• বাংলাদেশের নিউজিল্যান্ড সফর
  • " />

     

    সংখ্যায় সংখ্যায় বাংলাদেশের 'ইতিহাস'

    সংখ্যায় সংখ্যায় বাংলাদেশের 'ইতিহাস'    

    সেই ২০১৭ সালে হেরেছিল, এরপর ১৭ ম্যাচ ধরে ঘরের মাটিতে অপরাজিত কিউইরা। সেই টেস্ট চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ডকেই কিনা হারিয়ে দিল বাংলাদেশ! তাও কোন বাংলাদেশ? হারের বৃত্তে ঘোরপাক খেতে খেতে রীতিমতো দিশেহারা এক দল। যারা প্রত্যাশার বাইরে গিয়েই বাংলাদেশের সমর্থকদের আনন্দে আত্মহারা হওয়ার সুযোগ করে দিল মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস গড়ে। সেই সাথে বাংলাদেশ বন্ধ করে দিল নিউজিল্যান্ডের ঘরের মাঠে টানা আট সিরিজ জয়ের পর নবমটি জেতার পথও। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৩২ ম্যাচ হারের পর বাংলাদেশ পেল সেই কাঙ্খিত জয়, গেল দশ বছরে এশিয়ান কোন দলের নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একমাত্র জয়। যে জয় বাংলাদেশ পেয়েছে দাপটের সাথেই খেলে, যেখানে প্রতিদিনই ঘটেছে কিছু না কিছু! সেসবই একসাথে দেখে নেওয়া যাক সংখ্যায় সংখ্যায়…

    ২ - ঘরের বাইরে খেলতে গিয়ে মুমিনুল দুই শ বলের বেশি ক্রিজে টিকে থাকতে পেরেছেন মাত্র দুই ইনিংসে। শ্রীলংকার বিপক্ষে ২০২১ সালেই ১২৭ রানের ইনিংস খেলার পথে খেলেছিলেন ৩০৪ বল, আর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে খেললেন ২৪৪ বল। মজার একটা তথ্য হচ্ছে, মুমিনুল এর আগে নিউজিল্যান্ডে যে তিন ম্যাচ খেলেছিলেন, তাতে ছয় ইনিংস মিলিয়েই তিনি খেলেছিলেন ২৬২ বল। আর মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে এক ম্যাচেই খেলে ফেলেছেন এর থেকে ২৬ বল বেশি। বে ওভালে বাংলাদেশের ইতিহাসে তাঁর অবদান ছিল ২৮৮ বলে ১০১ রান। 

    ০ - এক ইনিংসে বাংলাদেশের পেসারদের দশ উইকেটের সবকটি নেওয়ার ঘটনার সংখ্যা শূন্য। মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম নয়টিই পেসাররা নিয়ে ফেলেছিলেন, কিন্ত শেষটি মিরাজ তুলে নিলে রেকর্ডটা আর হয় না। এর আগেও এক ইনিংসে বাংলাদেশি পেসাররা নয়টি উইকেট নিতে পেরেছিলেন তিনবার। প্রথম ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে, সে বছরের শেষের দিকেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আরেক ম্যাচে এবং সর্বশেষ শ্রীলংকার বিপক্ষে। কিন্ত এই তিনবারেই বে ওভালের ইবাদত-তাসকিনদের থেকে বেশি ওভার লেগেছিল ৯টি উইকেট নিতে। ইবাদত-তাসকিন-শরিফুল ত্রয়ী মিলে দ্বিতীয় ইনিংসে বল করেছিলেন মাত্রই ৪৭ ওভার। 

    ১৩ - বাংলাদেশি পেসাররা মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে ইতিহাস গড়ার পথে উইকেট নিয়েছিলেন ১৩টি। যা এক ম্যাচে বাংলাদেশি পেসারদের থেকে আসা সর্বোচ্চ উইকেট। এর আগে বাংলাদেশি পেসাররা এক ম্যাচে ১১টির বেশি উইকেট নিতে পারেননি কখনোই। ২০১৩ সালের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগার পেসাররা এক ম্যাচে দশটির বেশি উইকেট নিয়েছিলেন প্রথমবারের মতো।

    ১৫৪১ - সাদা পোষাকে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ দলকে এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি সময় মাঠে কাটাতে বাধ্য করেছে এ ম্যাচেই। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বে ওভালে বাংলাদেশের ৪৫৮ রানের ইনিংস মিনিটের হিসাবে সবচেয় দীর্ঘ। ক্রিজে টাইগাররা সময় কাটিয়েছিলেন ১৫৪১ মিনিট। ১৫০০ এর বেশি মিনিট ব্যাট করার আরও দুটি নজির রয়েছে বাংলাদেশের। পাল্লেকেলেতে ২০২১ সালেই শ্রীলংকার বিপক্ষে টেস্টে ১৫৩৯ মিনিট ব্যাট করেছিলেন মুমিনুল-শান্তরা। আর ২০১৩ সালে লংকানদের বিপক্ষে আরেক ম্যাচেই বাংলাদশের ইনিংস টিকেছিল ১৫২০ মিনিট পর্যন্ত, সে ইনিংসেই অবশ্য ১১৮৩ বল খেলেছিল বাংলাদেশ, যা বাংলাদেশের এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি বল খেলার রেকর্ড। এক ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১০৬১ বল খেলা হয়েছিল বে ওভালের ওই মিনিটের হিসাবে সবচেয়ে দীর্ঘ ইনিংসটাতেই। 

