• বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ
  • " />

     

    নাসুমের 'স্পিরিট অফ ক্রিকেট' প্রদর্শন এবং মোসাদ্দেকের আক্ষেপ

    নাসুমের 'স্পিরিট অফ ক্রিকেট' প্রদর্শন এবং মোসাদ্দেকের আক্ষেপ    

    স্পিরিট অফ ক্রিকেট। যা নিয়ে নানান মুনির নানান মত। সব বিতর্কই মূলত হয় 'মানকাডিং' নিয়ে। তবে 'ওয়াক' করা নিয়ে হয়তো তেমন দ্বিমতের অবকাশ থাকে না। আম্পায়ারের আউট না দেওয়া সত্ত্বেও নিজের ইচ্ছায় ব্যাটসম্যানের আউট হয়ে নেমে যাওয়াটা অধিকাংশের চোখেই ভালো লাগার। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আজ ঘটে গেলো এমনই এক ঘটনা। 

    ঘটনাটা প্রথম ইনিংসের ৪৬তম ওভারের। ওভারের শেষ বলটি করলেন বাঁহাতি পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী। নাসুম সরে গিয়ে খেলতে চাইলেন, বল তাঁর কথা না শুনে চলে গেল কিপারের হাতে। বোলার মৃত্যুঞ্জয় ও কিপার অনিকের জোরালো আবেদন, আম্পায়ার অনড়। মৃত্যুঞ্জয় হতবাক। নাসুম কয়েক মূহুর্ত কী যেন ভাবলেন! আম্পায়ারের আঙুল উঠা না দেখে পরে নিজের ইচ্ছায়ই ক্রিজ ছেড়ে চলে গেলেন।

    মাঠে থাকা অবস্থায়ই নাসুম জয় করে নিয়েছেন প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দেরও হৃদয়। মৃত্যুঞ্জয় তখনই দৌড়ে এসে প্যাভিলিয়নের পথ ধরা নাসুমকে বুকে জড়িয়েছেন। বিরোধী দলের অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেনও স্পিরিট অফ ক্রিকেটের নজির দেখানোয় মাঠেই সাধুবাদ জানিয়েছেন বাঁহাতি এই স্পিনারকে। 

    ব্যাট হাতে নাসুমের দিনের সমাপ্তিটা হলো সুন্দর এক দৃশ্যের অবতারণা ঘটিয়ে। পরে বল হাতেও নাসুম টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ভালো দিন পার করলেও শেষটা সুন্দর হতে পারেনি। ১৬২ রানের পুঁজি নিয়ে লড়তে নেমে মিজানুর-সৌম্যের জুটি তাদের জন্যে হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছিলো৷ ১২ ওভারেই ৬৫ রান তুলে ফেলে সেন্ট্রাল জোন। নাসুমকে বোলিংয়ে আনলেন কাপ্তান জাকির, নিজের প্রথম বল করতে এসেই তিনি দিয়ে দিলেন উইকেট। স্টেপ আউট করে মারতে গিয়ে নাসুমের ফ্লাইটেড ডেলিভারিতে লং অফে ধরা খেয়ে ২১ রানে ফিরলেন সৌম্য। 

    অপর প্রান্ত থেকে মাহেদী এসে আব্দুল মজিদকে দ্রুতই ফিরিয়ে দিলেন। মাহেদীর সাথে উজ্জীবিত নাসুমের বোলিংয়ে সেন্ট্রাল জোনের উপর চেপে বসল সাউথ জোন। তারই এক ফাঁকে ক্রিজে ভোগতে থাকা মিথুনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেললেন নাসুম। তবে তিন উইকেট তুলে নিলেও তখনও উইকেটে তিথু হয়ে যাওয়া মিজানুর নিঃসন্দেহে ছিলেন সাউথ জোনের ভয়ের কারণ। লো-স্কোর তাড়ায় তাঁর একটি ইনিংসই জয় এনে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট প্রমাণিত হতে পারতো।

    নাসুম এমন কিছুই হতে দেননি। মিজানুরকে আর্ম বলে পরাস্ত করে এলবিডব্লিউর শিকার বানিয়ে ৩৯ রানের বেশি করতে দেননি। ১১ রানেই সেন্ট্রালের চার উইকেট শিকার করে ম্যাচে ফিরে আসে সাউথ জোন। প্রথম চার ওভার শেষে নাসুমের বোলিং ফিগার দেখতে ছিল এরকম- ৪-১-৪-৩। 

