• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    সুয়ারেজ-রোনালদোদের ছাপিয়ে মেট্রোপলিটানোতে উজ্জ্বল ফেলিক্স-এলাঙ্গা

    সুয়ারেজ-রোনালদোদের ছাপিয়ে মেট্রোপলিটানোতে উজ্জ্বল ফেলিক্স-এলাঙ্গা    

    এই ম্যাচের মূল আকর্ষণ ছিল ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, লুইস সুয়ারেজ ও আঁতোয়ান গ্রিজমানের মতো তারকারা। সাবেক দুই এল ক্লাসিকো প্রতিদ্বন্দ্বীর নামে এই লড়াইকে ‘সুয়ারেজ বনাম রোনালদো’ শিরোনাম দিয়ে প্রচারণাও চালানো হয়েছে। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোর ফাইনালে মুখোমুখি হওয়া রোনালদো-গ্রিজমানের ছবি দিয়েও আঁকা হয়েছে ম্যাচের পোস্টার। কিন্তু এই বর্ষীয়ান কিংবদন্তিদের ছাপিয়ে অ্যাটলেটিকো ও ইউনাইটেডের মধ্যকার চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ১৬’র প্রথম লেগের ম্যাচটিতে রাজত্ব করেছে তরুণেরাই। জোয়াও ফেলিক্স ও অ্যান্থনি ইলাঙ্গার গোলে সমতায় শেষ হয়েছে এই ম্যাচ। 

    সেরা ছন্দের খোঁজে থাকা দুই দলের মধ্যে হওয়া এই লড়াইয়ে কেউই ঠিক ফেভারিট ছিল না। তবে ওয়ান্দা মেট্রোপালিটানোতে শুরুটা করে স্বাগতিকরাই। ইউনাইটেড ম্যাচে ঠিকমতো মানিয়ে নেওয়ার আগেই করে বসে একটি গোল। সপ্তম মিনিটে অ্যাটলেটিকোর নেওয়া একটি কর্নার ভিক্টর লিন্ডেলফ ক্লিয়ার করলেও রেনান লোদি নিয়ে নেন বলের দখল। অ্যাটলেটিকো লেফট ব্যাক নিপুণ এক ক্রস বক্সের ভেতর খুঁজে নেয় ফেলিক্সকে। হ্যারি ম্যাগুয়েরকে বোকা বানিয়ে সেই বলে হেড করে দলকে এগিয়ে নেন ফেলিক্স।  

    প্রথমার্ধের বাকি সময়েও নিজেদের স্বাভাবিক ফুটবলটা খেলতে পারেনি ইউনাইটেড। তবে অ্যাটলেটিকোও ব্যর্থ হয় এর সুযোগ নিতে। ইউনাইটেডের চেয়ে অনেক বেশিবার আক্রমণে গেলেও ডেভিড ডি হেয়াকে তেমন বিব্রত করতে পারেনি স্বাগতিকদের আক্রমণভাগ।

    দ্বিতীয়ার্ধেও একই রকম ভঙ্গিমায় শুরু হয় ম্যাচ। একের পর এক ভুল পাস ও অপ্রয়োজনীয় ফাউল ছিল এই ম্যাচের সবচেয়ে দৃশ্যমান ঘটনা। অ্যাটলেটিকো ও ইউনাইটেড ম্যাচে মোট ফাউল করেছে যথাক্রমে ১৯ ও ১৫টি। হলুদ কার্ড দেখেছে ৪ ও ৫টি করে।   

