দীনেশ কার্তিক: দূরে গিয়েও ফিরে আসার গল্প
কদিন আগেই বেশ মজার একটা ঘটনা চোখে পড়লো। ভারতের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের একাদশে যারা ছিলেন, তাদের সকলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন। কেউ ঝুঁকেছেন কোচিংয়ের দিকে, কেউবা আবার দৃশ্যপট থেকেই হারিয়ে গেছেন। এমনকি সেই ম্যাচে ভারতের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশের সব ক্রিকেটারও এখন ‘সাবেক’।
ব্যতিক্রম কেবল দীনেশ কার্তিক। এখনো সদর্পে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে উড়ে বেড়াচ্ছেন। ৩৬ বছর বয়সেও টি-টোয়েন্টিতে দেখাচ্ছেন ফিনিশিংয়ের ঝলক ; হোক সেটা আইপিএল কিংবা জাতীয় দলের ম্যাচ। তাই তাকে নিয়ে কথাও হচ্ছে জোরেশোরে। অথচ দীর্ঘ এক ক্যারিয়ারে তার খেলা আন্তর্জাতিক ম্যাচ সংখ্যা অপ্রতুলই। কার্তিকের পরীক্ষার খাতা অর্থাৎ পুরনো ব্যাটিং রেকর্ড দেখে তাকে মার্কিং করতে চাইলে নাম্বার দেয়ার জায়গা খুঁজে পাঠক হতাশই হবেন।
কার্তিকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার এগিয়েছে ঢিমে তালে। বেশিরভাগ সময় দলে আসা-যাওয়ার মধ্যেই ছিলেন। সুযোগ পেয়ে কখনো বাদ পড়েছেন নিজের অফফর্মে কারণে। কখনো নির্বাচকরা তাকে বাদ দিয়েছেন টিম কম্বিনেশনের দোহাই দিয়ে। অবশ্য এমন এক পজিশনে তিনি খেলতেন; যেখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি।
সময়ের সাথে সাথে ধোনি নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছেন সেরাদের তালিকায়। ধোনিকে ছাপিয়ে যাওয়া তো দূরাশা, কার্তিক খাবি খেয়েছেন নিজের অস্ত্বিত্ব টিকিয়ে রাখতেই। ফাঁকেফোঁকরে, ব্যাটারদের বাজে পারফর্ম্যান্সে কিংবা ধোনির অবর্তমানে বেশ কবারই সুযোগ পেয়েছেন দলে। পারফর্ম্যান্সও করেছেন বটে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা কাজে আসেনি। এজন্যই প্রায় ১৮ বছরের লম্বা ক্যারিয়ারে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে কার্তিকের নামের পাশে মাত্র ১৫৭ ম্যাচ!
মাঠের পাশাপাশি ব্যক্তিগত-মানসিক যুদ্ধটা জিতে কার্তিক ফিরেছেন,পরম আরাধ্য জাতীয় দলে। যে জাতীয় দল আর ড্রেসিংরুমকে ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় দেখেছেন দূর থেকে। সেই জাতীয় দলের ড্রেসিংরুমে কার্তিকের পায়ের নিচের মাটিটা আরও শক্ত হয়েছে।
ব্যর্থ ক্রিকেটারের ‘সফল’ পুত্র
১৯৮৫ সালে চেন্নাইয়ের এক ক্রিকেটপ্রেমী পরিবারে কার্তিকের জন্ম। সেই পরিবারের কর্তা অর্থাৎ কার্তিকের বাবা কৃষ্ণকুমারও ক্রিকেট খেলতেন। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সেই পথে বেশ খানিকটা পথ হেঁটেছিলেনও। কিন্তু পরিবারের বাধায় চেন্নাইয়ের প্রথম বিভাগের পর আর চালিয়ে যেতে পারেননি। ক্রিকেটের পাট চুকিয়ে উন্নত জীবনের আশায় বিয়ে থা করে চাকুরি নিয়ে চলে যান আরব আমিরাতে। সেখানেই শৈশবের একটা অংশ কেটেছে কার্তিকের।
কৈশোরে দেশে ফেরার পর তার বাবাই হাতে তুলে দেন ক্রিকেট ব্যাট আর কিপিং গ্লাভস। কৃষ্ণকুমারই ছিলেন কার্তিকের প্রথম কোচ। নেট সেশনেই কিপিংটা ঝালিয়ে নিতেন কার্তিক, কৃষ্ণকুমার বেশ জোরে বল ছুঁড়তেন ছেলের দিকে। এই কারণে কার্তিকের কিপিংয়ের রিফ্লেক্সটাও স্বভাবজাত মনে হয়।