    নাসুমকে এক প্রান্ত দিয়ে এরপর টানা বোলিং করিয়ে গেছেন জাকির। তবে এপ্রান্ত-ওপ্রান্ত থেকে আর কোন উইকেট বের করতে পারেননি সাউথ জোনের বোলাররা। শেষ ওভারে ওয়াইড-বাইয়ে পাঁচের সাথে দুই চারে মোট ১৪ রান দিয়ে দেন নাসুম। তাই প্রথম নয় ওভারে ১৮ রান দেওয়া নাসুমের স্পেল শেষ হয় ৩২ রানে। 

    অতিরিক্ত কিছু করেননি নাসুম। হাওয়ায় কিছুটা বেশি সময় বল ভাসিয়েছেন। 'স্লো এন্ড লো' এই পিচে টার্ন আদায় করে নিয়েছেন কিঞ্চিৎ বেশি। সেই সাথে জায়গামতো বোলিং করা থেকে সরে না যাওয়ার চেষ্টাটা অব্যাহত ছিল অধিকাংশ সময়েই৷ টুর্নামেন্টে নাসুম যে চারটি ম্যাচে খেলেছেন তাতে সবদিনই পিচের চরিত্র একইরকম ছিল। তবে স্পিনারদের জন্য উপভোগ্য এসব পিচেও নাসুম তাঁর ছায়া হয়ে ছিলেন যেন। শেষমেশ যেদিন দুর্দান্ত বোলিং করলেন, সেটি বৃথা প্রমাণিত হলো তাঁর সতীর্থ ব্যাটসম্যানদের ব্যার্থতায়। 

    অথচ দিনের শুরুটা তো এমনই চাইতো সাউথ জোন। এমনিতেই সিলেটের উইকেটে ইন্ডিপেন্ডেন্স কাপে ব্যাটিংটা চ্যালেঞ্জিং, সকাল বেলা তো ব্যাটিংটা সবচেয়ে কঠিনই। প্রতিদিনই দ্রুত উইকেট হারাতে দেখা গেছে সব দলকেই। আর আজকে বিসিএলের ফাইনালে এনামুল-পিনাক শুরু করলেন কী দুর্দান্তভাবেই! ১২তম ওভারেই পঞ্চাশ পেরিয়ে গেল সাউথ জোন। সে ওভারেই এনামুলকে ২০ রানেই হারিয়ে ফেলল তারা। আরেক ওপেনার পিনাক ঘোষ ৩৫ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরার কিছুক্ষণ পর তাকে অনুসরণ করেছেন তৌহিদ হৃদয়ও।

    গেল ম্যাচে ফিফটি হাঁকানো হৃদয় শূন্য রানেই ফিরে যাওয়ার পর অধিনায়ক জাকির হাসান তাঁর ইনিংস ১২ রানের বড় করার আগেই আউট হয়ে গেছেন। এরপর এক পাশে যা করার নাহিদুল করে গেছেন, অপর পাশে মাহেদী-রেজারা ফিরে গেছেন দ্রুত৷ দারুণ শুরু করা সাউথ জোনকে শেষমেশ ১৬৩ রানের সম্বল সংগ্রহ করতে সাহায্য করেছিলো নাহিদুলের ৩১।

    যে সম্বলে সেন্ট্রাল জোনকে আটকে রখতে দরকার ছিল শুরুতেই উইকেটের। সেটি পেতে তাঁরা ব্যর্থ হলেও নাসুমের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ম্যাচে ফেরার আশা জেগেছিল সাউথ জোনের। তবে আল আমীন ও মোসাদ্দেকের ৮৮ রানের জুটিটা তাদের পক্ষে আর কোনমতেই ভাঙ্গার সাধ্য হয়নি। ৫৩ রান করে অপরাজিত থাকা আল আমীনকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন মোসাদ্দেক। 

    ব্যাট হাতে ৮৫ বলে ৩৩ রানের আগে বল হাতে দুই উইকেট নেওয়া সেই মোসাদ্দেকই ফাইনালে হয়েছেন ম্যান অব দ্যা ম্যাচ। তবু পুরো টুর্নামেন্টজুড়েই অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্স করে যাওয়া মোসাদ্দেকেরও থেকে গেছে একটা আক্ষেপ। উইকেট যেকোন ব্যাটসম্যানের পক্ষেই চ্যালেঞ্জিং বলে মোসাদ্দেক আক্ষেপের সুরে বলেছেন, 'উইকেটটা আরেকটু ভালো হতে পারতো'।

    যে আক্ষেপটা আসলে সকলেরই! বিভিন্ন খেলোয়াড়, কোচ, অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস, নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন, বিসিবি পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সকলেই জানিয়েছেন যা ভিন্ন ভিন্ন সময়ে।