মহসিনের স্বপ্ন জয়ের কারিগর লক্ষ্ণৌ
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাকে দলে নিয়েছিল ২০১৮ সালে। কিন্তু মহসিন খান মাঠে নামার সুযোগ পাননি একবারও। সাইডবেঞ্চে বসেই কাটিয়েছেন আইপিএলের ৩ মৌসুম। তবে এবার লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের জার্সিতে সুযোগ পেয়েই চমক দেখিয়েছেন বাঁহাতি এই পেসার।
গতির সাথে নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেংথে প্রায় প্রতি ম্যাচেই নজরকাড়া বোলিং করছেন উত্তর প্রদেশের থেকে উঠে আসা এই তরুণ, উচ্চতাও আদর্শ পেস বোলার সূলভ। ৮ ম্যাচে নিয়েছেন ১৩ উইকেট। উমরান মালিক, কুলদীপ সেনদের মতো তরুণ ক্রিকেটারদের সাথে তার নামও আসছে এবারের আইপিএলের মঞ্চে।
সর্বশেষ কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষেও করেছেন দারুণ বোলিং। নিয়ন্ত্রিত গতি আর নিখুত লাইন-লেংথ তার শক্তির জায়গা। সেই ম্যাচেই দেখিয়েছেন পেস বোলিংয়ের বেসিক আর ভ্যারিয়েশন। ২০ রানে নেন ৩ উইকেট। শ্বাসঃরুদ্ধকর ম্যাচটাও লক্ষ্ণৌ জিতেছে মাত্র ২ রানে।
৩ বছর অপেক্ষার পর আইপিএলে অভিষেক হয়েছে মহসিনের। অভিষেক ম্যাচে উইকেট না পেলেও সেই মুম্বাইয়ের বিপক্ষেই প্রথম আইপিএল উইকেটের দেখা পেয়েছিলেন তিনি। মধুর প্রতিশোধ?
আলাদা করে বলতে হবে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ম্যাচের কথা। সেই ম্যাচে রিশাভ পান্টকে যেভাবে বোল্ড করেছিলেন তাতেই চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে তার আগমনী বার্তা। বোলিং স্পেলটাও ছিল একদম ঝকঝকে। ১৬ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট।
কিন্তু মহসিন হতে চেয়েছিলেন ব্যাটসম্যান। তবে তার নিয়তিতে পেসার হওয়াই লেখা ছিল। মহসিনের এই বাঁকবদলের প্রভাবক ছিলেন কোচ বদরউদ্দিন সিদ্দিকি। বদরউদ্দিনের হাত ধরেই মহসিন পাড়ি দিয়েছেন লম্বা একটা পথ। ভারত জাতীয় দলের তারকা পেসার মোহাম্মদ শামিরও কোচ তিনি। তার অধীনেই উত্তর প্রদেশের বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকে আইপিএল পর্যন্ত পৌঁছেছেন মহসিন।
তবে এই যাত্রাটা থেমে গিয়েছিল মহসিনের কৈশোরে। কাঁধের ইনজুরিতে তিন বছর ক্রিকেটই খেলতে পারেননি। সেই সময়টায় কোচ বদরউদ্দিনই ছিলেন তার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।
ইনজুরি কাটিয়ে ফেরার পর উত্তর প্রদেশের কেন্দ্রীয় দলে ডাক পান। সুযোগ পেয়ে বল হাতে তাক লাগিয়ে দেন সবাইকে। বিজয় হাজারে ট্রফিতে নেন ২৬ উইকেট। সৈয়দ মুশতাক আলী ট্রফিতে ৪৩ উইকেট। এমন দারুণ পারফর্ম্যান্সের পরই ২০১৮ সালে তাকে দলে টানে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।
মহসিনের এই যাত্রায় কোচ বদরুদ্দিনের সাথে বড়সড় কৃতিত্ব আছে মোহাম্মদ শামিরও। ২০২০ সালে কোভিডের লকডাউনে নিজের বাড়িতে মহসিনকে ডেকে একত্রে অনুশীলন করেছেন শামি। কারণ মহসিনের মতো শামিও জানেন সাইডবেঞ্চে বসে থাকার অপেক্ষা করার কষ্ট। ২০১২ সালের আইপিএলটা শামির কেটেছে সাইডবেঞ্চে বসেই। তাই মহসিনকে বোলিং টোটকা দিতে কার্পণ্য করেননি তিনি। শামির বিশাল অভিজ্ঞতার ঝুলি থেকে মহসিনও নিয়েছেন দুহাত ভরেই। যার প্রতিফলনটা দেখা গেছে এবারের আইপিএলে।
এক সাক্ষাতকারে লক্ষ্ণৌ সতীর্থ দীপক হুদাকে মনের কথা বলেছিলেন মহসিন। জানিয়েছিলেন নিজের আরাধ্য স্বপ্ন সত্যি হওয়ার কথাও, 'এই একটা সুযোগের জন্য আমি তিন বছর অপেক্ষা করেছি। আমার মা-বাবা বলতেন, আমাকে আইপিএলে খেলতে দেখা তাদের স্বপ্ন। সেই স্বপ্নটা পূরণ করেছি।'