তামিল নাড়ুর বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দিয়ে শুরু। ধাপে ধাপে এগিয়ে গিয়ে নজরে পড়েন রাজ্য দলের নির্বাচকদের। ২০০২ সালে ডাক পান তামিল নাড়ুর অনূর্ধ্ব-১৯ দলে। সেবার মৌসুমের টানা কয়েকটি সেঞ্চুরি পেলেও শেষদিকে এসে নিষ্প্রভ হয়ে পড়েছিলেন তরুণ কার্তিক। তবে নির্বাচকরা প্রতিভার ঝলকানি দেখে ‘বেনিফিট অফ ডাউট’ কার্তিককে দিয়েছিলেন সেই যাত্রায়।
যে কারণে জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে ২০০৪ সালে বিশ্বকাপেও খেলেছিলেন। সেবারের আসরে তার সতীর্থ ছিলেন সুরেশ রায়না, শিখর ধাওয়ান, আরপি সিং, রবিন উথাপ্পারা। শিখর ধাওয়ান ছাড়া বাকিদের ক্যারিয়ার থেমে গেছে আগেই। তার সমসাময়িক ছিলেন বাংলাদেশের নাফিস ইকবাল, আফতাব আহমেদ, তালহা জুবায়েররা। তারাও তো ক্যারিয়ার গুছিয়ে ফেলেছেন আজ লম্বা সময়। আলাদা কেবল সেই কার্তিকই। বয়সকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে, ফিটনেস ধরে রেখে এখনো দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মোহনীয় বাইশ গজের পিচে। তার বাবা নিজে ক্রিকেটার হতে না পারলেও, ছেলেকে দিয়ে অধরা স্বপ্ন পূরণ করেছেন। যে চড়াই উৎরাই আর বিরুদ্ধ স্রোত পেরিয়ে কার্তিক নিজেকে ধরে রেখেছন, তাতে কৃষ্ণকুমার তার ছেলেকে ‘সফল’ তকমা দেবেন অনায়াসে।
ধোনির ছায়ায় বন্দি?
প্রচলিত আছে, ধোনির জন্যই নাকি দলে তেমন সুযোগ পাননি কার্তিক। পুরোপুরি নাকি আংশিক সত্য? কার্তিক দৃশ্যপটে এসেছিলেন মহেন্দ্র সিং ধোনির আগে। ২০০৪ সালের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের সেবারের আসরে ধোনি জায়গা পাননি দলে। এরপর ধোনির আগে টিম ম্যানেজমেটের কাছে কার্তিকের নামই সুপারিশ করেছিলেন তৎকালীন নির্বাচক সন্দীপ পাতিল।
সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের নভেম্বরে পার্থিব প্যাটেলের জায়গায় গ্লাভসজোড়া উঠেছিল কার্তিকের হাতেই। ওয়ানডে অভিষেকে সেই ভরসার প্রতিদানটাও দিয়েছিলেন দুই গ্লাভস ভরেই। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে লর্ডসের ব্যাট হাতে ১ রান করলেও, উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে মালিক হয়েছিলেন তিনটি ডিসমিসালের। এর মধ্যে দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে ঝাপিয়ে পড়ে মাইকেল ভনকে করা স্টাম্পিংটা হয়ে আছে সেই ম্যাচের হাইলাইটসের অন্যতম এক অংশ।
কিন্তু ওয়ানডে দলে টিকে থাকার জন্য তা একেবারেই যথেষ্ট ছিল না। কারণ ব্যাট হাতে তেমন কিছু করতেও পারেননি। নির্বাচকদের দিকে অভিযোগের তীর চাইলে ছুঁড়তে পারেন অনেকেই। কেন দুই ম্যাচ দেখেই তাকে বাদ দেয়া হলো? উত্তর হিসেবে দাঁড় করানো যায়, ‘ফার্স্ট ইম্প্রেশন’ বলে যে কথাটা প্রচলিত আছে, সেটা নির্বাচকদের কাছে কার্তিক সেভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি। ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০০৬ সালে। ধোনি ততদিনে জাকিয়ে স্টান্স নিয়েছেন ভারতের উইকেটের পেছনে।
