• আইপিএল ২০২২
  • " />

     

    বাটলারের রেকর্ডময় দিনে নাটকীয় শেষ ওভারের শঙ্কা সামলে কৃষ্ণা-আশ্বিনে জয় রাজস্থানের

    বাটলারের রেকর্ডময় দিনে নাটকীয় শেষ ওভারের শঙ্কা সামলে কৃষ্ণা-আশ্বিনে জয় রাজস্থানের    

    দিল্লি-রাজস্থান, ওয়াঙ্খেড়ে (টস-রাজস্থান/ব্যাটিং)
    রাজস্থান রয়্যালস- ২২২/২, ২০ ওভার (বাটলার ১১৬, পাডিক্কাল ৫৪, স্যামসন ৪৬*, মোস্তাফিজ ১/৪৩, খলিল ১/৪৭)
    দিল্লি ক্যাপিটালস- ২০৭/৮, ২০ ওভার (পান্ট ৪৪, ললিত ৩৭, পাওয়েল ৩৬, কৃষ্ণা ৩/২২, আশ্বিন ২/৩২, চেহেল ১/২৮)
    ফলাফল: রাজস্থান ১৫ রানে জয়ী

     

    আসরে প্রথমবারের মত টসে জিতে সাঞ্জু স্যামসন যখন ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলেন তখন হয়ত অনেকেই ভুরু কুঁচকিয়েছিলেন। তবে দলে যখন আছেন জস বাটলার সেখানে সেই সিদ্ধান্ত যে ফলপ্রসু হবে তা নিয়ে হয়ত সন্দেহ ছিল খুব কম। যা একটু ছিল, তার সবটুকুই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলেন বাটলার। রানপ্রসবা এক মৌসুমের ধারাবাহিকতায় পেলেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, দেবদুত পাডিক্কালের সাথে গড়লেন মৌসুমের সর্বোচ্চ রানের ওপেনিং জুটি, ভিরাট কোহলির পর প্রথম ব্যাটার হিসেবে এক মৌসুমে গড়লেন তিন বা ততোধিক সেঞ্চুরির রেকর্ড। বাটলারের রেকর্ড গড়ার দিনে এরপর সাঞ্জু স্যামসন ঝড়ে মৌসুমে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের রেকর্ডও ঢেলে সাজায় রাজস্থান। ওয়াঙ্খেড়ের রানপ্রসবা পিচে সেটাও ভেস্তে যেতে বসেছিল শেষদিকে রভম্যান পাওয়েলের ক্যামিওতে। রাজস্থানের শিরদাঁড়ায় কাপন ধরিয়ে দিলেও শেষ ওভারের নাটক সামলে  প্রাসিধ কৃষ্ণার দুর্দান্ত স্পেলে শেষ হাসি হেসেছে স্যামসনরাই।

