কেমন হতে পারে এবারের আইপিএলের সেরা একাদশ?
দুই মাস ধরে চলা মহারণ শেষে গুজরাট টাইটান্সের হাতে উঠেছে শিরোপা। গুজরাট যেমন রূপকথার কোনও এক উপাখ্যানের মত লিখল শিরোপা জয়ের গাঁথা, তেমনি এই আইপিএল জুড়ে ছিল অনেকের নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের গল্প, নিজেকে বিশ্বমঞ্চে উপস্থাপনের নজির, বরাবরের মতই ছিল বিস্ফোরক ক্রিকেটের প্রদর্শনী, আর ছিল অতিমানবীয় কিছু পারফর্ম্যান্স। সেসবের ভিত্তিতেই নির্বাচন করা হয়েছে এবারের আইপিএলের সেরা একাদশ। দেখে নিন আপনার পছন্দের খেলোয়াড়দের এই তালিকায় ঠাই মিলেছে কি না।
জস বাটলার
রান: ৮৬৩
সেঞ্চুরি: ৪
স্ট্রাইক রেট: ১৪৯.০৫
গড়: ৫৭.৫৩
এবারের একাদশ বানাতে গেলে শুরুতেই আসবে এই ইংলিশ ওপেনারের নাম। অতিমানবীয় এক মৌসুম কাটিয়েও শিরোপা থেকে গেল অধরা। তবে আইপিএলের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন, গড়েছেন আইপিএলের এক মৌসুমে ২য় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। এছাড়াও এই মৌসুমে সর্বোচ্চ ছয় ও চারও এসেছে তার ব্যাট থেকে। এবারের সেরা একাদশে জস ‘দ্যা বস’ বাটলারের জায়গা নিয়ে দ্বিমত পোষণের কোনও অবকাশ তাই নেই বললেই চলে।
লোকেশ রাহুল
রান: ৬১৬
সেঞ্চুরি: ২
স্ট্রাইক রেট: ১৩৫.৩৮
গড়: ৫১.৩৩
এলিমিনেটরে তার অদ্ভুতুড়ে ফিফটি নিয়ে সমালোচনা কম হয়নি। তবে মৌসুম জুড়ে তার ব্যাটিং পারফর্ম্যান্সের কথা তাতে ভুলে গেলে তো চলবে না। মুম্বাইয়ের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই সেঞ্চুরি, লক্ষ্ণৌ’র ব্যাটিং কান্ডারি হয়ে রানের বন্যা বইয়ে দেওয়া রাহুল ব্যাট হাতে যে আরও একটি সফল মৌসুম কাটিয়েছেন সেটা বলাই যায়।
সাঞ্জু স্যামসন (উইকেটকিপার)
রান: ৪৫৮
ফিফটি: ২
স্ট্রাইক রেট: ১৪৬.৭৯
গড়: ২৮.৬২
ডিসমিসাল: ১৬
সাঞ্জু স্যামসনের ধারাবাহিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। এবার বড় ইনিংসও খেলেননি সেই অর্থে (সর্বোচ্চ: ৫৫ রান)। তবে স্যামসনের এই মৌসুমে সবচেয়ে বড় সার্থকতা বাটলারকে ডানা মেলে ধরতে সাহায্য করা। বহু ম্যাচেই বাটলার ইনিংসের কারিগরের ভুমিকা পালন করতে পেরেছেন উইকেটে এসেই স্যামসনের চড়াও হওয়ার কারণে। বোলারদের লাইন লেংথ ভন্ডুল করে রানের চাকা সচল করার যেই ভুমিকা তিনি পালন করেছেন, আপনার তিন নম্বর ব্যাটারের কাছে আপনি তাই চাইবেন, যদি আপনার দুজন ওপেনারেরই সামর্থ্য থাকে ব্যাট ক্যারি করার। আর এবারের মৌসুমের সর্বোচ্চ ডিসমিসালের রেকর্ডও তার অধীনে; গ্লাভসটা তাই তার হাতেই পরাতে পারেন।
হার্দিক পান্ডিয়া (অধিনায়ক)
রান: ৪৮৭
ফিফটি: ৪
স্ট্রাইক রেট: ১৩১.২৬
গড়: ৪৪.২৭
উইকেট: ৮
