পাটিদারের পটকা, হেজলউড-হার্শালদের হিসেবী ডেথ বোলিংয়ে ফাইনাল থেকে এক হাত দূরে বেঙ্গালুরু
বেঙ্গালুরু-লক্ষ্ণৌ, কলকাতা (টস-লক্ষ্ণৌ/বোলিং)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু- ২০৭/৪, ২০ ওভার (পাটিদার ১১২*, কার্তিক ৩৭*, কোহলি ২৫, মহসিন ১/২৫, ক্রুনাল ১/৩৯, আভেশ ১/৪৪)
লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস- ১৯১/৩, ২০ ওভার (রাহুল ৭৯, হুডা ৪৫, ভোহরা ১৯, হেজলউড ৩/৪৩, হার্শাল ১/২৫, সিরাজ ১/৪১)
ফলাফল: বেঙ্গালুরু ১৪ রানে জয়ী
লক্ষ্ণৌ’র বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে ফাইনাল থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে চলে এল ফাফ ডু প্লেসির বেঙ্গালুরু। আর তাতে নায়কের ভুমিকায় অবতীর্ণ হলেন এমন একজন, টুর্নামেন্টের আগে যাকে হয়ত অনেকেই বেঙ্গালুরুর প্রথম একাদশে বিবেচনাও করেননি। অনভিষিক্ত রজত পাটিদার দেখালেন কেন তাকে নির্ভয় এক ব্যাটার হিসেবে গণ্য করে বেঙ্গালুরু। দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি, সাথে দীনেশ কার্তিকের মারাত্মক ক্যামিওতে বেঙ্গালুরু যেই সংগ্রহ পেয়েছিল তাও হয়ত টপকে যেতে পারত লক্ষ্ণৌ। তবে তাদের অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের অদ্ভুতুড়ে ইনিংস, বিদঘুটে কিছু সিদ্ধান্ত আর জশ হেজলউড-হার্শাল পাটেলের দুর্দান্ত বোলিং জুটিতে শেষ হাসি হেসেছে বেঙ্গালুরু।
পাটিদারের পটকাবাজি, কার্তিকের কুল ক্যামিও
বৃষ্টির কারণে খানিকটা দেরীতে খেলা শুরু হওয়ার পর বেঙ্গালুরুর শুরুটা হয়েছিল ভয়াবহ। মহসিন খানের শিকার হয়ে রানের খাতা খোলার আগেই প্রথম বলে ফিরে যান অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। ওপেন করতে নামা ভিরাট কোহলিও ছিলেন না ছন্দে। তবে উইকেটে এসেই নিজের সহজাত ব্যাটিং শুরু করেছিলেন পাটিদার। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ক্রুনাল পান্ডিয়াকে ৩ চার ও ১ ছয় মেরে ওভারে ২০ রান নিয়ে পাটিদার দলীয় সংগ্রহ নিয়ে যান ৫২ রানে। এক প্রান্তে পাটিদার স্বাচ্ছন্দ্যে খেলে গেলেও অন্য প্রান্তে নিজের অস্বস্তির ফলস্বরূপ ২৪ বলে ২৫ রান করে আভেশ খানের শিকার হয়ে ফিরে যান কোহলি। এক ওভার পরেই ১৮ বলে পাটিদার ফিফটি পূর্ণ করলেও পরের বলেই ক্রুনালের শিকার হয়ে ফেরেন ম্যাক্সওয়েল। কিছুক্ষণ পরে রবি বিষ্ণোইয়ের শিকার হয়ে মাহিপাল লোমরর ফিরলে অন্য প্রান্তে কিছুটা চাপে পড়েন পাটিদার। বিষ্ণোই-মহসিনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে দুই ওভারের মধ্যেই ফিরতে পারতেন উইকেটে নবাগত দীনেশ কার্তিক ও পাটিদার। ২ রানে থাকার সময় রাহুল ফেলে দেন কার্তিকের ক্যাচ, পরের ওভারে ৭২ রানে থাকার সময় পাটিদারের মামুলি এক ক্যাচ ফেলে দেন হুডা। ওই অভারেই তান্ডব শুরু করে এই জুটি। ২ চার ও ৩ ছয়ে ওই ওভারে আসে ২৭ রান! পরের ওভারে আভেশের ওপর চড়াও হয়ে কার্তিক নেন ১৫ রান। পরের ওভারে ৪৯ বলে পাটিদার পূর্ণ করেন দুর্দান্ত সেঞ্চুরি, যা আইপিল ইতিহাসে প্লেঅফ/নকআউট পর্বে মাত্র ৫ম সেঞ্চুরি। দুশমন্থ চামিরা, আভেশদের শেষদিকে তুলোধোনা করে শেষ ৫ ওভারে এই জুটি তোলে ৮৪ রান। ২৩ বলে ৩৭* রান করে কার্তিক পার্শ্ব নায়কের ভূমিকা পালন করলেন এমন এক ইনিংসে যা বহুদিন মানুষের মনে থাকবে। পাটিদারের ৫৪ বলে ১১২* রানের ভয়ডরহীন সেই ইনিংসেই জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল বেঙ্গালুরু।
রাহুলের প্রশ্নবোধক ইনিংস, হেজলউড-হার্শালে বেঙ্গালুরুর বাজিমাত
প্রথম ওভারেই কুইন্টন ডি কক ফেরার পর রাহুল অধিনায়ক হিসেবে হয়ত বেশিই চাপ নিয়ে ফেলেছিলেন। রান তিনি ঠিকই করেছেন। একই সাথে লক্ষ্ণৌ’র ম্যানেজমেন্টও নিল উদ্ভট কিছু সিদ্ধান্ত। দলে এদিন এভিন লুইস থাকা সত্ত্বেও তিনে নামলেন মানান ভোহরা। ১১ বলে ১৯ রান করে হেজলউডের প্রথম শিকার হয়ে তিনি ফিরে গেলে অন্য প্রান্তে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে সিরাজের ওপর চড়াও হয়ে ওভারে ১৭ রান নেওয়ার পর যেন আরও খোলসবন্দী হয়ে পড়েন রাহুল। ফিফটি তিনি পূর্ণ করেন ৪৩ বলে, তাও ১৪তম ওভারে গিয়ে। অন্য প্রান্তে থিতু হয়ে দীপক হুডা ঠিকই হাত খুলেছিলেন। তবে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে দুই ছয় মারার পর আরও একবার সেই চেষ্টা করতে গিয়ে ২৬ বলে ৪৫ রানে থামেন হুডা। এরপর রাহুল গিয়ার পাল্টানোর চেষ্টা করলেও সেটার জন্য প্রস্তুত ছিলেন বেঙ্গালুরুর বোলাররা। তাতে উইকেটে এসে সুবিধা করতে পারেননি মার্কাস স্টইনিস। দুর্দান্ত বোলিংয়ের ফলস্বরূপ হার্শাল স্টইনিসকে ফেরানোর পরের ওভারে টানা দুই বলে হেজলউড ফেরান রাহুল ও ক্রুনালকে। শেষ ওভারে ২৪ রান প্রয়োজন হলে মাথা ঠাণ্ডা রেখে হার্শাল গোনেন ১০ রান, বেঙ্গালুরু পেয়ে জায় কাঙ্খিত জয়।