আইপিএলে ফিনিশাররা কীভাবে এত সফল?
এবারের আইপিএলে আপনার চোখে এখন পর্যন্ত সেরা ফিনিশার কে? টি-টোয়েন্টির অনেক বড় বড় নামই হয়তো আছে আপনার পছন্দের তালিকায়। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে বড় নামের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা পড়েনি, এমন কেউও আপনার নজর কাড়বেন।
শিমরন হেটমায়ার, রাজস্থান রয়েলসের ডেথ ওভারের ব্যাটিং ভরসা। এখন পর্যন্ত তার করা ২৯১ রানের মধ্যে ২১০ রানই এসেছে ডেথ ওভারে। এর মধ্যে আছে ম্যাচের গতিপথ বদলে দেয়া দারুণ কিছু ক্যামিও ইনিংস। আছে ম্যাচ বাচানো দুর্দান্ত একটা ফিফটিও। প্রথম পাঁচ ইনিংসে করেছেন ৩৫, ৪২*, ৫৯*,২৯, ও ২৬*।
এবারের আইপিএলের শুরু থেকেই দারুণ এক ফিনিশারের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে দীনেশ কার্তিককে। বলা চলে একা হাতেই আরসিবির ডেথ ওভারের ব্যাটিংয়ের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন তিনি। তার ব্যাটিং পরিসংখ্যানই এর অকাট্য দলিল মোট রানের বেশিরভাগই করেছেন ইনিংসের শেষদিকে। মারকুটে ব্যাটিংয়ে স্ট্রাইকরেটটাও আকাশচুম্বী; ২০০। মোট করেছেন ২৮৫ রান। এর মধ্যে ডেথ ওভারে তার ব্যাট থেকে এসেছে ২০৪ রান।
২০২০ আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে এক ওভারে পাঁচ ছক্কা মেরে তার উত্থান। তখন খেলতেন রাজস্থান রয়্যালসে। এরপর থেকে রাহুল তেওয়াটিয়ার নামটাই যেন হয়ে উঠেছে আইপিএলের ফিনিশারদের আদর্শ। এবারের মোট রানের দুই তৃতীয়াংশই করেছেন ডেথ ওভারে ব্যাট করে। ১১ ইনিংসে করা ২০১৫ রানের ১৫৬-ই এসেছে ডেথ ওভারে। গত আইপিএলে তেমন কিছু করতে না পারলেও এবার দারুণ কিছু ইনিংস এসেছে তার ব্যাট থেকে, বিশেষ করে ডেথ ওভারে। সেই পাঞ্জাবের বিপক্ষেই টানা দুই ছক্কা মেরে জিতিয়েছেন শ্বাসঃরুদ্ধকর এক ম্যাচ হায়দ্রাবাদের রান পাহাড়ের বিপক্ষেও ছিল ম্যাচ জয়ী দারুণ এক ইনিংস।
এবার ছন্দে নেই চেন্নাই সুপার কিংস। বাদ পড়েছে গ্রুপ রাউন্ড থেকেই। তবে হলুদ জার্সিতে ফিনিশার মহেন্দ্র সিং ধোনিকে দেখা গেছে বেশ কয়েকবারই। বিশেষ করে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে এবারের প্রথম দেখায় যেভাবে ম্যাচটা জিতিয়েছেন, রবীন্দ্র জাদেজা কুর্নিশই করেছেন তাকে। দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষেও দেখা গেছে বিস্ফোরক ধোনিকে। মোট ১৯৯ রানের অর্ধেকের বেশিই করেছেন শেষ চার ওভারে ব্যাট করে; ১৩৪। ধারাবাহিক না হলেও পরিসংখ্যান আর কার্যকরী ইনিংসগুলো মনে করিয়ে দেয় ফিনিশার ধোনির একাল আর সেকাল।
এবারের মেগা নিলামের প্রথমদিন অবিক্রিত থাকার পর দ্বিতীয়দিন ডেভিড মিলারকে দলে নেয় নবাগত গুজরাট টাইটান্স। গুজরাটের ভরসার প্রতিদানও তিনি দিচ্ছেন, বিশেষ করে ডেথ ওভারগুলোতে। মোট ৯ ইনিংসে উইকেটে ছিলেন শেষ চার ওভারে, স্ট্রাইকরেটও নজরকাড়া; ১৯১.৪২। তার সংগ্রহে থাকা ৩৩২ রানের একাংশও এসেছে ইনিংসের শেষ ওভারগুলোতেই। আলাদা করে বলতে হবে চেন্নাইয়ের বিপক্ষের ম্যাচটির কথা। ৯৪* রানের ইনিংস খেলে দলকে জিতিয়েছিলেন ১ বল হাতে রেখেই।
ডেথ ওভারে সবচেয়ে বেশি রান
ব্যাটার | দল | রান |
শিমরন হেটমায়ার | রাজস্থান রয়্যালস | ২১০ |
দিনেশ কার্তিক | রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু | ২০৪ |