চারে হার্দিক যেন এই মৌসুমে নিজের ভুমিকা নতুন করে ঢেলে সাজিয়েছেন। এর আগে সবসময় ফিনিশার ভুমিকায় খেলা আসা হার্দিক অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়ে ব্যাট হাতেও খেলেছেন দায়িত্বশীল সব ইনিংস। বল হাতেও ফাইনালে ভেল্কি দেখিয়ে তিনি আরও একবার প্রমাণ করেছেন, অল রাউন্ডার হার্দিক ফুরিয়ে যাননি। আর তার অধিনায়কত্ব, অনুপ্রেরণা, উদ্দীপনা যে গুজরাটের শিরোপা জয়ের অন্যতম রহস্য এটা তো এতক্ষণে মাঠের খেলা ও সতীর্থদের কথা থেকে আপনার কাছে পরিষ্কারহয়ে যাওয়ার কথা। অনুমিতভাবেই অধিনায়কের বাহুবন্ধনি তাই যাচ্ছে হার্দিকের কাছেই।
ডেভিড মিলার
রান: ৪৮১
ফিফটি: ২
স্ট্রাইক রেট: ১৪২.৭২
গড়: ৬৮.৭১
‘কিলার’ মিলার নিজেকে নিজের ফিনিশার ভুমিকায় যেন নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন। তার ৯৪* রানের ইনিংসটা তো এবারের মৌসুমের অন্যতম সেরা ইনিংসের কাতারেই থাকবে হয়ত। রাহুল তেওয়াতিয়া, রশিদ খান, হার্দিক পান্ডিয়াদের সাথে জুটি বেঁধে অবিশ্বাস্য কিছু ম্যাচ জেতানো ও চূড়ান্ত ধারাবাহিকতার নিদর্শন স্থাপন করা মিলার তাই পাচ্ছেন ৫ নম্বর ব্যাটারের দায়িত্ব।
দীনেশ কার্তিক
রান: ৩৩০
ফিফটি: ১
স্ট্রাইক রেট: ১৮৩.৩৩
গড়: ৫৫
ডিসমিসাল: ১২
এবারের মৌসুমের প্রথম ৬ ম্যাচে মাত্র ১ বার সাজঘরে ফিরেছিলেন কার্তিক। শেষদিকে ঝড় তুলে নিজের ফিনিশার ভুমিকায় নিজেকে যেন নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন এই অভিজ্ঞ কিপার ব্যাটার। দুর্দান্ত সব ক্যামিও ও ফিনিশিংয়ের বদৌলতে ফিরেছেন ভারত দলেও। এই মৌসুমের সেরা একাদশের ফিনিশারের দায়িত্ব তাই বর্তাচ্ছে কার্তিকের ওপরেই।
আন্দ্রে রাসেল
রান: ৩৩৩
ফিফটি: ১
স্ট্রাইক রেট: ১৭৪.৪৭
গড়: ৩৭.২২
উইকেট: ১৭
বোলিং স্ট্রাইক রেট: ৯.৯
কলকাতার পয়েন্ট তালিকায় অবস্থান হতাশাজনক হলেও আরও একবার ব্যাটে-বলে আগুন ঝরিয়েছেন ড্রে রাস। দুর্দান্ত অল রাউন্ড পারফর্ম্যান্সে জিতিয়েছেন ম্যাচ, আবার অন্যদের অপারগতায় হার নিয়ে ফিরতে হয়েছে কয়েক ম্যাচে। ব্যাট হাতে বিস্ফোরক সব ইনিংসের পাশাপাশি বল হাতে উইকেট তুলে নিয়েছেন নিয়মিত। কমপক্ষে ২৫ ওভার বল করা বোলারদের মধ্যে এই মৌসুমে তার স্ট্রাইক রেটই সর্বনিম্ন। অলরাউন্ডারের ভুমিকায় তাই দলে থাকছেন এই বিধ্বংসী ক্যারিবিয়ান।
রশিদ খান
উইকেট: ১৯
ইকোনমি রেট: ৬.৫৯
গড়: ২২.১৫
বোলিং স্ট্রাইক রেট: ২০.১
৪উইকেট/৫উইকেট: ১/০
ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট: ২০৬.৮১
