রশিদ-হাসারাঙ্গারা কেন এত সফল?
বেশিদিন আগের কথা নয়, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে লেগ স্পিনারদের সেরা একাদশে দেখা যেত কালেভদ্রে। সেই চিত্রটা এখন বদলেছে বেশ। লেগ স্পিনার ছাড়া যেন পূর্ণতা পাচ্ছে না কোনো দলই। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টিতে। আইপিএল দিয়েই একটা উদাহরণ টানা যাক। ২০১৬ সাল থেকেই আইপিএলে লেগ স্পিনারদের হাতে বল তুলে দেওয়ার গ্রাফটা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। আরব আমিরাতের শিশিরের কারণে গত বছরটা অবশ্য ব্যতিক্রম, কিন্তু এর আগের বছর ওই মরুদেশেই লেগ স্পিনাররা হাত ঘুরিয়েছিলেন ৫০০ ওভারের বেশি, আইপিএলের ইতিহাসে প্রথমবার।
সাধারণত, এরিয়াল শট খেলবার সময় বেশির ভাগ ব্যাটারই বটম হ্যান্ডের পাওয়ার ব্যবহার করতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। বটম হ্যান্ডের ব্যবহারের কারণে বলের গন্তব্য অধিকাংশ সময়ই মিড-উইকেট থেকে লং-অনের মাঝে। ওই অঞ্চলটাতে তাই চার-ছকাও বেশি হয়, বিশেষ করে অফ স্পিনার বা ফিঙ্গার স্পিনারদের বলে।
কিন্তু বিপত্তি বাধে লেগ স্পিনারদের মুখোমুখি হতে গেলে। রিস্ট স্পিনার বলে ফিঙ্গার স্পিনারদের চাইতে এমনিতেই বলে সাইড স্পিনটা বেশি পান তাঁরা। তাই, বলের ওপর ড্রিফট কাজ করে বেশি, সঙ্গে বলটা পিচে পড়ে বেশি পরিমাণে টার্নও করে একই কারণে। একটা স্বাভাবিক লেগ স্পিনিং ডেলিভারি মিড উইকেটের দিকে ঠেলতে ব্যাটারদের খেলতে হয় স্পিনের বিপরীতে, অনেক সময় বলটা চলে যায় হিটিং আর্কের বাইরেও। যুজবেন্দ্র চাহাল বা রাহুল চাহারের মতো লেগ স্পিনাররা, যারা এখনো ফ্লাইট-ড্রিফট-টার্নেই বিট করতে চান ব্যাটারদের, তারা ভরসা খোঁজেন এই টোটকাতে।
এদিকে রশিদ খান-ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা-রবি বিষ্ণয়রা লেগ স্পিনার হলেও তারা হাটছেন ভিন্ন পথে, তাদের মূল ভরসা গুগলি। শট খেলার জায়গা না দিয়ে দারুণ একেকটা গুগলিতে ব্যাটারদের নাজেহাল করে উইকেট নেয়াই তাদের উদ্দেশ্য।
এমনিতে বল রিলিজের সময় হাতের পৃষ্ঠদেশ দেখেই গুগলিটা বুঝতে পারেন ব্যাটাররা। কিন্তু, আদ্যিকালের এই সূত্রটা বদলে দিয়েছেন রশিদ খান এসে। রিস্ট নয়, তার বলের স্পিনটা আসে আঙ্গুলের ব্যবহারে। কোনটা যে গুগলি ছাড়ছেন আর কোনটা লেগ স্পিন, গ্রিপ দেখে বুঝে ওঠা ভীষণই কঠিন ব্যাটারদের জন্য। তাদের তাই প্রতিক্রিয়া দেখাতে হয় বল পিচে পড়ার পরে। গুগলিতে ওভারস্পিনের পরিমাণ বেশি থাকে বলে বলটা উইকেটে পড়ে স্কিডও করে, 'রিয়্যাকশন টাইম' আরও কমে যায়।
ওভারস্পিনের পরিমাণ বেশি বলে বলগুলো বাউন্সও করার কথা ছিল বেশি। তবে, রাশিদ খান কিংবা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, বাউন্সের পরিমাণটা কমিয়ে এনেছেন বল রিলিজিংয়ের সময় হাঁটু বেন্ট করে। বেন্ট নি-র কারণে বলটা নিচু থেকে ছোড়া হচ্ছে, লো ট্র্যাজেকটরির কারণে বাউন্সও কমে আসছে তাই।
প্রশ্ন হতে পারে, বলের বাউন্স কমে যাওয়ার সঙ্গে বোলারদের সাফল্যের সম্পর্ক কী? বায়োমেকানিকস বলছে, এরিয়াল শট খেলতে চাইলে ব্যাটারদের লক্ষ্যই থাকে বলের নিচে যাওয়ার, কিন্তু বল নিচু হলে কাজটা কঠিন হয়ে যায় ঢের। বলটা তখন আর যুতসই এলিভেশন পায় না। তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ করতে গেলে মিসটাইমড শটে সীমানার কাছে দাঁড়ানো ফিল্ডারের হাতে ধরা পড়াটাই নিয়তি বেশির ভাগ সময়।
লেগ স্পিনারদের এই আক্রমণের মুখে যুতসই পাল্টা আক্রমণ যে কী হবে, সেই অস্ত্র এখনো খুঁজে ফিরছেন ব্যাটাররা। প্যাডল সুইপ-স্লগ সুইপ খেলতে চেষ্টা করছেন কেউ কেউ, ড্যান ক্রিশ্চিয়ানের মতো সাফল্যও পাচ্ছেন; তবে করতে গিয়ে বাবর আজমের মতো ব্যর্থ হওয়া ক্রিকেটারদের পাল্লাই ভারি এখনো।
আইপিএলের বাজারে লেগ স্পিনারদের দামও হু হু করে বাড়ছে তাই। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, রশিদ খানরা যেন ইফতার বাজারের শাহী জিলাপি। তাদের তো চড়া দামে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কিনছেই। রাহুল তেওয়াটিয়ার মতো কাজ চালাতে পারা লেগিরাও এখন বিকোচ্ছেন ৯ কোটি রুপিতে।