উমরান মালিক: নেট বোলার যেভাবে হয়ে উঠলেন কাশ্মীর এক্সপ্রেস
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে গতির ঝড় তুলে আইপিএলে তার পরিচিতি লাভ। নাম উমরান মালিক, জম্মু-কাশ্মীর থেকে উঠে এসেছেন ডানহাতি এই পেসার। আইপিএল অভিষেকে নিজের প্রথম ওভারেই তার বলে স্পিডগান ছুঁয়েছিল ১৫০ কিমি/ঘণ্টা। চলতি আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে দারুণ এক বোলিং স্পেল দিয়ে আবারও নজর কেড়েছেন তিনি। ইনিংসের শেষ ওভারে কোনো রান না দিয়েই নিয়েছেন ৩ উইকেট। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে আইপিএল ক্যারিয়ারের প্রথমবারের মতো নিয়েছেন পাঁচ উইকেট।
আইপিএলে অভিষেক হয়েছিল ২০২১ আসরে। সেবার ৩ ম্যাচে কেবল ২ উইকেট পেলেও নিজের জাত চিনিয়েছিলেন গতিতে। তাই এবারের আসরে তাকে রিটেইন করেছে হায়দ্রাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেবার কোভিড পজিটিভ থাঙ্গারাসু নটরাজনের জায়গায় ডাক পান। এবার পাঞ্জাবের বিপক্ষে অমন বিধ্বংসী স্পেলের পর টুইটারে হার্শা ভোগলে অল্প কথায় তুলে ধরেছিলেন উমরানের এই দুরন্ত গতির যাত্রা যেখানে বড় একটা অবদান আছে হায়দ্রাবাদের ব্যাটসম্যান আব্দুল সামাদেরও।
সময়টা ২০১৮। জম্মুর বৈষ্ণোদেবী মন্দির দেখতে গিয়েছেন ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নির্বাচকরা। জম্মু অনূর্ধ্ব-১৯ দলের নেট প্র্যাকটিসে সেদিন সিমেন্টের শক্ত উইকেটে গতির ঝড় তুলেছিলেন উমরান। সেখানেই তাকে প্রথম দেখেন নির্বাচকদের দল। তাদের মনে প্রশ্ন, কে এই অচেনা বোলার?
উমরানকে এত জোরে বল করতে দেখে অবাক সবাই। বিস্ময় মাত্রা ছাড়িয়ে যায়, যখন তারা জানতে পারেন বছরখানেক আগেও উমরান দাপিয়ে বেড়াতেন টেনিস বলের ক্রিকেট। তার তখন ১৭ বছর বয়স। গলি আর স্কুলের গন্ডি পেরিয়ে টেনিস বলের ক্রিকেটে তখন বেশ নামডাকও অর্জন করেছেন। দারুণ ফিটনেস, চুলের স্টাইল আর পারফরম্যান্সের জন্য নতুন একটা নামও জুটে গেল তার 'গজনী'; বলিউড তারকা আমির খানের বিখ্যাত সিনেমার আলোকে।
বেড়ে উঠেছেন ভূস্বর্গ কাশ্মীরের আলোবাতাসে। শারীরিক গঠনটাও পক্ষেই ছিল তার। জন্মস্থান গুজরনগড়ের আশেপাশেই খেলে বেড়াতেন বিভিন্ন টুর্নামেন্ট। আছে শো-কেস ভর্তি ট্রফি আর মেডেল। এক পর্যায়ে বন্ধুদের পরামর্শে যান স্থানীয় কোচ রনধীর সিংয়ের কাছে। সেখানেই শুরু হয় পেশাদার ক্রিকেটার হওয়ার প্রক্রিয়া । পরবর্তীতে ইরফান পাঠান জম্মুর মেন্টর হিসেবে দায়িত্ব নিলে তার সাথেও কাজের সুযোগ পান উমরান।
জম্মুর অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বাছাইপর্বের প্রথম দিন কোনো বল না করেই ফিরতে হয়েছিল তাকে। কারণ ক্রিকেট বলে প্রতিযোগিতামূলক কোনো ম্যাচের অভিজ্ঞতাই ছিল না তার। দ্বিতীয়দিন অবশ্য সুযোগ পেয়ে দারুণ বোলিংয়ে নজরে কাড়েন নির্বাচকদের। অবশ্য পরের বছর অনূর্ধ্ব-২৩ দলের বাছাইপর্বে গিয়েও বাদ পড়তে হয়েছিল তাকে। আর সেটাই হলো শাপেবর। বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আব্দুল সামাদের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে উমরানের। সামাদের প্রস্তাবেই উমরানকে নেট বোলার হিসেবে ডাকে হায়দ্রাবাদ ফ্র্যাঞ্চাইজি। সুযোগ পেয়ে নেটেও গতির ঝলক দেখিয়েছিলেন উমরান।
উইলিয়ামসন-ওয়ার্নার থেকে শুরু করে জনি বেইরস্টো; সবাইকেই চমকে দিয়েছিলেন গতির ঝড়ে। তুমুল এই গতিই এরপর খুলে দিয়েছিল উমরানের জন্য আইপিএলের দুয়ার। সুযোগ পেয়ে অভিষেকেই বল করেছিলেন ১৫০ কিমি/প্রতি ঘণ্টায়। প্রতিপক্ষ ছিল কলকাতা। দ্বিতীয় ম্যাচে আরসিবির বিপক্ষে ভেঙে দিয়েছিলেন গতির রেকর্ডও। গতির তোপে আসা এই পরিবর্তন টের পাচ্ছিলেন উমরান নিজেও। পুরো জম্মু-কাশ্মীরই সেদিন উদযাপন করেছিল ঘরের ছেলের এই সাফল্য। জাতীয় দলের স্বাদটাও অল্প একটু পেয়েছেন সেবছরই। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের নেট বোলার ছিলেন উমরান।
ইন্সটাগ্রামে তার লেখা বায়োতে চোখ বুলালে বোঝা যায়, জাতীয় দলে খেলার জন্য আর তর সইছে না তার। সেখানে লেখা 'ইন্ডিয়া সুন'।আইপিএলে দেড়শো পেরোনো কিংবা ছুঁইছুঁই একেকটা ডেলিভারিতে যেভাবে ব্যাটারদের নাভিঃশ্বাস তুলে দিচ্ছেন, আরাধ্য সেই ধাপটা উমরান হয়তো পাড়ি দিবেন শীঘ্রই।