চাইলেই আপনি এই জায়গায় ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে রাখতে পারেন; চেহেলকে পার্পল ক্যাপের দৌড়ে তো তিনিই টেনে রেখেছিলেন। তবে এই একাদশে রশিদ জায়গা পাচ্ছে তার প্রভাবের কারণে। উইকেট রশিদের নেহায়েতই কম নয়, তবে ২৬ উইকেট পাওয়া হাসারাঙ্গাকে ফেলে রশিদ কেন, সেই প্রশ্ন আপনারা রাখতেই পারেন। রশিদের স্পেলগুলোর জন্য মূলত অন্য প্রান্তে লকি ফার্গুসন বা আলজারি জোসেফদের মত গতি তারকারা তাদের গতির সদ্ব্যবহার করতে পেরেছেন। এই মৌসুমে ডেথ ওভারগুলোতে সবচেয়ে কম রান গুনেছে গুজরাট। ১৬-২০ অভারে ১০ এর নিচে রান খাওয়া একমাত্র দল তারাই। আর তার অনেকাংশেই রশিদের ১৬তম বা ১৮তম ওভার করার ভুমিকা অসামান্য। ১ম কোয়ালিফায়ারে রাজস্থান তাদের বিপক্ষে ২০০ পেরুনো সংগ্রহ পেলেও রশিদ কোনও বাউন্ডারি তো দেননি, রানও গুনেছিলেন মোটে ১৮! ফাইনালেও মেলে ধরেছেন নিজেকে। আর ব্যাট হাতে তার অবিশ্বাস্য দুটো ম্যাচ জয়ী ক্যামিওর কথাও না বললেই নয়। ম্যাচে তার প্রভাবের জন্যই একাদশে জায়গা পাচ্ছেন রশিদ।
হার্শাল পাটেল
উইকেট: ১৯
ইকোনমি রেট: ৭.৬৬
গড়: ২১.৫৭
স্ট্রাইক রেট: ১৬.৮
৪ উইকেট/ ৫ উইকেট: ১/০
বেঙ্গালুরুর নিয়মিত ডেথ বোলারের ভুমিকা তিনি পালন করেছেন সিদ্ধহস্তে। মৌসুমের মাঝে নিজের বোন পরলোকগমন করার পরেও ফিরে এসে যেভাবে মাচের পর ম্যাচ নিজের সর্বস্ব নিংড়ে দিয়েছেন সেটার জন্য প্রশংসা তার প্রাপ্য। নিয়মিত ডেথ ওভারে বল করেও ইকোনমি ৮-এর নিচে রাখতে পারাটাই একাদশে তার জায়গার পক্ষে সবচেয়ে বড় যুক্তি।
উমরান মালিক
উইকেট: ২২
ইকোনমি রেট: ৯.০৩
গড়: ২০.১৮
স্ট্রাইক রেট: ১৩.৪
৪ উইকেট/ ৫ উইকেট: ১/১
একের পর এক অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছুঁড়ে নজর কেড়েছেন, ডেল স্টেইনের সান্নিধ্যে থেকে পেয়েছেন নিয়মিত উইকেট তুলে নেওয়ার টোটকা। সেই টোটকা কী দারুণভাবেই না কাজে লাগিয়েছেন কাশ্মীরের এই তরুণ পেসার। নিয়মিত ১৫০+ কিমি. গতিতে বল করতে পারার পাশাপাশি নিয়মিত উইকেট তুলে নেওয়া উমরান সন্দেহাতীতভাবেই এই মৌসুমে ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া।
যুজবেন্দ্র চেহেল
উইকেট: ২৭
ইকোনমি রেট: ৭.৭৫
গড়: ১৯.৫১
স্ট্রাইক রেট: ১৫.১
৪ উইকেট/ ৫ উইকেট: ১/১
পার্পল ক্যাপ যার মাথায় উঠেছে দলে তো তার জায়গা নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকার কথা নয়। প্লেঅফের দুই ম্যাচে হয়ত কিছটা নিষ্প্রভ ছিলেন; তবে চেহেলের মত উইকেট সন্ধানী লেগ স্পিনারের জন্য এমন দিন স্বাভাবিক। কলকাতার বিপক্ষে সেই অবিস্মরণীয় হ্যাটট্রিক ও ৫-উইকেটের জন্যই বোধহয় চেহেল দলে জায়গা করে নিতে পারবেন। আর সেখানে মৌসুম জুড়ে এমন ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে তো আর কোনও প্রশ্নই আসে না।