• নিউজিল্যান্ডের ইংল্যান্ড সফর
  • " />

     

    উত্তেজনা,উন্মাদনা - ইংল্যান্ডের স্টোকস- ম্যাককালাম যুগের সূচনাটা হল মানানসই

    উত্তেজনা,উন্মাদনা - ইংল্যান্ডের স্টোকস- ম্যাককালাম যুগের সূচনাটা হল মানানসই    

    ১ম টেস্ট, লর্ডস
    নিউজিল্যান্ড- ১৩২ ও ২৮৫
    ইংল্যান্ড- ১৪১ ও ২৭৯/৫, ৭৮.৫ ওভার (রুট ১১৫*, স্টোকস ৫৪, ফোকস ৩২*, জেমিসন ৪/৭৯)
    ইংল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী


    প্রথম দিনে ১৭ উইকেটের পতন, দ্বিতীয় দিন শেষে নিউজিল্যান্ডের ২২৭ রানের লিড। অথচ চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনেই ম্যাচ শেষ করে জয়ী ইংল্যান্ড। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ব্যাটিংয়ের পরতে পরতে যেমন ছিল উত্তেজনা ঠাসা, তার অধীনে ইংল্যান্ডের টেস্ট যুগের শুরুটাও হল তেমনই। বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই যুগটা জয়ে শুরু হল তাদের সবচেয়ে বড় তারকা জো রুটের বদৌলতে। অধিনায়কের বাহুবন্ধনি হয়ত তুলে দিয়েছেন, ব্যাটটা তো রয়ে গিয়েছে নিজের হাতে। সেই ব্যাট হাতে গত দুই বছর যে রানের ফোয়ারা ছুটিয়ে চলেছেন তারই ধারাবাহিকতায় তুলে নিলেন ২৬তম সেঞ্চুরি, নিশ্চিত করলেন ইংল্যান্ডের দুর্দান্ত এক জয়।

    রুটের ব্যাট হাতে ইংল্যান্ডের জয়টা যেরকম দাপটের সাথে এসেছে সেই দাপট নিয়েই টেস্টটা শুরু করেছিলেন ইংল্যান্ডের জীবন্ত কিংবদন্তী জেমস অ্যান্ডারসন। আবহাওয়া ছিল অনুকুলে, উইকেট থেকেও মিলছিল সুইং। অ্যান্ডারসনের আর কী লাগে! কিউইদের ব্যাটিং অর্ডার বিধ্বস্ত করলেন সেই চিরচেনা, সাথে যোগ্য সঙ্গ দিলেন অভিষিক্ত ম্যাথিউ পটস। এক দিকে সুইং, আরেক দিকে গতি - তাতেই দিশেহারা কিউইরা গুটিয়ে যেতে বসেছিল একশো রানের মাঝেই। কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম ৪২* রানের ইনিংস খেলে দলকে শেষমেশ নিয়ে গিয়েছিলেন ১৩২ রানে। তবে উইকেট থেকে আর সহায়তার কমতি ছিল না। ইংল্যান্ডের ভঙ্গুর ব্যাটিং লাইনআপের পাশে আরও একবার প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসিয়ে ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের জীবন বিষিয়ে তুলেছিলেন ট্রেন্ট বোল্ট-টিম সাউদি জুটি। প্রথম দিনেই ৭ উইকেট হারিয়ে দিন শেষ করা ইংল্যান্ড পরের দিন প্রথম সেশনেই গুটিয়ে গেলেও পেয়েছিল ৯ রানের লিড।

