবাদত হোসেন - তাসকিন আহমেদের আগুনে স্পেলে ১৬৯ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। প্রথম ইনিংসে ৮৮ রান করা অধিনায়ক মুমিনুল হক এরপর উইকেটে থেকেই নিশ্চিত করেছেন ৮ উইকেটের জয়। 

    এই জয়ের স্বপ্নের পালে জোর হাওয়া লাগিয়েছিলেন এই এবাদত, শেষ বিকেলের অসামান্য এক স্পেলে। শেষ দিনের শুরুটা করলেন সেখান থেকেই। নিজের প্রথম ওভারেই উপড়ে ফেললেন রস টেইলরের স্টাম্প। ২০১৩ সালে রবিউল ইসলামের পর প্রথম বাংলাদেশ পেসার হিসেবে পূর্ণ করলেন ৫ উইকেট। জয়ের সুবাস পেতে শুরু করা টাইগাররা এরপর রীতিমত ঝাপিয়ে পড়ে কিউইদের ওপর। মিড উইকেটে শরিফুলের দুর্দান্ত ক্যাচে কাইল জেমিসেনকেও ফেরান এবাদত। পরের ওভারেই পথের কাঁটা হয়ে থাকা রাচিন রবীন্দ্রকে লিটনের তালুবন্দি করে ফেরান তাসকিন। নিজের পরের ওভারে টিম সাউদির স্টাম্প উপড়ে তাসকিন গর্জে ওঠেন, গর্জে উঠে পুরো দল। অসাধারণ বোলিংয়ের শেষটাও তো হওয়া চাই সেরকম। বদলি ফিল্ডার তাইজুল ইসলাম উপহার দিলেন সেরকমই এক মুহূর্ত। মিরাজের বলে ট্রেন্ট বোল্ট উড়িয়ে মারলে পিছে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নেন তিনি। বাংলাদেশ তখন জয় থেকে ৪০ রান দূরে।

    জয়ের অনুপস্থিতিতে সাদমান ইসলামের সাথে ওপেন করতে নামেন নাজমুল হোসেন শান্ত। সাদমান শুরুতেই ফেরার পর নিজের নামের সুবিচার করে শান্ত এক ইনিংস খেলেন তিনি। জয়ের দ্বারপ্রান্তেএসে ১৭ রানে ফিরলেও অন্য প্রান্তে মুমিনুল অনড় ছিলেন। এরকম এক মুহুর্তে জয়ের বিকল্প কিছু হতে তো দিবেন না অধিনায়ক। হলও না। বাংলাদেশ পেল অবিস্মরণীয় এক জয়। বাংলাদেশ হয়তো ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডদের হারিয়েছে। তবে টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের দূর্গে পা রেখে প্রথম দিন থেকেই তাদের চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস কয়টা দলই করতে পেরেছে! করে দেখাল বাংলাদেশ, তাও সেটা পাকিস্তানের কাছে ঘরের মাটিতে কুপোকাত হয়ে টালমাটাল হয়ে পড়া বাংলাদেশ! এই জয় তাই সন্দেহাতীতভাবে বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের সেরাই বলা যায়। মমিনুল-লিটনদের সাথে তরুণ শান্ত, শরিফুল, তাসকিন, মিরাজরা যেভাবে মেলে ধরেছে; সমালোচকদের মুখে কুলুপ এঁটে এবাদত যে ২২ গজে আগুন ঝরালেন- বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা যাতে সেখান থেকেই হয় সেই আশায় থাকবে তারা।