    এই ম্যাচে বাড়তি আকর্ষণ ছিল রোনালদোকে ঘিরে। এক সময়কার নগর প্রতিপক্ষদের সঙ্গে তার সম্পর্কটা ঠিক মধুর নয়। অ্যাটলেটিকো ভক্তদের কাছ থেকে দুয়ো শুনতে শুনতে অভ্যস্ত এই পর্তুগিজ কিন্তু প্রতিবারই দুয়োর জবাব দিয়েছেন অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে। সিমিওনের দলের বিপক্ষে এর আগ পর্যন্ত ৩৫ ম্যাচ খেলে ২৫ গোল করেছিলেন রোনালদো। এরমধ্যে আছে তিনটি হ্যাটট্রিকও। এছাড়া এই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ পর্বে ইউনাইটেডের ত্রাণকর্তা হিসেবে হাজির হওয়াকে অভ্যাসে পরিণত করে ফেলা সিয়ারসেভেন এই ম্যাচেও বাজিমাত করবেন, তার পক্ষেই ছিল সবার বাজি। 

    কিন্তু পুরো ম্যাচে নিজের অতীত সত্ত্বার ছায়া হয়ে রইলেন এই কিংবদন্তি। বিগত আট ম্যাচে মাত্র এক গোল পাওয়া এই স্ট্রাইকার আরেকটি ম্যাচে রইলেন গোলশূন্য। এই ম্যাচে একটি ফ্রিকিকসহ গোলের উদ্দেশ্যে রোনালদো মোট শটই নিয়েছেন মাত্র দুটি। সবগুলোই গিয়েছে পোস্টের বাইরে দিয়ে। 

    তবে রোনালদো ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থিত না হলেও তার দলকে বাঁচিয়েছে দুই পরিচিত মুখ। ৮০ মিনিটে বদলি খেলোয়াড় ইলাঙ্গাকে মধ্যমাঠ থেকে দেওয়া এক থ্রু-বলে খুঁজে নেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। তবে প্রতিপক্ষ সেন্টারব্যাক রেয়নিলডো বলের কাছাকাছি না এসেই অদ্ভুত এক ট্যাকেল করতে গিয়ে মাটিয়ে শুয়ে না পড়লে বলটা এতো সহজে পেতেন না ইলাঙ্গা। এই ১৯ বছর বয়সী যখন বলটা নিয়ে হালকা করে পোস্টের এক কোণে পাঠিয়ে দেন তখন আবারও প্রতীয়মান হয় বর্তমান অ্যাটলেটিকোর রক্ষণভাগ কতটা দুর্বল। অন্য যেকোনো মৌসুমে ইলাঙ্গার এই শট ফেরাতেও হয়তো তেমন বেগ পেতে হতো না ওবলাকের। ইলাঙ্গার এই গোলই নির্ধারণ করে দেয় ম্যাচের ভাগ্য, ১-১ গোলেই শেষ হয় প্রথম লেগ। ন

    একসময় ওয়ান্দা মেট্রোপালিটানোকে দুর্গ বানিয়ে তোলা অ্যাটলেটিকো এই মাঠে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বশেষ ছয় ম্যাচে পায়নি জয়ের দেখা। তবে এখনই সব আশা শেষ হয়ে যায়নি সিমিওনের শিষ্যদের। সামনের মাসে ওল্ড ট্রাফোর্ডে পা রাখবেন গ্রিজমানরা। ঘরের মাঠে যে রোনালদোদের রেকর্ডও তেমন ভালো না, তা নিশ্চয়ই জানা আছে সিমিওনং

    অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ মৌসুমটা শুরু করেছিল লিগ শিরোপা ধরে রাখার মিশন নিয়ে। অপরদিকে ভারান-সাঞ্চো-রোনালদোকে দলে ভেড়ানো ইউনাইটেড স্বপ্ন দেখছিল লিগ শিরোপা আবার ঘরে ফেরানোর। সেই স্বপ্ন অনেক আগেই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। শুধু লিগ না, কোনো ঘরোয়া শিরোপা জেতার সম্ভাবনাই নেই এই দুই দলের। তাই সর্বশেষ প্রতিযোগিতা (এবং সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতা) হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ১৬’র পরবর্তী লেগ দুই দলের জন্যই হবে মৌসুমের অঘোষিত ফাইনাল।