    সেই লিডটা ইংল্যান্ডকে মানসিকভাবেও কিছুটা এগিয়ে দিয়েছিল ম্যাচে। যার প্রমাণ মিলেছিল পটসের দারুণ গতির মাঝে। লাঞ্চে যাওয়ার সময় ৩৮ রান তুলতেই নিউজিল্যান্ডের নেই ৩ উইকেট। লাঞ্চ থেকে ফিরেই অবশ্য ভোজবাজির মত ম্যাচ পালটে ফেললেন ড্যারিল মিচেল-টম ব্লান্ডেল জুটি। ইংল্যান্ডের বোলারদের হুট করেই মনে হল চূড়ান্ত অসহায়। গোলা বলুন, আর বিষাক্ত সুইং - এই জুটির সামনে সবই মনে হল নির্বিষ। দুর্গম পথও এই দুজন পাড়ি দিলেন অসামান্য দক্ষতার সাথে। দুজনে সেঞ্চুরি থেকে হাতছোয়া দূরত্বে থেকেই দিন শেষ করেছিলেন।

    দ্বিতীয় দিন শেষে ম্যাচ পুরোপুরি নিজেদের বাগে আনার যেই স্বপ্ন নিয়ে ঘুমাতে গিয়েছিলেন মিচেল-ব্লান্ডেল, পরের দিন সকালে নিমেষেই ধূলিসাৎ হয়ে গেল সেসব। মিচেল তাও পেয়েছিলেন কারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দেখা, ব্লান্ডেল পাননি সেই কাঙ্খিত সেঞ্চুরিও। লর্ডসের অনার্স বোর্ডে মিচেলের নাম উঠানো পর্যন্তই ছিল কিউইদের সকালের সাফল্য।  পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচে দুর্দান্তভাবে ফিরে এল ইংল্যান্ড। আর ফেরালেন দলে ফেরা আরেক জীবন্ত কিংবদন্তী স্টুয়ার্ট ব্রড। দুর্দান্ত এক ট্রিপল মেইডেনে মিচেলকে ফেরানোর পর রান আউটের ফাঁদে ফেললেন ডি গ্র্যান্ডহোমকে, আর তার পরের বলটাই ভেতরে ঢুকিয়ে উপড়ে ফেললেন জেমিসনের স্টাম্প। ২৫১/৪ থেকে নিউজিল্যান্ড গুটিয়ে গেল ২৮৫ রানে।

    নিজেদের সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে ইংল্যান্ডের ৪ উইকেট কিউইরা  তুলে নিয়েছিল ৬৯ রানেই। এরপরেই ত্রাণকর্তা রুপে আবির্ভূত হলেন রুট, আর সঙ্গ দিলেন নতুন অধিনায়ক ও ইংল্যান্ডের বেশ কিছু রূপকথার কারিগর বেন স্টোকস। দুজনেই পেলেন ফিফটি; তবে দিনের শেষে ৫৪ রানে স্টোকসকে ফিরিয়ে আবারও ম্যাচের মোড় বদলেছিলেন জেমিসনই।

    ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ৬১ রান, নিউজিল্যান্ডের প্রয়োজন ৫ উইকেট - এই সমীকরণে দিন শুরু হয়েছিল। উইকেটে রুট থাকাই মাচের পাল্লা ঝুলে ছিল ইংল্যান্ডের দিকেই। বেন ফোকসকে নিয়ে অসামান্য এক সেঞ্চুরি দিয়ে ঠিকই ম্যাচ বের করে আনলেন রুট। মাত্র ২য় ইংলিশ হিসেবে  ১০,০০০ টেস্ট রানের মাইলফলক ছুঁলেন। সেই সাথে গড়লেন অনন্য এক রেকর্ড - টেস্ট ইতিহাসেরে একমাত্র ব্যাটার হিসেবে দশ বছরের মাঝে পূর্ণ করলেন দশ হাজার রান। আর সেই সাথে ইংল্যান্ডকে এনে দিলেন এমন এক জয় যা দ্বিতীয় দিন শেষে হয়ত অনেকেই কল্পনা করেননি, খেললেন এমন এক ইনিংস যার মাহাত্ম্য অনুধাবন করা যায় ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায়। আর তাতেই সেঞ্চুরিটাও পায় বাড়তি এক মাত্রা, আর রুট হয়ে ওঠেন স্বমহিমায় প্রজ্বলিত এক নায়ক, যাকে চাইলেও সরানো যায় না পাদপ্রদীপের তল থেকে।