কার্তিকের মাথায় টেস্ট ক্যাপ উঠেছিল ওয়ানডে অভিষেকের আগেই। সেবছরের সেপ্টেম্বরে মুম্বাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্টতা খেলেন কার্তিক। সেখানেও যথারীতি ‘ফার্স্ট ইম্প্রেশন’-এ তাক লাগানো কিছু করতে ব্যর্থ তিনি। অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাটে রান বন্যা দেখেই নির্বাচক-অধিনায়করা তাকে দলে টেনেছিলেন। ওয়ানডের তুলনায় টেস্টে টানা সুযোগ পেয়েছিলেন কার্তিক। ২০০৪ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত টেস্ট দলের নিয়মিত সদস্যই ছিলেন। তবুও প্রথম দশ ইনিংসে ব্যাট করেও পাননি কোনো ফিফটি। ব্যাটিংয়ের পড়তি ফর্মের কারণে ছিটকে যান দল থেকে। তাকে কেবল স্পেশালিস্ট উইকেট কিপার হিসেবে খেলানোর বিলাসিতা তখন দেখায়নি ভারত।
তার টানা ব্যর্থতায় টেস্ট দলের দরজা খুলে ধোনির জন্য। কার্তিকের বছরখানেক পর টেস্টে অভিষেক হওয়া ধোনি প্রথম ফিফটি করেছিলেন তৃতীয় ইনিংসেই। প্রথম সেঞ্চুরিও পেয়েছেন এর তিন ইনিংস পরেই। শুরুর সেই সাফল্যই ধোনির পাল্লাটা ভারী করে দিয়েছিল তখন। দুজনের ক্যারিয়ারের মোড় দুদিকে ঘুরে যাওয়ার নেপথ্যে সবচেয়ে বড় কারণ আগমনী বার্তার ধরনে। কার্তিক এরপর দলে ফিরেছিলেন স্পেশালিস্ট ব্যাটার হিসেবে। কিন্তু উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান ধোনিকে ছাড়িয়ে যেতে পারেননি।
২০০৭ সালে ইংল্যান্ড সফরে বীরেন্দ্র শেবাগের জায়গায় ওপেন করেছিলেন কার্তিক। ব্যাটিং পজিশন বদলের টোটকাটাও কাজে লেগেছিল বেশ। ইংলিশ কন্ডিশনে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শেষ করেছিলেন ভারতের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়ে; ২৬৩ রান। তার পেছনে ছিলেন শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলিদের মতো প্রভাবশালী নাম। সিরিজটাও ভারত জিতেছিল ১-০ ব্যবধানে।
ইংল্যান্ডে সেই সিরিজের পর টানা সুযোগ পাওয়ার পর আবারও খেই হারান তিনি। ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৯১ রানের পর ২০০৯ সাল পর্যন্ত মোট ১২ ইনিংসে ফিফটি ছুঁয়েছিলেন মাত্র একবার। এরপর দীর্ঘ সময় টেস্ট দলে দেখা যায়নি তাকে। সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষেই। সেখানে চার ইনিংসে তার রান ০, ২০, ১, ০। ওদিকে ধোনি ঠিকই এগিয়ে গেছেন আপন গতিতে।
টেস্টে ব্রাত্য হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের ব্যাটিং দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের জন্য সবসময়ই নির্বাচকদের নজরে থেকেছেন কার্তিক। যদিও ২০১৪ সালে ধোনির অবসরের পর টেস্ট দলে ফেরার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, কিন্তু ঋদ্ধিমান সাহার কারণে সেই সম্ভাবনা আর বাস্তবে পরিণতি পায়নি।
সব মিলিয়ে বলা যায়, জীবনের সেরা সময়ে কার্তিক যতটা না ধোনির ছায়ায় বন্দি ছিলেন, তার চেয়ে বেশি ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। অর্জনে-গর্জনে ধোনি পথ চলেছেন আপন ছন্দে। কিন্তু ঝলকানি দেখিয়ে বারবার দলে ফিরেও সেই ধারা আর বজায় রাখতে পারেননি কার্তিক।
ঝড়ে উড়ে যাওয়া ঘর গোছানো
ছোটবেলার বান্ধবী নিকিতার সাথে সংসার পেতেছিলেন কার্তিক। সেই সংসারও আর টিকলো কই? ২০১২ সালে ছাড়াছাড়ি হয় দুজনের। নেপথ্যে ছিল তার স্ত্রীর বিবাহ বহির্ভুত সম্পর্ক। কার্তিকের সাথে সংসার থাকাকালীনই নিকিতা সম্পর্কে জড়ান মুরালি কার্তিকের সাথে; দুজন বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে একইসাথে খেলেছেন। মানসিক এই ধাক্কাটা বেশ জোরেশোরেই খান কার্তিক।