রাহুল তেওয়াটিয়া | গুজরাট টাইটান্স | ১৫৬ |
মহেন্দ্র সিং ধোনি | গুজরাট টাইটান্স | ১৩৪ |
ডেভিড মিলার | গুজরাট টাইটান্স | ১১২ |
*১৭ মে পর্যন্ত
এবারের আসরে কমপক্ষে ২০০ রান করা ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেটের মালিক দিনেশ কার্তিক। ২০০ স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তার পেছনে আছেন আন্দ্রে রাসেল, লিয়াম লিভিংস্টোনরা।
২০২২ আইপিএলে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট
ব্যাটার |
|
স্ট্রাইকরেট | ||
দিনেশ কার্তিক | রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু | ২২৯.২১ | ||
শিমরন হেটমায়ার | রাজস্থান রয়্যালস | ২১৪.২৮ | ||
মহেন্দ্র সিং ধোনি | চেন্নাই সুপার কিংস | ১৯১.৪২ | ||
রাহুল তেওয়াটিয়া | গুজরাট টাইটান্স |
|
||
ডেভিড মিলার | গুজরাট টাইটান্স | ১৬৯.৬৯ |
*কমপক্ষে ২০০ রান করা ব্যাটার
ডেথ ওভারের স্ট্রাইকরেটের দৌড়েও এগিয়ে সেই কার্তিকই। তবে ধোনিকে ছাপিয়ে যেতে পারেননি মিলার-তেওয়াটিয়ারা।
ডেথ ওভারের সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট
ব্যাটার | দল | স্ট্রাইকরেট |
দিনেশ কার্তিক | রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু | ২২৯.২১ |
শিমরন হেটমায়ার | রাজস্থান রয়্যালস | ২১৪.২৮ |
মহেন্দ্র সিং ধোনি | চেন্নাই সুপার কিংস | ১৯১.৪২ |
রাহুল তেওয়াটিয়া | চেন্নাই সুপার কিংস | ১৮৩.৫২ |
ডেভিড মিলার | গুজরাট টাইটান্স |
১৬৯.৬৯ |
*১৭ মে পর্যন্ত
টি-টোয়েন্টির ফিনিশার মানেই শেষের ওভারগুলোতে চার-ছক্কার বন্যা। ডেথ ওভারে সবচেয়ে বেশি ১৯টি ছক্কা এসেছে হেটমায়ারের ব্যাট থেকে। একটি কম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে কার্তিক। তবে ধোনি-মিলার-তেওয়াটিয়ারা দশের ঘর ছুঁতে পারেননি।
ডেথ ওভারে সর্বোচ্চ ছক্কা
ব্যাটার | দল | ছক্কা |
শিমরন হেটমায়ার | রাজস্থান রয়্যালস | ১৯ |
দিনেশ কার্তিক | রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু | ১৮ |
রাহুল তেওয়াটিয়া | গুজরাট টাইটান্স | ৮ |
মহেন্দ্র সিং ধোনি | চেন্নাই সুপার কিংস | ৭ |
ডেভিড মিলার | গুজরাট টাইটান্স | ৪ |
*১৭ মে পর্যন্ত
ব্যাটিং গড়টাও কার্তিক-হেটমায়ারদের আদর্শ টি-টোয়েন্টি ফিনিশার হয়ে ওঠার অন্যতম কারণ। এই দুজনের শেষ চার ওভারের ব্যাটিং গড় রীতিমতো অবিশ্বাস্য। ডেথ ওভারে দুজনেরই গড় ছাড়িয়েছে শতকের কোটা। শিমরন হেটমায়ারের ১০৫.০০। আর দিনেশ কার্তিকের ১০২.০০। হেটমায়ার মাঠ ছেড়েছেন ৭ বার অপরাজিত থেকে। আর কার্তিক অপরাজিত ছিলেন ৮ বার।
মাইকেল বেভান ছিলেন ওয়ানডের আদর্শ ফিনিশার। সেই ফিনিশার শব্দের প্রতীক হয়ে ওঠা ধোনি এখনও আছেন ক্রিকেটের মঞ্চে। ফিনিশার হতে কী লাগে? ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী ওভারপ্রতি রান রেটের সাথে স্নায়ুচাপ সামলে ইস্পাতকঠিন মনোবল নিয়ে ঠান্ডা মাথায় কার্যোদ্ধার। ধোনিকে এই ভূমিকায় দেখা গেছে অসংখ্যবার।
এই আইপিএলের মঞ্চেই কাইরন পোলার্ড-আন্দ্রে রাসেলরা ফিনিশিংয়ের ঝলক দেখিয়েছেন একটা সময়। কেন্দ্রে এসেছিলেন হার্দিক পান্ডিয়ার মতো কেউ কেউও। কিন্তু কার্তিক-হেটমায়ার-তেওয়াটিয়াদের নির্ভয়ে ব্যাট চালানো দেখে বলাই যায়, ক্রিকেটের অনাগত দিনের নতুন ফিনিশার তারাই