    ৫ - মেহেদী মিরাজ ও মুমিনুল হক মিলে প্রথম ইনিংসে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। গত চার বছরে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এক ইনিংসে স্পিনারদের পাঁচ উইকেট নেওয়ার ঘটনা এর বাইরে একটিও নেই। তবে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশ স্পিনারদের থেকে পাঁচটির বেশি উইকেট পেয়েছিল এর আগেও একবার। ২০১৭ সালে ক্রাইস্টচার্চের সে ম্যাচে সেই ছয় উইকেটেও অংশীদার ছিলেন মিরাজ, তাঁর দুটির সঙ্গে বাকি চারটি ছিল সাকিবের।

    ১৩০ - প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ১৩০ রানের লিড নিতে পেরেছিল। যা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে বাংলাদেশের নেওয়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লিড। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০২০ সালে ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের লিড গিয়ে পৌঁছেছিল ২৯৫ রান পর্যন্ত। এই দুটির বাইরে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করে বাংলাদেশের শতরানের বেশি লিড নেওয়ার ঘটনা আছে আরও একটি, সেটি ২০১৭ সালে কলম্বোতে শ্রীলংকার বিপক্ষে ১২৯ রানের।

    ১২ - এশিয়ার বাইরের মাটিতে বাংলাদেশের মোট ১২ ব্যাটসম্যান তাঁর ইনিংস দুই শ বলের বড় করতে পেরেছেন। সেই ১২ জনের মধ্যে তিনজন আছেন ওপেনার। তবে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র মাহমুদুল হাসান জয়ই নিউজিল্যান্ডের মাটিতে একমাত্র ওপেনার হিসেবে দুই শ বলের বেশি খেলেছেন এক ইনিংসে। তামিম ইকবালের এশিয়ার বাইরে বলের হিসাবে সবচেয়ে দীর্ঘ ২৪৩ বলে ১২৮ রানের ইনিংসটি এসেছে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আর মেহরাব হোসেনের ২২৪ বলে ৭১ রানের ইনিংস ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে মাহমুদুল হাসান জয়ের আগে কোন ওপেনার সর্বোচ্চ খেলতে পেরেছিলেন ১৪৪ বল, ২০০৮ সালে জুনায়েদ সিদ্দিকী ডানেডিনে সে ইনিংসে করেছিলেন ৭৪ রান। 

    ১ - জয়-শান্তের ১০৪ রানের জুটির বাইরে গেল পাঁচবছরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দ্বিতীয় উইকেটে শতরানের পার্টনারশিপ হয়েছে মাত্র একটি। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের স্টোনম্যান ও ভিঞ্চ মিলে দ্বিতীয় উইকেটে গড়েছিলেন ১২৩ রানের জুটি। তাদের পরে একমাত্র এক শ রানের বড় জুটিটা এসেছে প্রথম ইনিংসে প্রথম উইকেট পড়ার পর শান্ত ও জয়ের ব্যাট থেকেই। 

    ৬-৪৬ - এবাদতের ৪৬ রানে ৬ উইকেট বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে দ্বিতীয় সেরা বোলিং ফিগার। ২০০৮ সালে শাহাদাত হোসেন রাজীবের দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ২৭ রানে ছয় উইকেট সেরা। এই দুজনের বাইরে বাংলাদেশের আর মাত্র দুই পেসারেরই ইনিংসে ছয় উইকেট নেওয়ার কীর্তি আছে। মানজুরুল ইসলাম ও রবিউল ইসলাম দুজনেরই সেই কীর্তি এসেছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

    ১৬৯ - দ্বিতীয় ইনিংসে ১৬৯ রানে অলআউট হয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড টেস্টে তাদের সর্বনিম্ন স্কোরের দেখাও পেয়ে গেছে এ ম্যাচে। এর আগে ২০০৮ সালে ১৭১ রানে অলআউট হওয়াটাই ছিল তাদের সর্বনিম্ন। তবে সেটি ছিল চট্টগ্রামে। আর এবারেরটা মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে, যা এশিয়ার বাইরে বাংলাদেশের কোন দলকে দুই শ রানের কমে অলআউট করার তৃতীয় ঘটনা। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১২৯ ও ১৮১ রানে বাংলাদেশ অলআউট করেছিল দুটি ভিন্ন সফরে গিয়ে।