ফিরে এসেছেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী দীপিকার হাত ধরে। বিচ্ছেদের ধাক্কা সামলাতে নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন কার্তিক। ফিটনেস ফেরাতে সময় দিতে শুরু করেন জিমে। সেখানে ভারতের জাতীয় নারী স্কোয়াশ দলের খেলোয়াড় দীপিকার সাথে পরিচয়। বেঁচে থাকার, এগিয়ে যাওয়ার অবলম্বন হিসেবে দীপিকাকে আঁকড়ে ধরেছিলেন। যে ক্রিকেটের সাথে দুরত্ব তৈরি হয়েছিল সেটাও কমতে শুরু করেছিল দীপিকার মানসিক সমর্থনেই। ২০১৫ সালে গাঁটছড়া বাঁধেন দুজন। দুজনের সংসারে এখন আছে দুই জমজ সন্তান কবির ও জিয়ান।
আইপিএলের ডানায় চড়ে ঘুচল দুরত্ব
কার্তিক ক্যারিয়ারের শেষ ওয়ানডে খেলেছিলেন ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে। ঘরের মাঠে সাম্প্রতিক টি-২০ সিরিজ বাদ দিলে শেষ টি-টোয়েন্টিও সেই ২০১৯ সালেই। এরপর ভারত দলের দরজা তার জন্য এক প্রকার বন্ধই হয়ে যায়। ঘরোয়া ক্রিকেট খেললেও ২০২১ সালে শুরু করেন ধারাভাষ্য। সে বছর ভারতের ইংল্যান্ড সফর, আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ধারাভাষ্য দিয়েছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন মনের কোনে লুকিয়ে রাখা কথা; আরও দুটো বিশ্বকাপ খেলতে চান।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে ভারতের ক্রিকেট পাড়া; সবখানেই ঠাট্টা-বিদ্রুপের শোরগোল পড়েছিল। ভারতের ‘Aaj tak’ চ্যানেলের ‘Sports Tak’ অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও ক্রীড়া সাংবাদিক ভিক্রান্ত গুপ্ত কার্তিককে নিয়ে মজার ছলে বলেছিলেন, ‘ফুল টাইম কমেন্টেটর, পার্ট টাইম ক্রিকেটার’।
সেসব পাত্তা না দিয়ে নিজের লক্ষ্যে অবিচল ছিলেন জাতীয় দলে ফিরেছেন কার্তিক। এই যাত্রায় তার পূঁজি ছিল একাগ্র মানসিকতা, জাতীয় দলের জার্সিটা গায়ে চড়ানোর অদম্য এক ইচ্ছা। ফেরার মঞ্চটা তৈরি করেছিল এবারের আইপিএল। এই আইপিএলের ডানায় চড়েই দূর দিগন্তে মিলিয়ে যেতে থাকা জাতীয় দলে ফিরেছেন।
আইপিএলের গত আসরে দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন কার্তিক। ১৬ ম্যাচে ৩৬৩ রান, স্ট্রাইকরেট ১৮৩.৩৩। আলাদা করে বলতে হবে ফিনিশার কার্তিকের কথা। ডেথ ওভারে তার চেয়ে বেশি স্ট্রাইকরেটে (২২৯.২১) ব্যাটিং করতে পারেননি আর কোনো ব্যাটার। একা হাতেই আরসিবির ডেথ ওভারের ব্যাটিং সামলেছিলেন। এই বয়সেও সমানে টক্কর দিয়েছেন শিমরন হেটমায়ার-ডেভিড মিলারদের সাথে। এই আগ্রাসী পারফর্ম্যান্সেই সুবাদে পূরণ হয়েছে তার স্বপ্ন। ঘরের মাঠে প্রোটিয়াদের বিপক্ষেও খেলেছেন দারুণ দুটি ইনিংস।
সবাইকেই অবাক করেছেন কার্তিক। চমকে দিয়েছে তার মারকুটে ব্যাটিং; এই বয়সেও এমন ব্যাট চালানো যায়! সুনীল গাভাস্কার বলেছেন, কার্তিককে আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে ভারতের স্কোয়াডে না দেখলে তিনি অবাক হবেন। কোচ রাহুল দ্রাবিড়ও ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, ‘দরজায় আর ঠকঠক নয়, দরজাটাই ভেঙে ফেলো’।
এই কার্তিক পেছনে ফেলে এসেছেন জীবনের বহু ঘাত-প্রতিঘাত, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির অম্লমধুর গল্প। যার পরতে পরতে যেমন মিশে আছে আঘাত, হতাশা, স্বপ্নভঙ্গের বেদনা; তেমনি আছে খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বস্তির হাসি। এই কার্তিক জানেন অপেক্ষার ফল মধুর হয়। এই কার্তিক দেখিয়ে দিয়েছেন দূরে গিয়েও কীভাবে ফিরে আসা যায়।