    জস দ্যা বস; সহযোগীর ভুমিকায় পাডিক্কাল, স্যামসন

    বাটলার ইতিমধ্যেই ত্রাস সঞ্চার করেছে প্রতিপক্ষ বোলারদের মনে। এদিন দিল্লির বিশেষ মনোযোগ তার দিকে থাকায় বাটলারের শুরুটা হয় সাবধানী, শার্দুল ঠাকুর তো ২য় ওভারে মেইডেনও দেন। মোস্তাফিজকে ৪র্থ ওভারে যখন টানা তিন চারে বাটলারের ওপেনিং সঙ্গী পাডিকাল স্বাগত জানান তখনই পেসারদের ওপর চড়াও হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন বোধহয় বাটলার। খলিল আহমেদের পরের ওভারে মারেন দুই ছয়। পাওয়ারপ্লেতে দুজনে মিলে তোলেন ৫১ রান। পাওয়ারপ্লের পর দুই স্পিনার অক্ষর পাটেল-কুলদিপ যাদবকেও যখন হাত খুলে খেলতে শুরু করলেন, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি বাটলার। ললিত যাদবকে চার মেরে ৩৬ বলে পূর্ণ করেন ফিফটি। যেই ললিত প্রথম দুই ওভারে গুনেছিলেন মোটে ৬ রান, চার ওভারের কোটা পূর্ণ করার পরে বাটলার-পাডিকালের চওড়া ব্যাটের রোষানলে পড়ে পরের দুই ওভারে দেন ৩৫ রান। স্পিনারদের কচুকাটা করে বাটলার ততক্ষণে পৌঁছে গিয়েছে নব্বইয়ের কোঠায়। বাটলারের মত পাডিক্কালও এরপর ফিফটি পান চার মেরে, ৩১ বলে। এর কিছুক্ষণ পরেই অবশ্য খলিলের আঘাতে ভাঙে এই মৌসুমের সর্বোচ্চ ১৫৫ রানের ওপেনিং জুটি, পাডিকালের ৩৫ বলে ৫৪ রানের ইনিংসের সমাপ্তিতে। জুটি ভাঙলেও বাটলার অবিচল; সাথে যোগ দিয়ে স্যামসনও যেন বার্তা দিলেন, ‘চালিয়ে যান জস!’ জস চালালেনও। ৫৭ বলে পূর্ণ করলেন এবারের আসরে নিজের ৩য় সেঞ্চুরি! শিখর ধাওয়ানের পর দ্বিতীয় ব্যাটার হিসেবে আইপিএলে টানা দুই ম্যাচে পেলেন সেঞ্চুরি। বাটলার যেন অপ্রতিরোধ্য! সেই শক্তিতে বলীয়ান স্যামসন অন্য প্রান্তে সুযোগ পেয়ে ধারণ করলেন রুদ্রমূর্তি। দুজন মিলে খলিলের করা ১৮তম ওভারে ২১ রান তুলে মোস্তাফিজের পরের ওভারেও সেই পথেই হাটতে চলেছিলেন। বল হাতে ভুলে যাওয়ার মত একদিনে স্বস্তির জায়গা মোস্তাফিজের একটাই- শেষ বলে বাটলারের তাণ্ডবের অবসান ঘটানো। ৬৫ বলে ১১৬ রান করে লং অনে ডেভিড ওয়ার্নারের তালুবন্দি হয়ে বাটলার থামলেও থামেননি স্যামসন। ঠাকুরের শেষ ওভারে ২০ রান নিয়ে স্যামসন অপরাজিত থাকেন ১৯ বলে ৪৬* রানে।    

    কৃষ্ণার কারিকুরি, শেষ ওভারের নাটক

    ডেভিড ওয়ার্নার-পৃথ্বী শ জুটি শুরু করেছিলেন ঠিক যেখানে তারা আগের ম্যাচে শেষ করেছিলেন। ওয়ার্নারকে অবশ্য ১৪ বলে ২৮ রানে শরীর তাক করে বল করে উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করিয়েছিলেন কৃষ্ণা। সেই যে শুরু করেছিলেন পুরো স্পেলেই এরপর কৃষ্ণা ছিলেন দুর্দান্ত। মাঝের ওভারগুলোতে যুজবেন্দ্র চেহেলের সাথে জুটি গড়ে আশ্বিন সুযোগ দেননি দিল্লিকে লাগামছাড়া হওয়ার। ওবেড ম্যাকয়ের এলোমেলো এক ওভারে শ-পান্ট মিলে ২৬ রান নিয়ে যদিও ঘুরে দাঁড়ানোর সংকেত দিয়েছিল দিল্লি। তবে শ ৩৭ রানে আশ্বিনের শিকার হয়ে ফেরার পর পান্ট চেষ্টা করেছিলেন ললিত যাদবকে নিয়ে। ৪৪ রানে পান্ট ও ৩৭ রানে ললিত - দুজনেই ২৪ বলের ইনিংস শেষে ফেরেন ওই কৃষ্ণার শিকার হয়ে। শেষ দুই ওভারে যখন ৩৬ রান দরকার তখনই ললিতকে ফিরিয়ে কৃষ্ণা ১৯তম ওভারে দিয়েছিলেন মেইডেন! ম্যাচ সেখানেই শেষ বলে ধরে নিয়েছিলেন অনেকেই। তবে নাটক তখনও বাকি। ম্যাকয়ের করা শেষ ওভারে টানা তিন বলে ছয় মেরে শুরু করলেন রভম্যান পাওয়েল। এর মদ্ধে তৃতীয় বলে রিপ্লেতেও দেখা যায় কোমরের ওপর বল ছিল। ক্ষোভে ফেটে পড়া পান্ট তখনই তার ব্যাটারদের মাঠ ছেড়ে আসতে বলেন! এমনকি ব্যাটিং কোচ প্রাভিন আমরে মাঠে এসে আম্পায়ারকে শাসিয়ে যান। অদ্ভুতুড়ে সব কান্ডকারবারের মাঝে দিল্লির সম্ভাবনাও যেন শেষ হয়ে যায়। পরের তিন বলে নিজেকে ঠান্ডা করে ম্যাকয় দেন ২ রান, শেষ বলে ফেরানও পাওয়েলকে। স্নায়ু ধরে রেখে মোস্তাফিজের দিল্লিকে হতাশ করে বাটলারের ব্যাটিংয়ের মর্যাদা রাখে রাজস্থান।